আহমদ, বেগম বদরুন্নেসা

আহমদ, বেগম বদরুন্নেসা (১৯০৩-১৯৮০)  সমাজকর্মী ও নারীমুক্তি আন্দোলনের নেত্রী। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার পারিল-নওহাদ্দা গ্রামে এক জমিদার পরিবারে ১৯০৩ সালে তাঁর জন্ম। পিতা মোয়াজ্জেম হোসেন খান। বদরুন্নেসা (ডাক নাম মতিবিবি) বাল্যকালেই পিতামাতাকে হারান এবং তাঁর নানা পারিলের জমিদার নজরুল ইসলাম খানের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন। কলকাতার এক ব্যবসায়ী মোসলেহউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

কলকাতায় অবস্থানকালে বদরুন্নেসা নারীশিক্ষার উন্নতি এবং মুসলিম সমাজের কল্যাণমূলক কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তিনি শামসুন নাহার মাহমুদ, আনোয়ারা বাহার চৌধুরী, হাসিনা মুর্শেদ, সুফিয়া কামাল, বেগম শায়েস্তা ইকরামুল্লাহ প্রমুখ বিশিষ্ট মহিলার সান্নিধ্যে আসেন। তিনি কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিটে অবস্থিত আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী বালিকা বিদ্যালয়ের (১৯৩০) পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন। মির্জাপুর মহিলা সমিতির সক্রিয় সদস্য হিসেবে তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

১৯৪৬ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় বেগম বদরুন্নেসা আহমদের সাহসিকতার জন্য হিন্দু মুসলমানের মধ্যকার আসন্ন সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়। তিনি গোপন সংবাদ পান যে, মির্জাপুর স্ট্রিটের মুসলমানদের আক্রমণ করার জন্য হিন্দুরা শ্রদ্ধানন্দ পার্কে সমবেত হচ্ছে। এ খবর পেয়ে তিনি তাঁর কতিপয় সতীর্থ মহিলাসহ কালো বোরখা পরে হাতে সাদা পতাকা নিয়ে মির্জাপুর স্ট্রিট ও হ্যারিসন রোডের মোড়ে গিয়ে দাঁড়ান। সংবাদ পেয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং  কিরণ শংকর রায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে একটি শান্তি কমিটি গঠন করেন।

ভারত বিভাগের পর বদরুন্নেসা আহমদ ১৯৫১ সালে ঢাকায় চলে আসেন এবং গেন্ডারিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি স্থানীয় মহিলা কর্মীদের নিয়ে গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি গঠন করেন এবং গেন্ডারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমাজকল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বদরুন্নেসা আহমদ তাঁর বাড়িকে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের এক প্রাণচঞ্চল কেন্দ্রে পরিণত করেন এবং অচিরেই এটি শিল্পীদের মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়। তিনি ছিলেন বুলবুল ললিত কলা একাডেমীর (তৎকালীন বুলবুল শিল্পকলা একাডেমী) প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য।

বেগম বদরুন্নেসা আহমদ নিখিল পাকিস্তান মহিলা সমিতি, পাকিস্তান শিশু কিশোর কাউন্সিল, পাকিস্তান সমাজকল্যাণ সংস্থা, মানিকগঞ্জ সমিতি প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। সমাজকল্যাণ মূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে তমঘা-ই-পাকিস্তান খেতাবে ভূষিত করা হয়। তবে ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় তিনি তাঁর এ পদবি বর্জন করেন। দীর্ঘদিন পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত থেকে ১৯৮০ সালের ২০ এপ্রিল ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। আজিমপুর গোরস্তানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]