উপজেলা পরিষদ আইন, ২০০৯

উপজেলা পরিষদ আইন ২০০৯ স্থানীয় সরকার (থানা পরিষদ ও থানা প্রশাসন পুনর্গঠন) অধ্যাদেশ ১৯৮২ বলে সর্বপ্রথম থানা পর্যায়ে থানা পরিষদ গঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৩ সালে উক্ত অধ্যাদেশ সংশোধন করে থানা পরিষদের নতুন নামকরণ হয় উপজেলা পরিষদ। উক্ত সংশোধিত অধ্যাদেশটি স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনিক পুনর্গঠন) (বাতিল) অধ্যাদেশ ১৯৯১ দ্বারা বাতিল করা হয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ প্রণয়ন করে। কিন্তু উক্ত আইনের অধীনে উপজেলা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে স্থানীয় সরকার সংস্থাকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ ২০০৮ জারি করে। এই অধ্যাদেশ দ্বারা ১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইন বাতিল করা হয় এবং উক্ত আইনে উপজেলা পরিষদকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল অত্র অধ্যাদেশে তার চেয়েও অধিক ক্ষমতা প্রদান করে কতিপয় বিধিবিধান সংযোজন করা হয়। এই অধ্যাদেশটিও ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ (বাতিল আইন পুনঃস্থাপন ও সংশোধন) আইন ২০০৯ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। এ আইনের দ্বারা উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮-এর বিধিবিধান কতিপয় সংশোধনীসহ পুনর্বহাল করা হয়।

উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮-এ প্রতিটি থানাকে উপজেলা এবং প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অধিকন্তু উপজেলার ভৌগোলিক সীমার অন্তর্ভুক্ত নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্যকে উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা করা হয় এবং জাতীয় সংসদ সদস্যের পরামর্শ গ্রহণ উপজেলা পরিষদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। উপজেলা পরিষদ আইন ২০০৯-এর বিধান মতে, উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ সদস্যের পরামর্শ নিতে হবে এবং সরকারের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের যেকোন যোগাযোগের বিষয় সংসদ সদস্যকে অবহিত করতে হবে। এ আইনে বলা হয়েছে যে, একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, একজন মহিলাসহ দু’জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং সদস্য হিসেবে উপজেলার অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদ সমূহের চেয়ারম্যান, উপজেলার অন্তর্ভুক্ত কোনো পৌরসভা থাকলে তার মেয়র এবং উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ সমূহের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত মহিলা সদস্যদের এক তৃতীয়াংশ নিয়ে উপজেলা পরিষদ গঠিত হবে। আইনে আরও বলা হয়েছে যে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সদস্য অথবা উপজেলা পরিষদ কর্তৃক প্রাধিকার প্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার হবেন উপজেলা পরিষদের সচিব। ২০০৯ সালের এই আইনে এরূপ বিধানও রয়েছে যে, চার-পঞ্চমাংশ সদস্যের অনাস্থা ভোটে পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ করা যাবে। এ আইনে বলা হয়েছে যে, উপজেলা পরিষদের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির ক্ষমতা থাকবে। এ আইনে উপজেলা পরিষদকে এর ব্যয় নির্বাহের জন্য কতিপয় বিশেষ ক্ষেত্রে কর আরোপ এবং পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।  [এ.এম.এম শওকত আলী]