গাংনী উপজেলা

গাংনী উপজেলা (মেহেরপুর জেলা)  আয়তন: ৩৬৩.৯৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৪´ থেকে ২৩°৫২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩৪´ থেকে ৮৮°৪৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দৌলতপুর উপজেলা (কুষ্টিয়া), দক্ষিণে আলমডাঙ্গা ও মেহেরপুর সদর উপজেলা, পূর্বে দৌলতপুর, আলমডাঙ্গা ও মিরপুর উপজেলা (কুষ্টিয়া), পশ্চিমে মেহেরপুর সদর উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।

জনসংখ্যা ২৯৯৬০৭; পুরুষ ১৪৮২৫০, মহিলা ১৫১৩৫৭। মুসলিম ২৯৫৪৫৮, হিন্দু ২৭২৬, খ্রিস্টান ১৩১৩ এবং অন্যান্য ১১০ ।

জলাশয় প্রধান নদী: ভৈরব, ইছামতি ও কাজলা। ইলাঙ্গী বিল, নুনের বিল ও ইলালগাড়ি দামাশ বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন গাংনী থানা গঠিত হয় ১৯২৩ সালে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৯০ ১৩৭ ৩০২৩৯ ২৬৯৩৬৮ ৮২৩ ৫০.০০ (২০০১) ৪০.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১২.১৭ (২০০১) ২৯ ২৫৫০০ ১৭০৭.৪৭ (২০০১) ৫৯.৬
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২২.৮৬ (২০০১) ৪৭৩৯ ১০৪৩ (২০০১) ৪৫.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাজীপুর ৫২ ১৩৫৮০ ১৯২২০ ২০৫৯১ ৩৯.১
কাথুলি ৪২ ৮২১১ ১১১০৩ ১১২৭৬ ৩৯.৬
তেঁতুলবাড়িয়া ৯৪ ৮৩৮৭ ১৫০৪৯ ১৫৮১৪ ৩৮.৮
ধানখোলা২১ ১৪৩৩১ ২০৭০৯ ২০৬২৩ ৪০.২
বামান্ডী১০ ৭৫০৫ ১৩৩৭৭ ১৩৩৯৯ ৪২.৮
মাটিমুরা ৬৩ ১১৭২০ ২২২৯০ ২২৩১৯ ৪১.৮
ষোলটাকা ৮৪ ৭৯৯৮ ১২১৪৮ ১২৩৮৫ ৪১.৬
সাহারবাটি ৭৩ ৬৯৩৪ ১১৪৪২ ১১৬৯৭ ৪২.১
রায়পুর ৬৯ ৭০৯৬ ১০১৯১ ১০৪৭৪ ৩৯.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সাহারবাটি নীলকুঠি (১৮৫৯), করমদির গোসাইডুবি মসজিদ।

মুক্তিযুদ্ধ গাংনী উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রামনগর, তেঁতুলবাড়িয়া, কাজীপুর, পাগলার পুল ও বামুন্দি ক্যাম্প যুদ্ধ। উপজেলার কাজীপুর ও টেপুখালির মাঠে ২টি গণকবর রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন গাংনী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৪৫, মন্দির ৬, গির্জা ৬।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪২.২%; পুরুষ ৪২.৭%, মহিলা ৪১.৭%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গাংনী ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৩), গাংনী মহিলা কলেজ (১৯৯৫), হোগলাবাড়িয়া মোহাম্মাদপুর হাজী ভরসউদ্দীন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৫), গাংনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৫)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, ক্লাব ১০, সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩, নাট্য দল ২, সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ২০।

দর্শনীয় স্থান ভাটপাড়া নীলকুঠি ও চিৎলা পাটবীজ খামার।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৩%, শিল্প ০.৯৬%, ব্যবসা ১৩.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯০%, চাকরি ৩.১৩%, নির্মাণ ১.০৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৫৯% এবং অন্যান্য ৬.০৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৮২%, ভূমিহীন ৪২.১৮%। শহরে ৫৯.০২% এবং গ্রামে ৫৭.৭১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, তামাক, ভুট্টা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি নীল, অড়হর, খেসারি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, লিচু, কাঁঠাল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার এবং  হ্যাচারি রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৪৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৮৮, কাঁচারাস্তা ৩৮৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, আইস ফ্যাক্টরি প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, পাটশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, নকশি কাঁথা প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫, মেলা ১। গাড়াবাড়িয়ার হাট, তেঁতুলবাড়িয়ার হাট, করমদি হাট, কাজীপুর হাট, বেতবাড়িয়া হাট, নওদাপাড়া হাট এবং বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  তামাক, ধান, পাট, গম।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৯.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.২%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ৩.৩%। উপজেলার ৩১৯৬৫ টি অগভীর নলকূপের মধ্যে ১২.০৭% নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৯.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫১.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.৬% পরিবারের কোনো স্যানিটেশন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, হাসপাতাল ১, ক্লিনিক ৫, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১।

এনজিও প্রশিকা, আশা, ব্র্যাক, সন্ধানী, নিজেরা করি। [রাজীব আহম্মেদ]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গাংনী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।