খালেদ, খোন্দকার ইব্রাহিম

খালেদ, খোন্দকার ইব্রাহিম (১৯৪১-২০২১) বিশিষ্ট ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, সংগঠক। মুক্তবুদ্ধি চর্চায় তিনি আজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সমকালীন অর্থনীতি ও সমাজ সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল স্পষ্ট। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ১৯৪১ সালের ৪ঠা জুলাই গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতকোত্তর ও আই.বি.এ থেকে এম.বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

ইব্রাহিম খালেদ তদানীন্তন হাবিব ব্যাংকের প্রবেশনারী অফিসার হিসেবে ১৯৬৩ সাল থেকে শুরু করে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চার দশকেরও অধিককাল ব্যাংকিং পেশায় সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ১৯৯৬ সালে অগ্রণী ব্যাংক এবং ১৯৯৭ সালে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিনি ৯ই ডিসেম্বর ২০২০ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদেরও চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত ছিলেন। আর্থিক খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। আর্থিক খাতে কাজ করলেও, তিনি সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। শুধু একজন নিষ্ঠাবান ব্যাংকারই নন, সংগঠক হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। ২০১০ সালে শেয়ার বাজারের পতনের কারণ অনুসন্ধানে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির তিনি প্রধান ছিলেন। রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন ধরে তিনি কচিকাঁচার মেলা পরিচালনার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন।

তাঁর প্রণীত পুস্তকসমূহের মধ্যে ‘শেকড় থেকে লতাপাতা’, ‘কিছু স্মৃতি কিছু কথা’, ‘মুক্তিসংগ্রাম ও মহানায়ক’, ‘ফিরতে হবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে’, ‘জীবন যখন যেমন’, ‘ব্যাংকিং সংস্কার ও ব্যবস্থাপনা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তিনি ২০০৯ সালে ‘খানবাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক’ এবং ২০১৩ সালে ‘খানবাহাদুর নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী ন্যাশনাল এওয়ার্ড’-এ ভুষিত হন। বাংলা একাডেমি ২০১১ সালে তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।

তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ২৪শে জানুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]