গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা (গোপালগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৩৮৯.৬১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৫৪´ থেকে ২৩°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪০´ থেকে ৮৯°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মুকসুদপুর, কাশিয়ানী ও লোহাগড়া উপজেলা, দক্ষিণে টুঙ্গিপাড়া ও মোল্লাহাট উপজেলা, পূর্বে কোটালিপাড়া ও রাজৈর উপজেলা, পশ্চিমে মোল্লাহাট, কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৪৪০০৮; পুরুষ ১৭২৯৯১, মহিলা ১৭১০১৭। মুসলিম ২৫১৪০৬, হিন্দু ৯০৬৮৫, বৌদ্ধ ১৯, খ্রিস্টান ১৫৩২ এবং অন্যান্য ৩৬৬।

জলাশয় প্রধান নদী: গড়াই, মধুমতি, কুমার, মধুপুর। বসারতের খাল ও গোপালগঞ্জ বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন সদর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
২১ ১২৫ ১৯৭ ৫৩৭৭৮ ২৯০২৩০ ৮৮৩ ৬৯.১ (২০০১) ৫৮.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
১৪.২৪ ৪৭ ৫১৩৪৬ ৩৬০৬ ৭৮.৬
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২.৫৬ (২০০১) ২৪৩২ ৮৭০ (২০০১) ৫৮.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উরফি ৯৪ ২৬৫৬ ৫০৯৮ ৫১৫৬ ৬০.৪
উলপুর ৯০ ৪৭৮৯ ৮১৪৯ ৮০৮৮ ৫৩.১
করপাড়া ৪৭ ৬৯২১ ৯৮৬১ ১০৫৮০ ৫৪.২
কাজুলিয়া ৪৩ ৬০৮৯ ৭৪০৭ ৬৮৮৯ ৬০.০
কাটি ৫১ ৪৫৮৬ ৫৩৬৪ ৫৫০৫ ৫৩.৪
গোপীনাথপুর ৩০ ৬৬৮০ ৫৮২৭ ৬২০৮ ৫৯.১
গোবরা ২১ ৪২৭৭ ৬১৬৮ ৬২৫৭ ৬৪.৫
চন্দ্র দিঘলিয়া ১৫ ২৭১৪ ৮৪৫৯ ৭২০০ ৬৩.০
জালালাবাদ ৩৮ ৪২১৩ ৭৪৬৫ ৭৭৯২ ৫৮.৩
দুর্গাপুর ১৭ ৪২১২ ৮৮০৬ ৮৬১৪ ৫৫.৭
নিজড়া ৬৪ ২৮২৭ ৩৬১৭ ৩৯০২ ৫৮.১
পাইককান্দি ৬৯ ৩৯৬৩ ৮১৩৮ ৮৪১৪ ৬১.৭
বোড়াশী ১১ ২০৭৫ ৬১৩৬ ৬১৮৮ ৫৮.০
বৌলতলী ১৩ ৪০৪৩ ৫৪০৬ ৫৪৯০ ৫৮.৬
মাঝিগাতী ৬০ ২৭৭০ ৫৯৩৪ ৫৮৯৫ ৫৫.৫
রঘুনাথপুর ৭৩ ৫৭৯২ ৮৪২৭ ৮১২৫ ৫৮.৪
লতিফপুর ৫৬ ২৯৩০ ৮৮৭৫ ৮৩২১ ৬৫.৫
সুকতাইল ৮৬ ৫২৯৫ ৬৭২৪ ৭০১৬ ৫০.৫
সাতপাড় ৮২ ৮৭০৭ ৯৩২১ ৯২২০ ৬২.৩
সাহাপুর ৭৭ ৪৪৭৯ ৫১৬৩ ৫০৮০ ৬৩.৪
হরিদাসপুর ৩৪ ২৭৩৮ ৬২৭৭ ৬১০০ ৬০.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ  সেন্ট মধুরানাথ এ জি চার্চ (১৮৭৫), শুকদেবের আশ্রম (১৮০২), খাগাইল গায়েবী মসজিদ।

