ইকতা

ইকতা  কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক রাষ্ট্রকে প্রদত্ত সেবার বিনিময়ে ওই কর্মকর্তাকে সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের রাজস্ব (অথবা শস্য) ভোগ করার অধিকার প্রদান করাকে বলা হয় ইকতা। ইকতা বা ভূমি বন্দোবস্ত অঞ্চলে রাজস্ব নির্ধারণের  পদ্ধতি ছিল ফার্মিং ও জরিপ ব্যবস্থার মিশ্রণ। এ ব্যবস্থায় রাজস্ব আদায়কারী চৌধুরী ও মুকাদ্দমগণ ইকতাদারের এবং কৃষকদের থেকে বর্ধিত হয়ে খাজনা আদায় করতেন। বাংলায় তুর্কি শাসনের প্রথমদিকে ব্যক্তি বিশেষকে ইকতা বন্দোবস্ত দেওয়া হতো। সুলতান গিয়াসুদ্দীন তুঘলক এই ব্যবস্থা চালু রাখেন এবং ইকতা মঞ্জুর করেন। তিনি ভূমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ধারণের পদ্ধতি বাতিল করে ফসলের অংশে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা চালু করেন।

এটি মুগল আমলের জায়গির (বা তুয়্যুল)-এর সমার্থক। ইকতা বন্দোবস্ত দেয়ার ব্যবস্থা এবং দিল্লি এবং বাংলার প্রাথমিক সুলতানি আমলে প্রদেশসমূহে ইকতা শব্দটি বহুল ব্যবহূত। কারণ নদীয়া বিজিত হওয়ার পর বখতিয়ার খলজী লখনৌতিতে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন এবং শাসন কাজের সুবিধার জন্য বাংলার মুসলিম রাজ্যকে কয়েকটি প্রশাসনিক অংশে বিভক্ত করেন। এর প্রত্যেকটি অংশকে বলা হত ‘ইকতা’। ইকতার শাসনকর্তাকে বলা হতো মুকতি। দিল্লি এবং বাংলায় সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হলে নতুন নতুন বিজিত অঞ্চল যথার্থ নিয়ন্ত্রণে আনার সহজ পন্থা ছিল এগুলিকে ইকতায় বিভক্ত করা।

ইকতা বা বন্দোবস্ত গ্রহণকারীকে বলা হতো ইকতাদার বা আকতাদার। তিনি এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ, সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং তার রাজস্ব আদায় করার দায়িত্ব পালন করতেন।  [নাসরীন আক্তার]