খড়

খড় (Straw) হলো শুকনো পরিপক্ক ফসলের গাছ যা বীজ/ফল সংগ্রহের পর অবশিষ্ট থাকে। এটি সাধারণত পরিপক্ক খাদ্যশস্যের (ধান/গম/ভুট্টা/যব/ওট) উদ্ভিদের শুকনো কা- ও ডালপালা (উদ্ভিদ অংশ) হিসেবে পরিচিত যা শস্য সংগ্রহ ও অপসারণের পরে অবশিষ্ট থাকে। এটি একটি কৃষি উপজাত এবং যেহেতু এটি পরিপক্কতার পরে সংগ্রহ করা হয় এর পুষ্টিমান খুবই সামান্য। খড়ের হজম ক্ষমতা খুবই কম; প্রায় ৪০%। ধানের খড় এবং গমের খড়ে সাধারণত ১৪-২০% আর্দ্রতা (ঋতুর উপর নির্ভর করে), ৩৫-৪০% সেলুলোজ (এক ধরনের হজমযোগ্য কার্বোহাইড্রেট), ১৫-২০% লিগনিন (একটি অপাচ্য কার্বোহাইড্রেট), ১২-১৪% সিলিকা (একটি খনিজ যা খড়ের পরিপাক প্রকিৃয়ায় বাধা প্রদান করে), এবং ৪% অপরিশোধিত প্রোটিন যা বেশিরভাগই অপাচ্য, কোন ভিটামিন নেই কিন্তু খুবই সামান্য পরিমানে খনিজ পদার্থ রয়েছে যার মধ্যে পটাসিয়াম সর্বোচ্চ (১.২%)।

যদিও খড়ের ব্যবহার বৈচিত্র্যময়, এর মোট উৎপাদনের মাত্র ২০% বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয় তবে এটির ব্যবহার দেশ থেকে দেশে ভিন্ন রকম। পশুখাদ্য হিসেবে এর ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ । যদিও এর পুষ্টিগুণ খারাপ, এটি খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যেখানে সবুজ ঘাসের চাষের অভাব রয়েছে সেখানে রুমিন্যান্ট প্রাণীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাফেজ খাদ্য। এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু দেশে খড় ব্যাপকভাবে রুমিন্যান্ট প্রাণীদের রাফেজ খাদ্যের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খড়ের অন্যান্য ব্যবহার হলো; গবাদিপশুর বিছানা, কয়লার বিকল্প হিসেবে জৈব জ্বালানি, কিছু দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঘরের ছাদ নির্মাণ, হস্তশিল্প (পুতুল, টুপি, বিড়ালের ঘর, মাদুর, ঝুড়ি ইত্যাদি) তৈরিতে, গবাদিপশুর গোয়াল ঘরের বর্জ্য খড় কম্পোস্ট (জৈবসার) তৈরিতে, বায়োপ্লাস্টিক তৈরির উপকরণ হিসেবে, প্যাকেজিং উপকরণ হিসেবে এবং আরও অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়। খড়ের বিভিন্ন ব্যবহারের কারণে, এটা অনুমান করা যায় যে ভবিষ্যতে যদিও পশুখাদ্য হিসেবে এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে এর অন্যান্য ব্যবহার অব্যাহত থাকবে বা বাড়তেও পারে। [মো. আলী আকবর]