আফগান শাসন

আফগান শাসন (১৫৩৮ ও ১৫৩৯-১৫৭৬ খ্রি.)  হোসেন শাহী আমলের অবসানের পর বাংলায় আফগানদের শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তারা বাংলায় ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ছয় মাস (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) এবং ১৫৩৯ থেকে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে শেরখান বাংলা অধিকার করার বহু পূর্বেই আফগানরা বাংলার সুলতানের অধীনে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। জৌনপুরের শর্কী সুলতানদের মতো বাংলার সুলতানগণও বিভিন্ন বিভাগে আফগানদেরকে নিয়োগ করতেন। শেষ হাবশী সুলতান মুজাফফর শাহের (১৪৯০-১৪৯৩ খ্রি.) সৈন্যবাহিনীতে বেশ কয়েক হাজার আফগান সৈন্য ছিল। সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ এর (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) অধীনেও বিভিন্ন বিভাগে বেশ কিছু সংখ্যক আফগান কর্মকর্তা ও সৈন্য ছিল। এরা পরবর্তী সময়ে সুলতান নুসরত শাহ এর (১৫১৯-১৫৩২ খ্রি.) আমলে সেনাপতি এবং প্রশাসক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এমতাবস্থায় শেরশাহ বাংলা জয় করেন। শেরশাহ কর্তৃক বাংলা বিজিত হলে আফগানগণ সিংহাসনে নিজেদের লোক দেখতে পান এবং তাঁর পতাকাতলে সমবেত হন।

শূর শাসকদের অধীনে বাংলা (১৫৩৯-১৫৫৩ খ্রি.)  বিহারে আফগানগণ বসতি স্থাপন করে তেরো শতকের শুরু থেকেই। এ প্রক্রিয়া চরমে পৌঁছে দিলিতে লোদী শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে। আফগান নেতা দরিয়া খান নুহানীর পরে তাঁর পুত্র বাহার খান নুহানী বিহারের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি লোদীদের কর্তৃত্ব অস্বীকার করেন এবং সুলতান মুহম্মদ নুহানী উপাধি গ্রহণ করে ১৫২২ খ্রিস্টাব্দের পরে কোনো এক সময়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র জালাল খান নুহানী সিংহাসনে বসেন। ইবরাহিম লোদীর ভাই মাহমুদ লোদী জালাল খানের কাছ থেকে বিহার অধিকার করেন। জালাল বাংলার সুলতান নুসরত শাহের নিকট রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। মাহমুদও বাবুর কর্তৃক তাড়িত হয়ে শরণার্থী হিসেবে নুসরত শাহের দরবারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে বাবুরের মৃত্যুর পর মাহমুদ লোদী আফগানদের পুনর্জাগরণের জন্য পুনরায় সচেষ্ট হন। কিন্তু ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি দোরাহ-র যুদ্ধে হুমায়ুন কর্তৃক পরাজিত হন। এরপর শেরখান শূর ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে হোসেন শাহী বংশের শেষ সুলতান গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহকে পরাজিত করে বাংলা অধিকার করেন এবং সেখানে শূর বংশীয় আফগান শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু মাহমুদ শাহের সাহায্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুগল সম্রাট হুমায়ুন ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে বিনা বাধায় গৌড় অধিকার করেন এবং সেখানে তিনি প্রায় আট মাস অবস্থান করেন। দিল্লির সিংহাসন নিয়ে ভ্রাতৃঘাতী ষড়যন্ত্র শুরু হলে হুমায়ুন বাংলা ছেড়ে দিল্লির অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে শেরখান অতর্কিতে আক্রমণ করে হুমায়ুনকে পরাজিত করেন। অতঃপর তিনি বাংলার শাসনকর্তা জাহাঙ্গীর কুলীকে হত্যা করে গৌড় অধিকার করেন (অক্টোবর, ১৫৩৯ খ্রি.)।

