আড়াইহাজার উপজেলা

আড়াইহাজার উপজেলা (নারায়ণগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৮১.০৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪০´ থেকে ২৩°৫৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৫´ থেকে ৯০°৪৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নরসিংদী সদর উপজেলা, দক্ষিণে কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলা, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা, পশ্চিমে রূপগঞ্জ এবং সোনারগাঁও উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৭৬৫৫০; পুরুষ ১৮৮৩২৪, মহিলা ১৮৮২২৬। মুসলমান ৩৬৩৭৩৩, হিন্দু ১২৭৯৬, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ১৩ এবং অন্যান্য ৭।

জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনাব্রহ্মপুত্র

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯২১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১২ ১৮৪ ৩২২ ১৪৪২৩ ৩৬২১২৭ ২০৮০ ৫৬.৬ ৪০.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.৫১ ১৪৪২৩ ১৯২১ ৫৬.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আড়াইহাজার ২৩ ১৯৬৭ ১২৮৯৮ ১২৬৯৫ ৪৭.৮
উচিতপুর ৯৪ ২৪১৭ ৯৯৯০ ১০৩৪৪ ৩৩.৬
কালাপাহাড়িয়া ৫৫ ৮৫৫৭ ১৩৩৩৭ ১৪৩৪৮ ২৩.০
খাগকান্দা ৬৩ ৩১৭৬ ১১৮২৬ ১২৯৭৪ ৩৬.৩
দুপতারা ৩১ ৪১৩২ ১৯৩৪৪ ১৮১৫১ ৫১.৫
ফতেহপুর ৩৯ ১৭৫২ ১০৫৫৬ ১০২৭৮ ৩৬.৪
বিশনন্দী ১৫ ৪৪১১ ১৮১৮০ ১৮২৪১ ২৮.৮
ব্রাহ্মন্দি ২৩ ৪০৩৩ ২৪৫৭০ ২৪৪২৯ ৫২.৩
মাহমুদপুর ৭১ ২৩৮৯ ১৩৭৬৬ ১৩৭৩৫ ২৯.৯
সাতগ্রাম ৮৭ ৪৮৫১ ২১১২৪ ২০৬০৭ ৪৭.২
সাদাসর্দি ৭৯ ২৮২৯ ২০৪১৬ ১৯১৯৯ ৪৬.৩
হাইজাদি ৪৭ ৪২৩২ ১২৩১৭ ১৩২২৫ ৩৮.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ১০৮ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন (সাদাসর্দি), হযরত গরীবুল্লাহ শাহ (রঃ) ও জঙ্গলী শাহর (রঃ) মাযার (হাইজাদি), রঙ্গীন কাঁচের দুর্গা মন্দির, জমিদার বীরেন্দ্র রায় চৌধুরীর বসতবাড়ি, ১০০ ফুট উঁচু দিঘি পাড়ের মঠ (আড়াইহাজার); এক গম্বুজ বিশিষ্ট জামে মসজিদ (উচিতপুর)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে আড়াইহাজার ছিল ২নং সেক্টরের অধীন। ৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে দরগাঁও সেতু ধ্বংস করে। ৮ আগস্ট তাঁরা ঢাকার পাচরুখি-ঢাকা সড়ক সেতু ধ্বংস করে এবং ২৮ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা আড়াইহাজার এলাকা থেকে রাইফেলসহ দু’জন রাজাকারকে আটক করে। ৩০ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা আড়াইহাজার থানা আক্রমণ করে এবং অস্ত্রলুট করে থানার দারোগাসহ পাক সমর্থকদের হত্যা করে। ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা কামরাঙ্গীচরে পাকবাহিনীর ঘাটি আক্রমণ করে ৫ জন পাকসেনা ও ৬ জন রাজাকারকে হত্যা করে। ১৬ অক্টোবর পাকবাহিনী নরসিংদী থানার আগলী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমণ করলে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নভেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে গোলাকান্দাইলের সাওঘাটে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াই হয় এবং ৭ নভেম্বর কমান্ডার এস এম শফির নেতৃত্বে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যত্র এক রক্তক্ষয়ী সম্মুখ লড়াইয়ে বেশ সংখ্যক পাকসেনা নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা কাজী মঞ্জুর হোসেন (মঞ্জুর) শহীদ হন। ১৪ নভেম্বর থেকে আড়াইহাজার থানা সম্পূর্ণভাবে মুক্তিদ্ধোদের আয়ত্তে চলে আসে।

বিস্তারিত দেখুন আড়াইহাজার উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৫৬, মন্দির ৭।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.০%; পুরুষ ৪২.১%, মহিলা ৩৯.৮%। কলেজ ৪, কারিগরী কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৪, মাদ্রাসা ৫১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আড়াইহাজার পাইলট স্কুল (১৮৯৭), সাতগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), দুপতারা সি সি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), সেন্ট্রাল করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), সাদাসর্দি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), গোপালদি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯)।

দর্শনীয় স্থান বিমান বন্দর (আড়াইহাজার), নোয়া সাধুর মাযার (শিবপুর), হযরত গরীবুল্লাহ শাহ (রঃ) মাযার, জঙ্গলী শাহ (রঃ) এর মাযার (হাইজাদি)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৮.৪৮%, অকৃষি শ্রমিক ৮.২৯%, ব্যবসা ২০.১৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৮৪%, চাকরি ৫.৯৬%, শিল্প ১৫.১৩%, নির্মাণ ১.৪০%, ধর্মীয় সেবা ০.২৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.৪৪% এবং অন্যান্য ১২.০১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫০.৮৯%, ভূমিহীন ৪৯.১১%। শহরে ৫৪.১১% এবং গ্রামে ৫০.৭৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, পেঁপে।

গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  এ উপজেলায় গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৯০ কিমি; নৌপথ ২৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন দুলকি, বজরা নৌকা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ, ওয়েল্ডিং প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৪। গোপালদি বাজার, আড়াইহাজার বাজার, আদর্শ বাজার (পূর্ব নাম কালীবাড়ি), কামরাঙ্গিরচর    বাজার, জাঙ্গলিয়া বাজার ও রাধানগর বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   থান কাপড়, শাড়ি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮৬.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৪%, ট্যাপ ১.০% এবং অন্যান্য ৩.৬%। এ উপজেলার নলকূপের পানি পরীক্ষা করে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে তবে তা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৫.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬৮.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ৭, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ১।

এনজিও ব্রাক, আশা, প্রশিকা, সিডা, সোফা।  [মোকাম্মেল হোসেন ভূঁইয়া]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আড়াইহাজার উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।