আলী, এম ইউসুফ

আলী, এম ইউসুফ (১৯২৬-১৯৯৯)  মৎস্যবিজ্ঞানী, প্রশাসক এবং দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্যসম্পদ উৎপাদন, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের অন্যতম প্রবক্তা। এম ইউসুফ আলীর জন্ম মাগুরা জেলায় ১ ডিসেম্বর ১৯২৬ সালে। কুষ্টিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে তিনি কলকাতা  প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৪৫ সালে তিনি তদানীন্তন অবিভক্ত বাংলার মৎস্য অধিদপ্তরে চাকরিতে বহাল হন। পরে তিনি কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফিশারিজ থেকে এম.এস এবং পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে একজন মৎস্য গবেষক, নীতি নির্ধারক এবং পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কর্মজীবনে তিনি অনেকগুলি দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন। এর পূর্বে তিনি পাকিস্তান সরকারের এবং স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর Bangladesh Centre for Advanced Studies-এর একজন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইউসুফ আলী একজন বিশিষ্ট মৎস্য বিশারদ ও প্রাণিবিদ ছিলেন। মৎস্য শাখায় তাঁর অবদান অসামান্য। তৃতীয় মৎস্য পরিকল্পনার অধীনে ‘বাংলাদেশে উন্নত ধরনের মৎস্য ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘বন্যা প্লাবিত সমভূমিতে মৎস্য উৎপাদনের সম্ভাব্যতা শনাক্তকরণ’ সম্পর্কিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্পের দলনেতা হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। তিনি ৫০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ এবং বহু সমালোচনামূলক ও বিশ্লেষণধর্মী রচনা প্রকাশ করেছেন। ঢাকার ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড কর্তৃক প্রকাশিত তাঁর উল্লেখযোগ্য দুটি পুস্তক Fish, Water and People (১৯৯৭) এবং Open Water Fisheries of Bangladesh (১৯৯১)। একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি মৎস্য সম্পদের স্বাভাবিক আবাস, বিভিন্ন ধরনের জলাশয় (wetlands) এবং জলজ সম্পদের প্রাকৃতিক অবস্থা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এদেশে রুইজাতীয় মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির প্রচলন ও সম্প্রসারণের কৃতিত্ব তাঁরই।

একজন প্রাণিবিদ হিসেবে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রাণিবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় চালু করার ব্যাপারেও ইউসুফ আলী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির একজন ফেলো ছিলেন এবং পরপর দু’বার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৯ সালের ৩১ জুলাই ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।  [এস.এম হুমায়ুন কবির]