আযান

আযান  আরবি শব্দ, এর অর্থ আহবান করা বা ঘোষণা করা। শুক্রবারের জুমু‘আর  নামায ও দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে যোগদানের জন্য আহবানসূচক কয়েকটি নির্দিষ্ট বাক্যসমষ্টির পারিভাষিক নাম ‘আযান’। মুআয্যিন মসজিদের এক পাশে বা দরজায় কিংবা মিনারে দাঁড়িয়ে আযান দেন। ইসলামের আদিযুগে ‘হায়্যা ‘আলাস সালাত’ (নামাযের জন্য আসুন) বলা হতো। হিজরতের দু-এক বছর পর মহানবী (স.) নামাযের প্রতি আহবানের উপায় নিয়ে সাহাবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কেউ কেউ নামাযের সময় আগুন প্রজ্জ্বলিত করার, কেউ কেউ ঘণ্টাধ্বনি করার, আবার কেউ কেউ শিঙ্গা ফোঁকার বা নাকু‘স বাজাবার পক্ষে মত প্রকাশ করেন; কিন্তু তাঁরা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি। পরে ‘আবদুল্লাহ ইবন যায়দ (রা.) স্বপ্নে আযানের বর্তমানে প্রচলিত শব্দসমূহ লাভ করেন। একই রাতে হযরত ‘উমর (রা.)-সহ আরো কয়েকজন সাহাবীও অনুরূপ স্বপ্ন দেখে মহানবী (স.)-এর নিকট তা ব্যক্ত করেন। তাঁর হুকুমে তা-ই আযানের রূপ ধারণ করে। হযরত বিলাল (রা.) ওই শব্দের মধ্য দিয়ে নামাযের আযান দিতে থাকেন, যা আজও মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত আছে।

আযানের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুর নেই; তবে সঠিকভাবে উচ্চারণের জন্য যে কোনো সুর প্রয়োগ করা যেতে পারে। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের ন্যায় আযান প্রদান ও এক উন্নতমানের শৈল্পিক নৈপুণ্যে পরিণত হয়েছে। কতিপয় হাম্বলী ‘উলামা আযানে সুরের প্রয়োগ সমর্থন করেন না। মসজিদে জুমু‘আ ও প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযান অবশ্য কর্তব্য, তবে গৃহে বা মাঠে নামায আদায় করার সময় আযান দেওয়া উত্তম। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামতের শব্দ উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। আযানের পর একটি দোয়া পাঠ করতে হয়। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় কিংবা অন্যান্য বিপদের সময় আযান দেওয়ার বিধান আছে। এর মধ্য দিয়ে বিপদ নিরসনের প্রত্যাশা করা হয়।  [মুহাম্মদ আবদুল বাকী]