ঐতিহাসিক ঘটনা বাংলা ১৩৬৮ সালে বৌলতলী ইউনিয়নের করপাড়া, বলাকইড়, তারগ্রাম এলাকায় হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে এক দাঙ্গায় বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মে মাসে পাকবাহিনী পাইককান্দি গ্রামের ১৩ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। উপজেলার উরফি ইউনিয়নের শসাবাড়িয়া গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলার পাইককান্দি ও উরফিতে ২টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪০০, মন্দির ১৮১, গির্জা ৭। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কোট মসজিদ (১৯৪৯), থানাপাড়া জামে মসজিদ (১৯২০/১৯২১), সার্বজনীন কালী মন্দির (১৯১৮)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬১.৮%; পুরুষ ৬৪.৪%, মহিলা ৫৯.২%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১৩, কেজি স্কুল ১৮, মাদ্রাসা ৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, শেখ ফজিলাতুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, এম.এইচ খান কলেজ, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ (১৯৬৫), গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (২০০১), উলপুর পি সি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০), গোপীনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১১), বৌলতলী সাহাপুর সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), এস.এম মডেল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, স্বর্ণকলি উচ্চ বিদ্যালয়, চন্দ্র দিঘলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, গোপীনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ এস কে কামিল মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: যুগকথা, ভোরের বাণী, শিরিণ, বাংলার সংকেত, বিশ্ব দর্পণ, সূর্যাশা, যুগের সাথী; সাপ্তাহিক: জনপদের কথা। অবলুপ্ত; গোপালগঞ্জ বার্তা, গোপালগঞ্জ সাহিত্য পত্র, আলোর দিশারী; সাময়িকী: দুর্বা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ৯৮, সিনেমা হল ২, শিল্পকলা একাডেমি ১, স্টেডিয়াম ২, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১১, ক্রীড়া সংগঠন ৩৫, নাট্য সংগঠন ১, যুব সংগঠন ৪৭।

বিনোদন কেন্দ্র আকরামুজ্জামান পার্ক।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৩.২৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪৯%, শিল্প ০.৪৭%, ব্যবসা ১৪.৪২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৩৩%, চাকরি ১৪.৩৩%, নির্মাণ ১.৮১%, ধর্মীয় সেবা ০.৪০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.২৭% এবং অন্যান্য ৭.২১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৭.২৪%, ভূমিহীন ৩২.৭৬%। শহরে ৫৫.৮৪% এবং গ্রামে ৬৮.৯৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, চিনাবাদাম, আখ, সরিষা, তিল, তিসি, ডাল, মিষ্টি আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চিনা, কাউন, যব, পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, নারিকেল, সুপারি, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৫, গবাদিপশু ২৫৪, হাঁস-মুরগি ২৩০, চিংড়ি ঘের ১৩৯৮, হ্যাচারী ৩, নার্সারী ১৬, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২০৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৮৩ কিমি; নৌপথ ১৬৩ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা স’মিল, ওয়েলমিল, ফ্লাওয়ারমিল, রাইসমিল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, লৌহশিল্প, বেতের কাজ, বাuঁশর কাজ।

হাটবাজার ও মেলা গোপালগঞ্জ হাট, বৌলতলী হাট, সাতপাড় হাট, বেদগ্রাম হাট, গোলাবাড়িয়া হাট, কাজুলিয়া হাট, বোয়ালিয়া হাট, ভেড়ার হাট, চন্দ্র দিঘলিয়া হাট, রঘুনাথপুর হাট, মানিকহার হাট, গোপীনাথপুর হাট, মধুমতি বাজার এবং গোপালগঞ্জ মেলা, বৌলতলী মেলা, গোলাবাড়িয়া মেলা, সাতপাড় মেলা, ঠুটামান্দ্রার মেলা, সান পুকুরিয়া মেলা ও উলপুর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চিংড়ি মাছ, ধান, শাকসবজি, চামড়া।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬০.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলার চান্দার বিল এলাকায় পীট কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮২.৩%, ট্যাপ ১৪.৭% এবং অন্যান্য ৩.০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮৬.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১২.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, হাসপাতাল ৪, মাতৃমঙ্গল ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩১, ক্লিনিক ৮।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯১৯ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার প্রায় ৮০% ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। এছাড়াও ১৯৭৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি ধ্বংসসহ কয়েকজন লোক নিহত হয় এবং শত শত লোক আহত হয়।

এনজিও প্রশিকা, ব্র্যাক, আশা, কারিতাস, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, গণউন্নয়ন প্রচেষ্টা, লিগ্যাল এইড।  [স্বপন গাইন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।