ক্ষুদিপানা

ক্ষুদিপানা (Duckweed)  একবীজপত্রী উদ্ভিদ বর্গের Lemnaceae গোত্রের অন্তর্গত একদল অবাধ ভাসমান জলজ সপুষ্পক উদ্ভিদ। পানিতে চরে বেড়ানো পাখিদের প্রিয়খাদ্য এবং আগাছাতুল্য বলেই এগুলির ইংরেজি নাম Duckweed। দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে অন্যান্য গাছগাছালিকে সহজেই ছাড়িযে যায় এবং  খরা, ঠান্ডা, খাদ্যাভাব ইত্যাদি পরিবেশগত দুর্যোগেও টিকে থাকতে পারে। সপুষ্পক হলেও ক্ষুদিপানায় দৈবাৎ ফুল ফোটে, বংশবৃদ্ধি মূলত অঙ্গজ-মুকুলে। এগুলি বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আছে গত এক শতক ধরে।

এই গোত্রে রয়েছে ৪টি গণ (Lemna, Spirodela, Wolffia, ও Wolfiella) এবং ৩৪ প্রজাতি। এগুলির মধ্যে বাংলাদেশে আছে ৬ প্রজাতি Lemna perpusilla, L. trisulca, Spirodela polyrhiza, S. punctata, Wolffia arrhiza, W. microscopica। ক্ষুদিপানার কোনো স্বতন্ত্র কান্ড ও পাতা নেই। গোটা উদ্ভিদটাই আসলে চ্যাপ্টা ছোট একটি পত্রকল্প কাঠামো বা ফ্রন্ড (frond)। এ ফ্রন্ড নিচে ঝুলন্ত এক বা একাধিক কৈশিক মূলসহ একক বা দলবদ্ধ থাকে।

সাধারণ ক্ষুদিপানা- ১. Lemna, ২. masses of Wolffia এবং ৩. Spirodela

এগুলি সাধারণত উজ্জ্বল থেকে কালচে সবুজ। Lemna বাংলাদেশে ‘তেঁতুলপানা’ নামে পরিচিত। এটির ফ্রন্ড হতে পারে ভল্লাকার-ডিম্বাকার, উপবৃত্তাকার, আয়তাকার বা গোলাকার, ২-৭ মিমি চওড়া, শিকড় ১, দৈবাৎ অনুপস্থিত। বাংলায় ‘সোনাপানা’ নামে পরিচিত Spirodela-র ফ্রন্ড বৃক্কাকৃতি বা ডিম্বাকৃতি, মসৃণ, ৫-১২ মিমি লম্বা, তাতে কয়েকটি মূল। গ্রামাঞ্চলে Wolffia হলো ‘সুজিপানা’। এটির ফ্রন্ড গোলাকার থেকে ডিম্বাকার, ০.৫ মিমি চওড়া ও মূলহীন।

ক্ষুদিপানার ইতিবাচক দিকও আছে। আদর্শ পরিবেশে এগুলির জীববস্ত্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিগুণ হয়। প্রোটিনের পরিমাণ শুষ্ক ওজনের ৬.৮-৪০%, এ জন্য এগুলি পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার্য। গৃহস্থালির বর্জ্যপানি শোধনে ক্ষুদিপানা চমৎকার বায়োফিল্টার। ক্ষুদিপানা মাছ ও পশু খামারের খাদ্যবস্ত্ত যোগায়। সালাদ হিসেবে খাদ্যযোগ্য Wolffia প্রোটিন, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘বি’ সমৃদ্ধ। মায়ানমার, লাওস ও উত্তর থাইল্যান্ডে W. arrhiza খাওয়ার রেওয়াজ বহুকালের।

বন্যা ও রৌদ্র সেবিত এবং খাদ্যবস্ত্তর সার্বক্ষণিক যোগানদার পুকুরের মতো জলাশয় ক্ষুদিপানা চাষের জন্য আদর্শ। কলকারখানায় বর্জ্যপানিতে জন্মালে কোনো কোনো গুরুধাতু অধিক শোষণের ফলে এগুলি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। দূষিত পানিতে থাকলে এরা রোগজীবাণু বহন করে। তবে সুব্যবস্থিত প্রণালীতে এগুলি ইথানল গাঁজনের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে, কম্পোস্ট সার প্রস্ত্ততে এবং শুষ্ক জলবায়ুতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে ব্যবহূত হতে পারে। মহাশূন্যচারীদের ব্যবহার্য উদ্ভিদ হিসেবেও এগুলির অক্সিজেন উৎপাদন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসারণ ক্ষমতা পরীক্ষিত হয়েছে। পুকুরের পানি ক্ষুদিপানায় ঢাকা থাকলে মশার লার্ভার সংখ্যা হ্রাস পায়। [মনিরুজ্জামান খন্দকার]

আরও দেখুন কচুরিপানা; জলজ উদ্ভিদ