সাম্রাজ্য গড়ার কাজে বাংলার গুরুত্বকে যথার্থভাবে অনুধাবন করে শেরশাহ বাংলার প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের প্রতি মনোনিবেশ করেন। তিনি প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য প্রথম গভর্নর খিজির খানকে চাকরিচ্যুত করেন এবং চট্টগ্রামসহ বাংলাকে ছোট ছোট কয়েকটি ইউনিটে বিভক্ত করে প্রত্যেক ইউনিটকে এক একজন মুক্তার অধীনে ন্যস্ত করেন। তিনি সকল মুক্তার ওপর প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজী ফজীলতকে নিয়োগ করেন। শেরশাহের পরিকল্পনা খুবই ফলপ্রসূ হয় এবং আফগানরা বাংলায় এমন স্থায়ীভাবে নিবাসিত হয় যে, তারা বাংলার আবহাওয়া ও সংস্কৃতির সাথে একান্তভাবে মিশে যায়।

শেরশাহের পুত্র ও দিল্লির সিংহাসনে তাঁর উত্তরাধিকারী ইসলাম শাহ (১৫৪৫-৫৩ খ্রি.) বাংলার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন। শাসন ব্যবস্থাকে আরও কেন্দ্রায়িত করার জন্য তিনি কাজী ফজীলতকে অপসারণ করে মুহম্মদ খান শূরকে ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দে নিয়োগ দেন। নতুন গভর্নর সুলায়মান খান নামে এক বিদ্রোহীকে শাস্তি দিয়ে তাঁর অবস্থান সুদৃঢ় করেন।

স্বাধীন শূর সালতানাত (১৫৫৩-৬৩ খ্রি.)  ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর আদিল শাহ দিল্লির সিংহাসন দখল করলে তার কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে বাংলার শাসনকর্তা মুহম্মদ শূর ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান শামসুদ্দীন মুহম্মদ শাহ গাজী উপাধি ধারণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শূর বংশের চারজন সুলতানের মধ্যে মুহম্মদ শাহ ও বাহাদুর শাহ যোগ্য সুলতান বলে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। মুহম্মদ শাহ ত্রিপুরার রাজার কাছ থেকে শুধু চট্টগ্রামই পুনর্দখল করেন নি, বরং তিনি আরাকান অঞ্চলেও আক্রমণ পরিচালনা করেছিলেন। বিহারেও তাঁর কর্তৃত্ব স্বীকৃত ছিল। পূর্বভারতে তাঁর কর্তৃত্ব তাঁকে আদিল শাহ শূরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত করে। তিনি জৌনপুর দখল করে দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কিন্তু ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ছপ্পরঘাটায় সংঘটিত যুদ্ধে বাংলার সুলতান মুহম্মদ শাহ আদিল শাহের সেনাপতি হিমুর হাতে নিহত হন।

মুহম্মদ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র খিজির খান গিয়াসউদ্দীন আবুল মুজাফফর বাহাদুর শাহ উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুলতান গিয়াসউদ্দীন তাঁর পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য আদিল শাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। মুঙ্গেরের অন্তর্গত সুরুজগড়ের ৪ মাইল পশ্চিমে ফতেপুরে উভয় পক্ষে সংঘটিত যুদ্ধে বাহাদুরের সৈন্যবাহিনী আদিল শাহের বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে। আদিল শাহ বন্দি হন এবং পরে তাঁকে হত্যা করা হয়। বাহাদুর শাহ জৌনপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকা শাসন করেন এবং পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে আকবর এর গভর্নর খান-ই-জামানের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে বাহাদুর শাহের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই জালাল শাহ ক্ষমতা লাভ করেন এবং ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। জালাল শাহকে হত্যা করে গিয়াসউদ্দীন নামক জনৈক আফগান ক্ষমতা জবরদখল করেন। তাজখান কররানী এ জবরদখলকারী গিয়াসউদ্দীনকে হত্যা করে বাংলায় কররানী শাসনের সুত্রপাত করেন।

