আত্রাই উপজেলা

আত্রাই উপজেলা (নওগাঁ জেলা)  আয়তন: ২৮৪.৪০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩২´ থেকে ২৪°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৯´ থেকে ৮৯°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রানীনগর ও মান্দা উপজেলা, দক্ষিণে নাটোর সদর, পূর্বে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা, পশ্চিমে বাগমারা উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৯৩২৫৬; পুরুষ ৯৬১২৯, মহিলা ৯৭১২৭। মুসলমান ১৭৫২১৩, হিন্দু ১৭৯৯৪, খ্রিস্টান ৭, বৌদ্ধ ১ এবং অন্যান্য ৪১।

জলাশয় আত্রাই ও নাগর নদী এবং পাকার বিল, চান্দের বিল ও কাকলাবন বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন আত্রাই থানা গঠিত হয় ১৯২৬ সালে। উক্ত থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮৩ সালের ১ আগস্ট।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৪৫ ২০০ ১৩২০২ ১৮০০৫৪ ৬৭৯ ৫৯.৫ ৪৪.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৫৫ ১৩২০২ ২০১৬ ৫৯.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আহসানগঞ্জ ১০ ১২২৮৯ ১২২১২ ১২১৯২ ৪৩.৪
কালিকাপুর ৫২ ৭০২৮ ১০৬০৫ ১১০৩১ ৪০.৫
পঞ্চুপুর ৭৩ ৭১০৯ ১৪২১০ ১৪৩০১ ৫০.০
বিশা ৩১ ১০৫৪২ ১২৭৭৮ ১৩১২২ ৪৭.১
ভাওপাড়া ২১ ৮৯৬৪ ১২৩৭৭ ১২২০৮ ৪৮.৩
মানিয়ারি ৬৩ ১২১১৯ ১২২২৬ ১২২৯৪ ৪৫.৩
সাহাগোলা ৮৪ ৫৭৭৩ ১১০২৫ ১১০১০ ৪৩.৬
হাটকালুপাড়া ৪২ ৬৪৫৮ ১০৬৯৬ ১০৯৬৯ ৪২.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মহাদিঘি মসজিদ, কাজীপাড়া মসজিদ, মিরপুর মসজিদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি (পতিসর), বাঁকা গ্রামের তাজিয়া।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বান্দাইখাড়া গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। পাকবাহিনী এ গ্রামের অনেক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এছাড়াও নিরীহ গ্রামবাসিদের নির্বিচারে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা তারানগর, ঘাউল্যা নামক স্থানে পাকবাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীর ৯টি নৌকা ডুবিয়ে দেয়। পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের আক্রমণে এ এলাকার অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলার সাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশনের নিকট ও বান্দাইখাড়া নদীর পাড়ে ২টি গণকবর আছে।

বিস্তারিত দেখুন আত্রাই উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.৪%; পুরুষ ৪৯.৯%, মহিলা ৪১.০%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মোল্লা আজাদ মেমোরিয়াল কলেজ (১৯৬৮), ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), কালিগ্রাম রবীন্দ্রনাথ ইনিস্টিটিউট (১৯৩৭), আহসানউল্লাহ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১), কান্দাইখাড়া  উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী আহতসুর, আত্রাই।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১০৬, লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ২, নাট্যদল ৩, খেলার মাঠ ৬৩, যাত্রাদল ২।

পর্যটন স্থান  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি (পতিসর)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৩.২০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩৩%, ব্যবসা ১১.১৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯৬%, চাকরি ৩.৪২%, নির্মাণ ০.৭৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৯% এবং অন্যান্য ৬.৫৩%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, নীল, আউশ ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি তাল, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৩ কিমি; কাঁচারাস্তা ১৫ কিমি; আধা-পাকারাস্তা ২০৮ কিমি; রেলপথ ১২ কিমি; নৌপথ ১০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, আইস ফ্যাক্টরি প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, স্বর্ণশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, নকশি কাঁথা প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১২, মেলা ১। আহসানগঞ্জ হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, গম, সরিষা, মাদুর।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি উপজেলা পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪২.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.২%, ট্যাপ ০.৮% এবং অন্যান্য ৩.০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৩.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৭.১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৯.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ক্লিনিক ২, কমিউনিটি ক্লিনিক ১০।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯৮ সালের বন্যায় বাঁধ ভেঙ্গে এ উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও আশা, ব্রাক, প্রশিকা, কারিতাস, উজ্জীবন। [মোখলেছুর রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আত্রাই উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।