উড-এর শিক্ষা প্রস্তাব

উড-এর শিক্ষা প্রস্তাব ১৮৫৪ সাল থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর শিক্ষানীতির ভিত্তি তৈরি করে। বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উডের অনুরোধে খসড়াকৃত এ প্রস্তাব প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যথার্থ শিক্ষা নীতি প্রণয়নের জন্য ১৮৫৪ সালের ১৯ জুলাই ৪৯ নম্বর প্রস্তাব হিসেবে ভারত সরকারের নিকট পেশ করা হয়। ১৮৫৩ সালে কোম্পানির চার্টার নবায়ন প্রস্তাব পেশ করার সুযোগ করে দেয়। গতানুগতিকভাবেই হাউস অব কমন্স-এর সিলেক্ট কমিটি ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর একটি ব্যাপক তদন্ত চালায়। ভারতে আধুনিক শিক্ষার মেগনা-কার্টা হিসেবে প্রায়শই উল্লিখিত এ প্রস্তাব ছিল বোর্ড অব ডাইরেক্টর্স কর্তৃক প্রণীত অন্যতম মূল্যবান দলিল। প্রকৃত অর্থেই এটি ছিল ভারতের আধুনিক শিক্ষার ইতিহাসে একটি মাইলফলক এবং এটি উপমহাদেশের পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি ব্যাপক পরিকল্পনা উপস্থাপন করে।

একশত অনুচ্ছেদ সম্বলিত দলিলটিতে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ‘ইংরেজি ও স্বদেশী উভয় ভাষায় শিক্ষার উন্নয়ন এবং এর সুদূরপ্রসারী বিস্তার’ ভারত সরকারের জন্য ‘পবিত্র কর্তব্য’, এ কথাকে ধরে নিয়েই অভিষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে প্রস্তাবটিতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলি হলো (১) শিক্ষা প্রশাসনের জন্য একটি আলাদা বিভাগ গঠন; (২) তিনটি প্রেসিডেন্সি শহরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা; (৩) সকল প্রকার বিদ্যালয়ের জন্য টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট গঠন; (৪) পূর্বস্থাপিত সরকারি কলেজ ও উচ্চ বিদ্যালয়গুলির তত্ত্বাবধান এবং যখন প্রয়োজন তখনই নতুন স্কুল-কলেজ নির্মাণ; (৫) নতুন মিডল স্কুল প্রতিষ্ঠা, (৬) দেশিয় ভাষার বিদ্যালয়, স্থানীয় জনগণ ও অন্যান্যদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারের প্রতি অতিরিক্ত দৃষ্টি প্রদান; এবং (৭) ব্যক্তিগত পর্যায়ে গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য অনুদান প্রদানের একটি ব্যবস্থার প্রবর্তন।

প্রস্তাবটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আওতার মধ্যে রেখে প্রয়োজনীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের গুরুত্বের উপর সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। উচ্চ পর্যায়ে ইংরেজি হবে শিক্ষার মাধ্যম, আর নিম্ন পর্যায়ে হবে দেশিয় ভাষা। যখনই প্রয়োজন হবে তখন ইংরেজি শেখানো হবে, তবে এটি কখনই দেশিয় ভাষার পরিবর্তে ব্যবহূত হবে না। অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা হবে ধর্ম নিরেপেক্ষ আদর্শের উপর ভিত্তি করে। একটি গ্রেডভিত্তিক বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং নারী শিক্ষার ব্যাপারে সরকারের থাকবে সরল ও আন্তরিক সমর্থন।

প্রস্তাবের উপসংহারে বলা হয় যে, সরকারি, বিশেষ করে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ বা এর ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এবং এর অনুদান আসবে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে। এ সমস্ত সুপারিশসহ নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ভারতে বিকাশ লাভ করে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, সময়ের অগ্রযাত্রায় এ ব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে মূল নীল নকশা সে ১৮৫৪ সালেই প্রণীত হয়েছে।  [জাহেদা আহমদ]