আবৃতবীজ উদ্ভিদ

আবৃতবীজ উদ্ভিদ (Angiosperm)  সাধারণত সপুষ্পক উদ্ভিদ হিসেবেই অধিক পরিচিত এবং প্রকৃত ফুল, দ্বি-নিষেক, জাইলেম কোষকলায় ভেসলের উপস্থিতি এবং গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরীণ ডিম্বক থেকে বীজ ও শেষাবধি ফলে রূপান্তর এদের বৈশিষ্ট্য। এ কারণে এদের আবৃতবীজ উদ্ভিদ বলা হয়। এ দলের উদ্ভিদই বর্তমানে পৃথিবীর মুখ্য উদ্ভিদকুল। আবৃতবীজ উদ্ভিদের উৎপত্তি ক্রিটেসাস যুগে, প্রায় ১২ কোটি বছর আগে, সম্ভবত উষ্ণমন্ডলে। ক্রিটেসাস যুগের শেষ নাগাদ ৭-৮ কোটি বছর আগে আবৃতবীজীরা পৃথিবীর বেশির ভাগ অঞ্চলের মুখ্য উদ্ভিদ হয়ে ওঠে।

আবৃতবীজ উদ্ভিদ: ডেউয়া

আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতিতে আবৃতবীজ উদ্ভিদ একক বিভাগ (division), উপবিভাগ বা শ্রেণি (class) হিসেবে নানাভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। অতঃপর রয়েছে ক্রমবিভাজন শ্রেণী বা উপশ্রেণীতে এবং শেষে বর্গ ও গোত্রে। আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসে আবৃতবীজীর গোত্রসংখ্যায় বৈষম্য দেখা যায়, যেমন ৩২১ (Thorne, ১৯৭৬), ৩৮৩ (Cronquist, ১৯৬৮, ১৮৮১), ৪১৮ (Takhtajan, ১৯৬৯)। ক্রঙ্কুইস্ট (১৯৬৮) সব আবৃতবীজীকে Magnoliophyta নামের একটি মাত্র বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করে অতঃপর তাকে Magnoliopsida (দ্বিবীজপত্রী) ও Liliopsida (একবীজপত্রী) এ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। Magnoliopsida-কে পুনরায় ৬ উপশ্রেণী, ৬৩ বর্গ (order) ও ৩১৮ গোত্রে এবং Lipiopsida-কে ৫ উপশ্রেণী, ১৮ বর্গ ও ৬৫ গোত্রে বিভক্ত করা হয়েছে।

আবৃতবীজীদের প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার যা পৃথিবীর যে কোনো উদ্ভিদবর্গের মধ্যে বৃহত্তম। আকারের দিক থেকে ১০০ মিটার উঁচু ও ২০ মিটার পরিধির বৃক্ষ (অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি Eucalyptus প্রজাতি) থেকে ১ মিমি লম্বা অত্যন্ত ছোট ভাসমান ক্ষুদিপানাও (Wolffia) এ জাতীয় উদ্ভিদের অন্তর্ভুক্ত। একালের উদ্ভিদকুলের বেশির ভাগই আবৃতবীজী। এগুলির জানা ২ লক্ষ ৩৫ হাজার প্রজাতির মধ্যে ১০০০ প্রজাতির অর্থনৈতিক গুরুত্ব সমধিক। তার মধ্যে ১০০টি বিশ্ববাণিজ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং মাত্র ১৫টি সরবরাহ করে সারা দুনিয়ার খাদ্য ফসলের সিংহভাগ: ধান, গম, ভুট্টা, জোয়ার, বার্লি, আখ, বীট, আলু, ক্যাসাভা, শিম, সয়াবিন, নারিকেল, চীনাবাদাম ও কলা।

বাংলাদেশে আবৃতবীজীর প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ৫০০০, যদিও ডেভিড প্রেইন (Bengal Plants, ১৯০৩) বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্গত ভূখন্ডে এদের প্রায় ২১০০ প্রজাতি (দ্বিবীজপত্রী ১৫২৪, একবীজপত্রী ৫৫৭, মোট ২০৮১) নথিভুক্ত করেছেন। ২০০০ সাল নাগাদ এ তালিকায় আরও ৪০০ প্রজাতি (Bengal Plants এবং Flora of British India-তে উল্লেখ নেই) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে আবৃতবীজীর মধ্যে ক্ষুদ্রতম হলো Wolffia arrhiza (১ মিমি লম্বা জলজ পানা) এবং দীর্ঘতম হচ্ছে গর্জন (Dipterocarpus turbinatus)। বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়ামে আবৃতবীজ উদ্ভিদের নমুনা শ্রেণিবিন্যাসে ক্রঙ্কুইস্টের পদ্ধতি (১৯৮১) অনুসৃত হয় এবং Magnoliopsida ও Liliopsida বিভাগদ্বয়ের অধীনে যথাক্রমে ১৬০ ও ৪৩টি গোত্র লিপিবদ্ধ হয়েছে।

বাংলাদেশের  রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই বনাঞ্চলের সীতাপাহাড়ের ৩১৪ হেক্টর এলাকা থে কে আব „তবীজীর ৯৩ গোত্র ও ২৯২ গণের অধীন মোট ৪২৩ প্রজাতি (৩৪৩ দ্বিবীজপত্রী, ৮০ একবীজপত্রী) শনাক্ত করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনে আবৃতবীজ উদ্ভিদকুলের পর্যাপ্ত উপস্থিতির সাক্ষ্যবহন করে।  [মোঃ আবুল হাসান এবং মোঃ সালার খান]

আরও দেখুন বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়াম