কররানী বংশ (১৫৬৩-৭৬ খ্রি.)  উত্তর ভারতে মুগলদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা হারিয়ে আফগানগণ পূর্ব ভারতে কররানীদের আবির্ভাবকে স্বাগত জানায়। উত্তর ভারত থেকে পলায়নপর আফগানগণ দলে দলে এসে বিহার ও বাংলায় আশ্রয় নেয় এবং কররানীদের হাতকে শক্তিশালী করে। তাজখান কররানী ছিলেন অভিজ্ঞ রাজনীতিক। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের প্রারম্ভে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। বদাউনী সঠিকভাবেই তাকে আফগানদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ও শিক্ষিত ব্যক্তি বলে অভিহিত করেন।

তাজখান কররানীর পরে তাঁর ভাই সুলায়মান কররানী ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে (৯৮০ হি) তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় তার দক্ষতা তার জন্য গৌরব বয়ে আনে। সুলায়মান কররানী তাঁর রাজধানী গৌড় থেকে তান্ডায় স্থানান্তরিত করেন। কারণ, গৌড়ের আবহাওয়া মানুষ ও পশুপাখির জন্য ক্ষতিকর ও অনুপযোগী হয়ে উঠেছিল।

উড়িষ্যা বিজয় সুলায়মান কররানীর আরেকটি গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ সামরিক কীর্তি। তিনি ১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে (৯৭৫ হি.) উড়িষ্যার রাজা মুকুন্দদেবকে পরাজিত করেন এবং এর প্রশাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করেন। অতঃপর সুলায়মান কররানী ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে কুচবিহার অধিকার করেন। আফগানরা তেজপুর পর্যন্ত অগ্রসর হয় এবং কুচরাজধানীর চতুষ্পার্শ্বস্থ ও সীমান্ত এলাকায় অনেক স্থান দখল করে।

সুলায়মান কররানীর বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা মুগলদের সাথে তাঁর সম্পর্ক আড়াল করে রাখে। তিনি একজন দক্ষ কূটনীতিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ কুশলী পরিচালক ছিলেন। মুগলদেরকে তুষ্ট রাখার জন্য তিনি মাঝে মাঝে আকবরের নিকট নানা ধরনের উপঢৌকন প্রেরণ করতেন। এমন কি, তিনি বাহ্যিকভাবে মুগলদের বশ্যতা স্বীকার করে বলতেন যে, তিনি সম্রাটের নামে খুতবা পাঠ এবং তাঁর নামে মুদ্রা প্রবর্তন করবেন।

পূর্বভারতের আফগান সুলতানদের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য ও শ্রেষ্ঠ সুলতান সুলায়মান কররানীর মৃত্যু হয় সম্ভবত ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে (৯৮০ হি.)। তিনি তান্ডায় সমাহিত আছেন। পুত্র বায়েজীদ কররানী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি লোদী খান কররানীসহ সকল নেতৃস্থানীয় অভিজাতবর্গের সহযোগিতায় সবরকমের রাজকীয় ক্ষমতা ধারণ করেন। যুবরাজ হিসেবে বায়েজীদ ইতিপূর্বে ভবিষ্যতের জন্য অতি উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। কিন্তু সুলতান হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি নির্যাতন ও হয়রানি করার নীতি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ পরিস্থিতিতে দরবারের নির্যাতিত ব্যক্তিগণ দলবদ্ধ হয়ে একমাসের মধ্যেই তাকে হত্যা করে এবং তাঁর ছোট ভাই দাউদ খান কররানীকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে।

দাউদ কররানী ক্ষমতা লাভ করেই দেখতে পান যে, আফগান অভিজাতদের বিভিন্ন শাখার মধ্যে বিরোধ বিরাজমান। তিনি ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যমে তাঁর শাসন সূচনা করেন। দাউদ তাঁর চাচা খাজা ইলিয়াস কররানীর পুত্র হাঁসুকে (রাজহত্যাকারী) শাস্তি দেন। তিনি নিজ নামে খুতবা পাঠ এবং মুদ্রা প্রবর্তন করে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হন। এতে সম্রাট আকবর খুবই অসন্তুষ্ট হন। দাউদ কররানী প্রভাবশালী অভিজাত লোদী খানকে বিহারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তিনি আরও একজন ক্ষমতাশালী অভিজাত গুজর খানকে শান্ত করেন। এ গুজর খান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে বায়েজীদ কররানীর পুত্রকে ঘোষণা দেওয়ার উপক্রম করেছিলেন। গুজর খানকে শান্ত করার সাথে সাথে বিহারে প্রজাবিদ্রোহের উপাদানসমূহ দূরীভূত হয়ে যায়।

