আলীমুল্লাহ, খাজা

আলীমুল্লাহ, খাজা (? -১৮৫৪)  ঢাকা নওয়াব পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জন্মস্থান ঢাকার বেগম বাজার। তাঁর পিতার নাম খাজা আহসানুল্লাহ এবং পিতামহের নাম খাজা আব্দুল্লাহ। বাল্যকালেই তিনি তাঁর পিতাকে হারান। অতঃপর তিনি তাঁর নিঃসন্তান চাচা খাজা হাফিজুল্লাহর কাছে লালিত-পালিত হন। হাফিজুল্লাহ ভ্রাতুষ্পুত্র আলীমুল্লাহর উপর তাঁর ব্যবসায়ের দেখাশোনার দায়িত্বভার অর্পণ করেন। আলীমুল্লাহ প্রথমে চাচার তত্ত্বাবধানে এবং পরে স্বতন্ত্রভাবে চামড়া, লবন ইত্যাদির ব্যবসা করে প্রভূত উন্নতি করেন। গ্রিক দেশিয় কয়েকজন ব্যবসায়ীও তাঁর ব্যবসায়ের অংশীদার ছিলেন।

খাজা আলীমুল্লাহ

ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে সাফল্য লাভের পর আলীমুল্লাহ তাঁর চাচার ন্যায় জমিদারি ক্রয়ের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরায় বিস্তৃত জমিদারি এবং বহুসংখ্যক নীলকুঠি ক্রয় করেন। ঢাকা শহরে রমনার বাগান এবং চান্দিনা এলাকায়ও অনেক জমি ক্রয় করেন। তিনি মহাজনী কারবারও করতেন এবং ঢাকা ব্যাংকের একজন অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরিচালক ছিলেন। আলীমুল্লাহর সাফল্য দেখে খাজা পরিবারের অন্যান্য সবাই তাঁদের সম্পত্তি পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পণ করেন। খাজা আলীমুল্লাহ ১৮৪৮ সালে একটি ওয়াকফনামা করে তাঁর দ্বিতীয়পুত্র খাজা আব্দুল গণিকে খাজা পরিবারের সমুদয় সম্পত্তির মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত করেন। এ বিখ্যাত ওয়াকফনামাটিই ছিল ঢাকা নওয়াব পরিবারের উন্নয়নের মূল চাবি-কাঠি। এর ফলে মুতাওয়াল্লি পরিবারের সব সম্পত্তি এককভাবে পরিচালনা করতেন এবং পরিবারের অন্যান্যরা ভাতা পেতেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপযুক্ত কাউকে পরবর্তী মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত করতেন।

আধুনিকমনা আলীমুল্লাহ ইউরোপীয় চালচলন পছন্দ করতেন। নিজে ইংরেজি শেখেন এবং পরিবারের সদস্যদের ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। তিনি উৎকৃষ্টজাতের ঘোড়া পালতেন এবং ইংরেজদের সহায়তায় ঢাকায় ঘোড় দৌড় প্রচলন করেন। তিনি হাতি-ঘোড়া নিয়ে শিকারে যেতেন এবং খাজা পরিবারে প্রথম নাচ গানের প্রচলন করেন। ১৮৪০ সালে গঠিত ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কমিটিতে একজন সদস্য রূপে খাজা আলীমুল্লাহ শহরের উন্নয়ন কাজে অংশ নেন। ১৮৪২-৪৭ সালে উক্ত কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি লালবাগ কেল্লার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৮৫২ সালে তিনি কোহিনূরের সমগোত্রীয় বিখ্যাত হীরক দরিয়া-ই-নূর নিলামে ক্রয় করেন।

১৮৩০ সালে তিনি কুমারটুলিস্থ কুঠিবাড়ি ফরাসিদের নিকট থেকে ক্রয় করে নিজের বাসভবনোপযোগী সংস্কার করেন। এ প্রাসাদই পরে ঢাকার নওয়াব বাড়ি তথা আহসান মঞ্জিল নামে পরিচিত হয়। আটিয়া পরগনার জমিদারি তিনি দরিদ্রদের জন্য ওয়াকফ করে দেন। ১৮৪৩ সালে ঢাকার শেষ নায়েব নাজিম গাজীউদ্দীন হায়দার মারা গেলে খাজা আলীমুল্লাহ সুন্নি হয়েও শিয়াদের ঐতিহ্যবাহী মুহররম উৎসবের যাবতীয় ব্যয় বহন করেন। পরে সরকার তাঁকেই হোসেনী দালান এর মুতাওয়াল্লিল নিযুক্ত করেন। খাজা আলীমুল্লাহ ১২৬১ বাংলা সনের (১৮৫৪ সাল) ১৬ ভাদ্র ঢাকায় মারা যান। বেগম বাজারে নওয়াবদের পারিবারিক গোরস্তানে তাঁর সমাধি রয়েছে।  [মোহাম্মদ আলমগীর]