আশাশুনি উপজেলা

আশাশুনি উপজেলা (সাতক্ষীরা জেলা)  আয়তন: ৩৭৪.৮১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২১´-২২°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৮৯°০৩´-৮৯°১৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সাতক্ষীরা সদর এবং তালা উপজেলা, দক্ষিণে শ্যামনগর উপজেলা, পূর্বে পাইকগাছা এবং কয়রা উপজেলা, পশ্চিমে কালীগঞ্জ এবং দেবহাটা উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৬৮৭৫৪; পুরুষ ১৩৩৯৯০, মহিলা ১৩৪৭৬৪। মুসলমান ১৯৬০২৬, হিন্দু ৭১১২২, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ১৩৪২ এবং অন্যান্য ২৬৩। আশাশুনি উপজেলায় মুন্ডা, চাঁড়াল বা পোদ, কৈবর্তদের বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: কপোতাক্ষ, বেতনা, খোলপেটুয়া এবং পুইনজালা খাল ও চিউতিয়া খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন আশাশুনি থানা গঠিত হয় ১৮৯১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১১ ১৪৩ ২৪১ ৮৫৮৫ ২৬০১৬৯ ৭১৭ ৫৮.৯৭ ৪৯.৫২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৮১ ৮৫৮৫ ১২৬০.৬৪ ৫৮.৯৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আনুলিয়া ৮ ৭০৫৫ ১২৩৭৪ ১২৩৩৬ ৪৫.৯
আশাশুনি ১৭ ৮২৬১ ১১৮৪১ ১১৭৮৩ ৫৯.০
কাদাকাটি ৫৬ ৬৯০৭ ৭১০৮ ৭০১২ ৪৮.৬
কুল্লা ৬৯ ৭৮৮৩ ১২৩৫০ ১২২১২ ৪৫.৫
খাজড়া ৬০ ৯২০১ ১২৮৪২ ১৩২০৪ ৪৬.৪
দুর্গাপুর ৪৩ ৫৫৫১ ৭৮২৭ ৮৩৭৩ ৪৬.৬
প্রতাপনগর ৭৭ ৮৩৭১ ১৪২৮০ ১৪৯৭০ ৪৪.৯
বড়দল ২৫ ৯০০৯ ১৪০১৭ ১৪০২০ ৫১.৪
বুধহাটা ৩৪ ৮২৮৬ ১৪৮৮৯ ১৪৬৫১ ৪৫.০
শ্রীউলা ৯৪ ১০২৯৭ ১৩০২৯ ১২৯৩৩ ৫৮.৯
সোভনালী ৮৬ ১১৭৯৭ ১৩৪৩৩ ১৩২৭০ ৫৫.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বুড়ো পীরের দরগা, বুধহাটা শিবকালী মন্দির (১১৪৬), শ্রীউলা তিন গম্বুজ বিশিষ্ট জামে মসজিদ, হযরত শাহ আজিজের (রঃ) মাযার।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা মংলা বন্দরে অবস্থানরত পাকবাহিনীর অস্ত্র বোঝাই একটি জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ক্ষতিসাধন করে। ১৫ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে ভারতে ফেরার পথে উপজেলার বুধহাটায় রাজাকারদের সঙ্গে এক লড়াইয়ে লিপ্ত হন এবং এতে মুক্তিযোদ্ধা আফতাব ও সিরাজুল ইসলাম শহীদ হন এবং ইমদাদুল হক, মুজিবর রহমান, খলিল ও ইমাম বারী নামে চারজন মুক্তিযোদ্ধা আটক হন। ১৬ আগস্ট খোলপেটুয়া নদীতে পাকবাহিনীর দু’টি গান-বোট আক্রমণ করতে গিয়ে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা গ্রামে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন শহীদ হন। এ সংঘর্ষে বহুসংখ্যক রাজাকার নিহত হয়। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে চাপড়া রাজাকার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের দু’দফা আক্রমণে বহুসংখ্যক রাজাকার হতাহত হয়। উপজেলার কেয়াগাতিতে ১টি বধ্যভূমি রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন আশাশুনি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২০০, মন্দির ৭৪, গির্জা ২, মাযার ৪। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বুধহাটা জামে মসজিদ, বড়দল গির্জা ও শাহ্ আবদুল আজিজের (রঃ) মাযার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৮%; পুরুষ ৫৪.৯%, মহিলা ৪৪.৮%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৮, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭, স্যাটেলাইট স্কুল ৪৩, এনজিও শিক্ষা কেন্দ্র ৩০, মাদ্রাসা ১৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শ্রীউলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৮১), বুধহাটা বিবিএম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫) আশাশুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪০), প্রতাপনগর এবিএস ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫২), আশাশুনি কলেজ (১৯৬৯)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী বর্তমান: প্রগলভ (মাসিক), প্রত্যয় (ত্রৈমাসিক), শ্রদ্ধাঞ্জলি (ত্রৈমাসিক)। অবলুপ্ত: জাগরণী।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৪৬, থিয়েটার গ্রুপ ২, সিনেমা হল ১, যাত্রাদল ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৩.১১%, অকৃষি শ্রমিক ৫.১২%, ব্যবসা ১৬.৯৮%, চাকরি ৩.৫৬%, নির্মাণ ০.৬২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৪%, শিল্প ০.৯৬%, রেন্ট আন্ড রেমিটেন্স ০.১৪%, পরিবহন ও যোগাযোগ ১.৭৪% এবং অন্যান্য ৭.৫৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৩৪%, ভূমিহীন ৪১.৬৬%। শহরে ৩৯.৫৬% এবং গ্রামে ৫৯.০৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল পাট, আলু, গম, সবজি, পান, ডাল, আখ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, মিষ্টি আলু, মুগ, খেসারি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, কুল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, হাঁস-মুরগির খামার, চিংড়ির ঘের, হ্যাচারি রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬১.৭৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২.৬৫ কিমি, কাঁচা ৫৪৩.৬৬ কিমি; নৌপথ ১২৪ কিমি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল ও ধানকল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

হাটবাজার ও মেলা বুধহাটা হাট, মহিষকুড় ও বড়দাল বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চিংড়ি, পান, মাদুর, কুল, কচু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩০.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যাবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭১.৫%, ট্যাপ ১.৩% এবং অন্যান্য ২৭.২%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিক প্রকোপ ভয়াবহ। বি. জি. এস. ও ডি. পি. এইচ-এর একটি গবেষেণা (২০০১) থেকে জানা যায় এলাকার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের গড় মাত্রা ১৩৩ মাইক্রোগ্রাম। এর মধ্যে ৬৭% নলকূপে আর্সেনিকের মাত্রা ১৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৪.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩২.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৭৭০ (ছিয়াত্তরের মন্বন্তর), ১৮৮৬, ১৮৯৬-৯৮, ১৯২১, ১৯৪৩ এবং ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ উল্লেখযোগ্য। ১৯২১ সালের দুর্ভিক্ষ ‘সুন্দরবন দুর্ভিক্ষ’ নামে পরিচিত। এ অঞ্চলে ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্প হয় এবং ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর  প্রবল ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানে।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, রক্তকরবী (মহিলা সংস্থা)।  [সচ্চিদানন্দ দে]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আশাশুনি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।