আহমদ, ফখরুদ্দীন

আহমদ, ফখরুদ্দীন  অর্থনীতিবিদ, আমলা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার নগরকান্দি গ্রামে ১৯৪০ সালের ১ মে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহিউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন চিকিৎসক। তিনি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৭ সালে আই.এ, এবং ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি.এ. (সম্মান) এবং ১৯৬১ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।

ফখরুদ্দীন আহমদ

ফখরুদ্দীন আহমদ ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। দু’বছর পর ১৯৬৩ সালে তিনি সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানে যোগ দেন। তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ম্যাসাচুসেটসের উইলিয়ম্স কলেজ থেকে তিনি ১৯৭১ সালে উন্নয়ন অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে তিনি পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব পদে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।

ড. আহমদ ১৯৭৮ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কান্ট্রি অফিসার হিসেবে বিশ্বব্যাংকে যোগদান করেন। তিনি এ আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিশ বছরেরও অধিককাল বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন।

এসব পদের মধ্যে ছিল প্রিন্সিপাল প্রোগ্রাম অফিসার, পূর্ব আফ্রিকার কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রধান, মুখ্য অর্থনীতিবিদ, অপারেশন্স উপদেষ্টা, কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং রিজিওনাল ম্যানেজার। বিশ্বব্যাংকে তাঁর কর্মতৎপরতা মূলত দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহের সামষ্টিক অর্থনীতি ও উন্নয়ন নীতিমালাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ছিল।

বিশ্বব্যাংক থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে ড. আহমদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগ দেন। এ পদে তিনি ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি মুদ্রা ও বিনিময় নীতি, নবসৃষ্ট আর্থিক-বাজারের উন্নয়ন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। তাঁর মেয়াদে বাস্তবায়িত ব্যাংকিং খাতের সংস্কার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ড. আহমদ ২০০৫ সালের জুন মাসে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।

ফখরুদ্দীন আহমদ ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে তাঁর দু বছরের মেয়াদকালে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে ছিল নির্বাহি বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ, দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সরকারি কর্ম কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, প্রায় চার দশক বিরতির পর ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপন (২০০৮), নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার, বিভিন্ন খাতে আইনি ও রেগুলেটরি সংস্কার, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ কম্পিউটারাইজড ভোটার তালিকা প্রণয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ শেষ হয়।

ড. আহমদ একজন লেখক হিসেবেও সুপরিচিত। তাঁর বেশ কিছু গবেষণামূলক প্রবন্ধ বিভিন্ন সাময়িকী ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।  [হেলাল উদ্দিন আহমেদ]