আলী, মীর আশরাফ

আলী, মীর আশরাফ ইরানের শীরাজ থেকে ঢাকায় আগমন করেন। তাঁর পিতার নাম মীর আলী মাহদী। মীর আশরাফ আলী ঢাকার নায়েব নাজিম নওয়াব নুসরত জং (১৭৮৫-১৮২২) ও নওয়াব শামসুদ্দৌলাহর (১৮২২-১৮৩১) সমসাময়িক ও সভাষদ ছিলেন। তিনি ছিলেন পূর্ববঙ্গের একজন বড় জমিদার। তাঁর জমিদারি ঢাকা, ত্রিপুরা (কুমিল্লা), বাকেরগঞ্জ (বরিশাল), ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম জেলায় বিস্তৃত ছিল।

কুমিল্লায় মীর আশরাফ আলীর জমিদারি বিস্তৃত ছিল বলদাখাদ (বর্তমান নবিনগর উপজেলা)। মুরাদনগর উপজেলায় নির্মিত তাঁর বাসভবনটি বর্তমানে ভগ্নাবস্থায় বিদ্যমান। তাঁর স্থায়ী বাসভবন ছিল ঢাকার রমনা রেসকোর্সের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নিকটস্থ ফুলবাড়িয়া মহল্লায় বর্তমান বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ি ও ঢাকা হল এক্সটেনশন এলাকায়। এখানে তাঁর বড় বড় মনোরম অট্টালিকা ছিল।

মীর আশরাফ আলী ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। শাহ আবদুল আজিজ (১৭৪৬-১৮২৪) শিয়া মতবাদের বিরুদ্ধে তাঁর তুহফা-ই-ইসনা আশারিয়া শীর্ষক গ্রন্থটি রচনা করলে মীর আশরাফ ওই গ্রন্থের পাল্টা জওয়াব লেখার জন্য প্রবৃত্ত হন।

মীর আশরাফ আলী ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারের অনুগত। প্রথম ত্রিপুরা যুদ্ধে (১৮২৪-২৬) তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জন্য রসদ যুগিয়ে এবং হাজার হাজার প্রজা নিয়ে স্বয়ং ত্রিপুরা সীমান্ত পর্যন্ত গিয়ে ইংরেজ সরকারের বিশেষ সহায়তা করেন। এর কৃতজ্ঞতায়  তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দেওয়ার প্রস্তাব করা হলে তিনি স্বয়ং তা গ্রহণ না করে তা তাঁর পুত্রদের দিতে অনুরোধ করেন। তদনুযায়ী কোম্পানি সরকার তাঁর পুত্র সৈয়দ আলী মাহদী ও সৈয়দ আলী হাসানকে উনিশ শতকের তৃতীয় দশকের শেষের দিকে ‘খান বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত করেন এবং আভিজাত্যিক রৌপ্যদন্ড ব্যবহারেরও অনুমতি দেন।

মীর আশরাফ আলী ১৮২৯ সালে ঢাকায় মারা যান। তাঁর উত্তরসূরি সৈয়দ আলী আহমদের (মৃত্যু ১৯৬৫) উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের সম্মুখে মরহুমের কবর চিহ্নিত করে একটি নামফলক নির্মাণ করা হয়।  [কানিজ-ই-বুতুল]