আযম খান

আযম খান ইরাদাত খান নামেও পরিচিত। ১৬৩২ থেকে ১৬৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বাংলার সুবাহদার ছিলেন। তৎকালীন বাংলায় পর্তুগিজদের প্রধান ব্যবসা ও সামরিক কেন্দ্র হুগলি দখল করার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সুবাদার দ্বিতীয় কাসিম খান মৃত্যুবরণ করেন এবং আযম খান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।

আযম খানের প্রকৃত নাম ছিল মীর মুহম্মদ বাকির। তিনি ছিলেন ইরাকের অধিবাসী এবং সম্রাট জাহাঙ্গীর এর শাসনামলে তিনি এ উপমহাদেশে আসেন। সম্রাট তাঁকে খান-ই-সামান পদে নিযুক্ত করেন। পরবর্তীকালে তিনি কাশ্মীরের সুবাহদার হন এবং শীঘ্রই মীর বখশী পদে উন্নীত হন। তাঁর পদোন্নতির ধারা সম্রাট শাহজাহান এর শাসনামলে অব্যাহত থাকে এবং সম্রাট তাঁকে ‘আযম খান’ উপাধিতে ভূষিত করে প্রধান উজির বা প্রধান দীউয়ান পদে অধিষ্ঠিত করেন। এর পূর্বেই তিনি ‘ইরাদাত খান’ খেতাবে সম্মানিত হয়েছিলেন।

আযম খান স্বল্পকালের জন্য বাংলার সুবাহদারের দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর সময়ে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে নি। তাঁর শাসনামলের লক্ষণীয় ঘটনা হলো বহুসংখ্যক যোগ্য ব্যক্তির বাংলায় আগমন যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন পারস্য দেশিয়। পূর্বতন সুবাদারের আমলে পর্তুগিজদের ক্ষমতা বিনষ্ট করা হয়েছিল এবং আযম খানের সময়ে তাদের স্থলে ইংরেজরা প্রাধান্য লাভ করে। তারা সম্রাট শাহজাহানের কাছ থেকে ব্যবসায়িক সুবিধা লাভ করে এবং মেদিনীপুরের পিপলিতে একটি বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে।

আযম খানের সুবাহদারিকালে বাংলা আসামের রাজা প্রতাপ সিংহের (১৬০৩-১৬৪১) আক্রমণের হুমকির সম্মুখীন হয়। দ্বিতীয় কাসিম খানের সুবাদারিকালে হুগলিতে পর্তুগিজদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বন্ধুত্বের কারণে প্রতাপ সিংহ মুগলদের সঙ্গে সংঘর্ষে উৎসাহিত হন। আসামের রাজা কামরূপে বিক্ষিপ্ত আক্রমণ পরিচালনা করে বাংলার মুগল শাসকদের হয়রানি করতে থাকেন। তদুপরি আযম খান সুবাহর উত্তর-পূর্ব সীমান্তে সংঘটিত ঘটনাবলির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে পারেন নি। এমনি গোলযোগপূর্ণ প্রশাসনিক ও সামরিক পরিস্থিতিতে সম্রাট ১৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে আযম খানকে অপসারণ করে তাঁর স্থলে ইসলাম খান মাশহাদিকে নিয়োগ দানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।  [কে.এম করিম]