আফগান রাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এবং প্রবল উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি ছিল মুগল সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, তারা এমন পরিস্থিতিকে যথার্থভাবে কাজে লাগানোর জন্য অপেক্ষা করছিল। ইতোমধ্যে দাউদ খান কররানী অবিবেচকের মতো তাঁর সেনাপতি লোদী খানকে হত্যা করেন। এ ঘটনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায়। লোদীর শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁর পুত্র ইসমাইলের নিরাপত্তা বিধানের জন্য মুগল শাসনকর্তা মুনিম খানের নিকট নিয়ে যান।

পরিস্থিতির এ নাটকীয় পরিবর্তন মুনিম খানকে পাটনা অবরোধ করার সুযোগ করে দেয়। দাউদ কররানী অনতিবিলম্বে পাটনা পরিত্যাগ করে তেলিয়াগড়ি, তান্ডাসাতগাঁও এর মধ্যদিয়ে দূরবর্তী উড়িষ্যার কটকে পৌছেন। মুগল সৈন্যবাহিনী অতি দ্রুত তাঁর পিছু ধাওয়া করে। ফলে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। কটকের সন্ধির মাধ্যমে তুকারয়ের যুদ্ধের (৩ মার্চ ১৫৭৫ খ্রি.) অবসান ঘটে। সন্ধির শর্তানুসারে দাউদ খান আর কখনও মুগলদের বিরুদ্ধাচরণ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

ইতোমধ্যে মুনিম খানের মৃত্যু হয় এবং হোসেনকুলী খান খান-ই-জাহান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। দাউদ খান সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে মুগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুলাই রাজমহলের যুদ্ধ এ পরাজয়ের ফলে দাউদ কররানীর পতন ঘটে। দাউদ খান বন্দি হন এবং তাকে খান-ই-জাহানের আদেশে হত্যা করা হয়।

কররানী সুলতানগণ প্রশংসনীয় গুণসম্পন্ন শাসক ছিলেন। তাঁদের সাম্রাজ্য হারানোর পেছনে মুগল সৈনিকদের সামরিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্বের চেয়ে বরং তাঁদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও যে সকল হিন্দুদের ওপর তারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন তাদের বিশ্বাসঘাতকতাই বিশেষভাবে কাজ করেছে।

নেতাবিহীন আফগানরা কুতলু খান নুহানীর সাথে যোগ দেয়। প্রধান ঘাটি ঘোড়াঘাট থেকে কুতলু খান তাঁর শাসন বিহার ও উড়িষ্যার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পরিচালনা করেন। কুতলু খানের পর ঈসা খান লোহানী, তাঁর পুত্র খাজা সুলায়মান লোহানী এবং খাজা উসমান লোহানী আফগানদের নেতৃত্ব দেন। ঈসা খান নুহানী কুতলুখানের পুত্র নাসির নুহানীর অভিভাবক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আকস্মিকভাবে ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে সুলায়মান লোহানীর মৃত্যু হয় । তাই ঈসা লোহানীর মৃত্যুর পর তার অপর পুত্র উসমান লোহানী (উসমান খান আফগান নামেও পরিচিত) আফগানদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বারো ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খান এবং অন্যান্য রাজা ও জমিদারদের সাথে মৈত্রী স্থাপন করেন। এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব তীরের বিস্তৃত অঞ্চলের উপর উসমান লোহানীর শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। ইসলাম খান চিশতির শাসনামলে উসমান লোহানীর মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীগণ মুগলদের নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।  [মোহাম্মদ ইব্রাহিম]