ইমাম, আবু

ইমাম, আবু (১৯২৮-২০০৭)  ইতিহাসবিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক। তিনি ১৯২৮ সালে ৯ সেপ্টেম্বর কলকাতার নিকটবর্তী হাওড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। অবিভক্ত ভারতের হুগলী জেলার গড়মান্দারণ গ্রামের আজিজা খাতুন ও আলী মোহাম্মদ ছিলেন তাঁর মাতা ও পিতা। তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয়  হাওড়া জেলা স্কুল ও পরে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে। প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একবছর পড়ার পর ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের সময় তিনি পরিবারের সাথে ঢাকায় অভিবাসন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ১৯৫০ সালে বি.এ (সম্মান) ও ১৯৫১ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তী বছর তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রাষ্ট্রীয় বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব আর্কিওলজি (বর্তমানে ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডন) থেকে ১৯৫৬ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে আরেকটি এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। অধ্যাপক ইমাম লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিস থেকে ১৯৬৩ সালে পি এইচ-ডি ডিগ্রি লাভ করেন। সেখানে তিনি প্রত্নতত্ত্ববিদ প্রফেসর গর্ডন চাইল্ড, স্যার মর্টিমার হুইলার ও ভারতবিদ প্রফেসর আর্থার লেনিন ব্যাশাম এর তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেন।

আবু ইমাম

আবু ইমাম ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং শেষোক্ত দুটিতে একাধিকবার বিভাগীয় প্রধান ও ডীনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫৬-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় যাদুঘরের (তদানীন্তন ঢাকা যাদুঘর) সহকারী কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম এর কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট অ্যান্টনি কলেজে পাকিস্তান স্টাডিজ বিভাগে সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। এছাড়া তিনি UNESCO project of history and archaeology of Central Asia-র একজন কনসালটেন্ট ছিলেন ও UNESCO-র International Council of Museum (ICOM)-এর পাকিস্তান জাতীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

অধ্যাপক ইমাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ‘প্রত্নতত্ত্ব’ বিষয়ে একটি পৃথক বিভাগ খোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখেন যা বাস্তবায়িত হয় ১৯৮৫ সালে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায়। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রত্নতত্ত্ব চর্চার একমাত্র প্রতিষ্ঠান- যা ছিল তাঁর অব্যাহত চেষ্টার ফসল। তিনি ১৯৯০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তবে অবসর গ্রহণের পরেও জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ভূমিকা রাখেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে Sir Alexander Cunningham and the Beginnings of Indian Archaeology যা প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে এবং Excavation at Mainamati: An Exploratory Study ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি-র সভাপতি (১৯৭৪-৭৫) এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে জাতীয় যাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া-র সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।  [মো. মোজাম্মেল হক]