আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ

আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ আর্থিক বিষয়ে সরকারের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলিকে ক্ষমতা প্রদান। ১৯৭৫ সালের কার্যবিধি (১৯৯৬ সালে পরিমার্জিত) অনুসারে সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সকল আর্থিক বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ বাধ্যতামূলক। সাধারণ রীতি অনুসারে মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা জাতীয় সংসদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাজেট বরাদ্দের আওতায় স্বাধীনভাবে ব্যয় নির্বাহ করতে পারে।

অর্থবিভাগ কর্তৃক আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ প্রধানত দু ধরনের হয়ে থাকে: রাজস্ব বাজেট সংক্রান্ত এবং উন্নয়ন বাজেট সম্পর্কিত। রাজস্ব বাজেটের সঙ্গে সম্পর্কিত সকল আর্থিক বিষয় সরকারি আদেশ, নির্দেশ ও বিধিবদ্ধ আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ নিজেরাই সম্পাদন করে থাকে। ১৯৮৩ সালের ১৫ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ কর্তৃক জারিকৃত একটি অফিস স্মারক মতে এসকল বিষয়ে ঘন ঘন অর্থবিভাগের মতামত গ্রহণ সীমিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ উদ্দেশ্যে অর্থবিভাগের অফিস স্মারকে ২৭টি বিষয়ের একটি তালিকা যুক্ত করা হয় যেক্ষেত্রে অর্থবিভাগের মতামত প্রয়োজন। এ তালিকা ১৯৯০ সালের এপ্রিল মাসে সামান্য পরিবর্তিত হলেও মূলত ২৭টি বিষয়ের তালিকা অপরিবর্তিতই থাকে।

১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে অর্থবিভাগ কর্তৃক জারিকৃত অপর একটি স্মারকে ৩৩টি বিষয় বা ক্ষেত্রে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের আংশিক বা পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়। বিভিন্ন অধিদপ্তরের প্রধান এবং এসব বিভাগের অধীন উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রকল্প পরিচালকদের হাতে তাদের প্রকল্পের আকার ও ধরন অনুসারে বিভিন্ন ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের নিরিখে এগুলিকে ক, খ, গ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকার প্রকল্প ছিল ‘ক’ শ্রেণির, ৫ কোটি থেকে অনূর্ধ্ব ১০ কোটি টাকার প্রকল্প ‘খ’ শ্রেণির এবং ১০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের প্রকল্প ছিল ‘গ’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

এই বিষয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি ১৬ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে উভয় ধরনের বাজেটের ব্যয়ের জন্য জনসমক্ষে ঘোষণা করা হয়েছিল (অর্থ বিভাগ অফিস স্মারক নং ০৭.০০.০০০০.১৫১.২২.০০৩.১৫.৩৫১(১) তারিখ ১৬ আগস্ট, ২০১৫)।

বিদ্যমান আর্থিক ক্ষমতার অর্পণসীমা সংক্রান্ত বিধি থেকে দেখা যায় যে রাজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যয়ের জন্য আর্থিক সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া, অর্পিত কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে প্রেরিত মেমোসমূহ উল্লেখ করেছিল যে ২৭টি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আর্থিক বিভাগের পর্যালোচনা প্রয়োজন যে সংখ্যাটি পরবর্তীতে কমিয়ে চৌদ্দ করা হয়েছে। সর্বশেষ আদেশটি আরও উল্লেখ করে যে পূর্বে, অর্পিত ক্ষমতাগুলি নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না যার জন্য সংশোধনী আনা প্রয়োজন ছিল। অর্পিত ক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্তে প্রধান অ্যাকাউন্টিং অফিসার হিসাবে তাদের ক্ষমতার ব্যয় সম্পর্কিত বিষয়ে সচিবদের (সিনিয়র সেক্রেটারি, দায়িত্বে থাকা সেক্রেটারিসহ) অনেকগুলি দায়িত্ব আরোপ করে।

অর্পিত ক্ষমতা সম্পর্কে সিদ্ধান্তের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল (১) মন্ত্রণালয় বা বিভাগ প্রয়োজনীয় হিসাবে বিবেচিত হিসাবে তার ক্ষমতা সংযুক্ত বিভাগে অর্পণ করবে, (২) প্রতিটি আর্থিক বছরের শুরুতে, বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হবে এবং প্রকিউরমেন্ট এন্টিটি প্রধানের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে, এবং (৩) পূর্ত বিষয়ক কাজের ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকা বা তদুর্ধ্ব পরিমাণের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটিতে জমা দিতে হবে। অনুরূপভাবে ১০ কোটি টাকা উপরে পরামর্শক ব্যয়ের প্রস্তাবও অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটিতে জমা দিতে হবে।

ক্ষমতা অর্পণ করার জন্য মেমোর দ্বিতীয় অংশটি উন্নয়ন বাজেটের অধীনে ব্যয় সম্পর্কিত। এই অংশটি পনেরোটি ক্ষেত্রের একটি তালিকা প্রদান করেছে যেসব বিষয় সম্পর্কিত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে৷ এটি ছাড়াও, মন্ত্রণালয়/বিভাগ সংযুক্ত বিভাগ এবং প্রকল্প পরিচালকের জন্য আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে প্রযোজ্য অন্যান্য পদ্ধতিসহ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট/বিধির অধীন। [এ.এম.এম শওকত আলী]