আলীম, কাজী আবদুল

আলীম, কাজী আবদুল (১৯৩৩-২০০৭)  ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক। ১৯৩৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী আবদুল মতিন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত নয় বছর তিনি প্রাদেশিক এ্যাথলেটিকস-এ চ্যাম্পিয়ন হন এবং আন্তঃকলেজ এ্যাথলেটিকস-এ সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জন করেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত সাত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এ্যাথলেটিকস-এ তিনিই ছিলেন চ্যাম্পিয়ন। এই সময়ে তিনি প্রাদেশিক ক্রীড়ায় অংশগ্রহণকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাথলেটিকস দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৫১ সালে পোলভল্টে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় রেকর্ড ভঙ্গ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি আন্তঃকলেজ জিমন্যাস্টিকস-এ রানার্সআপ হন। তিনি ১৯৫৫ ও ১৯৫৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পূর্বপাকিস্তান দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন।

কাজী আবদুল আলীম

কাজী আবদুল আলীম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সাধারণ ইতিহাস বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও বিনোদন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্বদেশে ফিরে তিনি পেশাদার এ্যাথলেটিকস কোচ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান অলিম্পিক এসোসিয়েশন তাঁকে জাতীয় কোচ হিসেবে নিয়োগ করে। এই পদে তিনি ১৯৬২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২-১৯৬৫ সালে তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ১৯৬৫ সালের মার্চে তিনি ঢাকায় জাতীয় ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত সাত বছর তিনি পূর্ব পাকিস্তান দলের ম্যানেজার ও কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি প্রাদেশিক ক্রীড়ানুষ্ঠানের সংগঠক ছিলেন এবং করাচিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তান দলের ম্যানেজার ছিলেন। এডিনবার্গে অনুষ্ঠিত নবম কমনওয়েলথ গেমস-এ তিনি পাকিস্তান এ্যাথলেটিকস দলের সহযোগী ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৪ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা ও রাজশাহীর শারীরিক শিক্ষা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করলেও দেশের খেলাধুলা ও ক্রীড়াঙ্গনের মান উন্নয়নে নিজেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পৃক্ত রাখেন। ১৯৯৪ সালে তিনি হিরোশিমায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমস এবং ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমস-এ বাংলাদেশ দলের উপ-প্রধান দলনেতার দায়িত্ব পালন করেন।

কাজী আবদুল আলীম খেলাধুলা ও ক্রীড়া সংক্রান্ত ১৮টি এবং লোককাহিনী, ধাঁধা, কৌতুক ও সাহিত্যবিষয়ক ১৬টি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭৭ সালে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়ায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য তাঁকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। এছাড়া তিনি আরো কয়েকটি স্থানীয় ও বিদেশি পুরস্কার ও খেতাব লাভ করেন। ২০০৪ সালে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়ায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে অফিসিয়াল ইউনেসকো এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। কাজী আবদুল আলীম ক্রীড়ায় মহিলাদের অংশগ্রহণের সূচনা করে সুনাম অর্জন করেন। ১৯৫৩ সাল থেকে পরপর কয়েক বছর ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাঁর বোনেরা স্বর্ণপদক জয় করেন। এটি তাঁরই অবদানের ফল। ১৯৬৫ সালে তিনি খেলাধুলার আইন কানুন নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

কাজী আবদুল আলীম ২০০৭ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন।  [মাহবুবুল আলম]