ইবরাহিম দানিশমন্দ, সাইয়্যিদ

সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দ  কাদিরিয়া তরিকার সুফিসাধক ইবরাহিম দানিশমন্দ ছিলেন চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর (রাঃ) পুত্র হযরত ইমাম হোসেনের সরাসরি বংশধর। তিনি ছিলেন পারস্যের অধিবাসী। তিনি সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পুত্র এবং হোসেনশাহী বংশের শেষ সুলতান গিয়াসুদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৫৩৩-১৫৪০) শাসনামলে অথবা এর কিছুকাল পূর্বে বাংলায় আসেন। সুলতান মাহমুদ শাহের জ্যেষ্ঠ কন্যার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় এবং তাঁকে দক্ষিণ শ্রীহট্টের অন্তর্গত তরফের শাসনকর্তা নিয়োগ করা হয়। ইবরাহিম দানিশমন্দকে মালিক-উল-উমারা (আমীরদের প্রধান) উচ্চ রাজকীয় খেতাবে ভূষিত করা হয়। সুলতান তাঁকে সোনারগাঁয়ে লা-খারাজ (রাজস্বমুক্ত) ভূমি বন্দোবস্ত দান করেন। ঘটনাক্রম ও তথ্যউপাত্ত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সাইয়্যিদ দানিশমন্দ হোসেনশাহী বংশের পতনের (১৫৪০) পরও এবং সম্ভবত ষোড়শ শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত তরফে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরপর তিনি সোনারগাঁয়ে এসে মোগরাপাড়ায় বর্তমান দরগাহবাড়ি স্থলে তাঁর খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় এ স্থান সাদিপুর বা নগর সাদিপুর নামে পরিচিত ছিল।

সাইয়্যিদ ইবরাহিম ইসলামী ধর্মতত্ত্ব এবং এর সকল শাখায় বিশেষত তাসাওয়াফ (ইসলামী মরমীবাদ) বিষয়ে অসাধারণ পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। ধর্মতত্ত্ব, ইসলামী আইনবিধান, তাসাওয়াফ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানে এবং একজন বহুমুখী বিদগ্ধ লেখক হিসেবে তিনি তাঁর প্রজ্ঞার জন্য ‘দানিশমন্দ’ নামে অভিহিত হন। তিনি ‘কুতবুল আশেকীন’ খেতাবেও ভূষিত হন। কাদেরিয়া তরিকার যেসকল সুফি দরবেশ বাংলায় সর্বপ্রথম এই সুফি তরিকার প্রচারকার্যে নিয়োজিত ছিলেন, ইবরাহিম দানিশমন্দ সম্ভবত ছিলেন তাদের অন্যতম। দরগাহবাড়িতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত খানকা থেকে তিনি সুফি তরিকার প্রচার এবং ইসলামী বিষয় শিক্ষাদানের এক মহতী ঐতিহ্যের সূচনা করেন। পরবর্তী কয়েক শতাব্দীব্যাপী সেই ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ছিলেন তাঁর বংশধর ও আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারীরা।

সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দ সোনারগাঁয়ের দরগাহবাড়িতে এক সৌধের অভ্যন্তরে সমাহিত আছেন। দরগাহবাড়ি সমাধিস্থলের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত তাঁর সমাধিসৌধটি কুটির আকৃতির চৌচালা গম্বুজাকার ছাদবিশিষ্ট একটি চতুর্ভুজাকৃতির ইমারত।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]