গাঁজন

গাঁজন (Fermentation) হলো একটি বিপাকীয় প্রক্রিয়া যা অণুজীবের দ্বারা সঞ্চালিত হয় এবং অনুঘটকের ক্রিয়াকলাপের কারণে জৈব পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। ‘ফার্মেন্ট’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ফারভার’ থেকে, যার অর্থ ‘ফুটানো’। মজার বিষয় হলো, তাপ ছাড়াই গাঁজন সম্ভব, এবং গাঁজন বিজ্ঞান ‘জাইমোলজি’ নামে পরিচিত। গাঁজন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা সাধারণত অ্যানেরোবিক অবস্থায় (অক্সিজেন ছাড়া) এবং উপকারী অণুজীবের (যেমন ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া) উপস্থিতিতে ঘটে থাকে। অণুজীবসমূহ গাঁজন থেকে তাদের প্রয়োজনীয় শক্তি পায়। শক্তি উৎপাদন করার সময়, তারা শর্করা ভেঙে দেয় যা বেশ কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় এবং এটিপি (এডেনোসিন ট্রাইফসফেট) হিসেবে শক্তি উৎপাদন করে। ওয়াইন, বিয়ার এবং সিডারের মতো অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়গুলি কার্বোহাইড্রেট থেকে ইথানলে রাসায়নিক রূপান্তর দ্বারা তৈরি হয়, এই প্রক্রিয়াকে গাঁজন বলা হয়। খাদ্য শিল্পের জন্য এটি কেবলমাত্র একটি প্রক্রিয়া যা অণুজীব দ্বারা খাদ্যদ্রব্যের অনুক‚ল পরিবর্তন ঘটায়। সাধারণত তিনটি স্বতন্ত্র ধরণের গাঁজন ব্যবহার করা হয়ে থাকে: ল্যাকটিক অ্যাসিড গাঁজন, ইথানল গাঁজন/অ্যালকোহল গাঁজন এবং অ্যাসিটিক অ্যাসিড গাঁজন।

জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ রূপে বোঝার অনেক আগে লোকেরা ওয়াইন, পনির এবং বিয়ার তৈরি করতে গাঁজন ব্যবহার করত। গাঁজন একটি পুরানো প্রক্রিয়া যা মানুষ বহুকাল যাবত ব্যবহার করে আসছে, এমনকি প্রক্রিয়াটির গভীর জ্ঞান ছাড়াই। ১৮৫০ এবং ১৮৬০ এর দশকে জীবন্ত কোষ দ্বারা গাঁজন করা সম্ভব তা প্রদর্শনের মাধ্যমে লুই পাস্তুর গাঁজন নিয়ে গবেষণা করা প্রথম বিজ্ঞানী হয়ে ওঠেন। গাঁজন মানুষসহ আদিকোষী এবং প্রকৃতকোষীতে ঘটে। খাদ্য ব্যবসা ছাড়াও, কিছু গাঁজন পণ্য বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাসিটোন-বিউটানল-ইথানল গাঁজনের ফলে অ্যাসিটোন এবং বিউটানলের মতো রাসায়নিক দ্রাবক তৈরি হয়। মিশ্র অ্যাসিড গাঁজনের মাধ্যমে, পেনিসিলিন ও অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন এবং ভিটামিনসহ জটিল জৈব-রাসায়নিক অণু তৈরি হয়। গাঁজনযুক্ত খাবার উপকারী অণুজীবসমৃদ্ধ, যা একটি স্বাস্থ্যকর অন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং হজমশক্তি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। [মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম]