আটপাড়া উপজেলা

আটপাড়া উপজেলা (নেত্রকোনা জেলা)  আয়তন: ১৯২.৫০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৪´ থেকে ২৪°৫২´ উত্তর আক্ষাংশ এবং ৯০°৪৬´ থেকে ৯০°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বারহাট্টা উপজেলা, দক্ষিণে কেন্দুয়া ও মদন উপজেলা, পূর্বে মোহনগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে নেত্রকোনা সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৪৪৬২৪; পুরুষ ৭২১১৭; মহিলা ৭২৫০৭। মুসলিম ১৩১৩৩২, হিন্দু ১৩১৪৪, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ১৩ অন্যান্য ১৩৩।

জলাশয় প্রধান নদী: মগরা, বাউরি, ঘোড়াউতরা, ছিলা ও তুষাই; চর হাসদিয়া, আতশী, কামরইল বিল ও উখরো খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন আটপাড়া থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ২ জুলাই ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৪২ ১৭৭ ৯৬৮৭ ১৩৪৯৩৭ ৭৫১ ৪৭.৬ ৩৮.১
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.০৪ ৯৬৮৭ ১০৩১ ৪৭.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
তেলিগাতি ৮৩ ৬৩৫৯ ১১৮১৯ ১১৯৭৬ ৩৭.৬
দৌজ ২৩ ৬২৮৬ ৮২০২ ৮৩৩২ ৩৮.৮
বানিয়াজান ১১ ৬০৫০ ১০৬৫৭ ১০৭৮৭ ৪৭.৬
লোনেশ্বর ৩৫ ৮৫১২ ১০০০৪ ১০২৮৫ ৩৮.৮
সরমাইসা ৪৭ ৭০৯৪ ১১৬৬০ ১১৬২১ ৩৯.৯
সুখারি ৫৯ ৭২৭১ ১০৪৮৩ ১০২৩০ ৩৫.০
সোনাই ৭১ ৫৯৩৮ ৯২৯২ ৯২৭৬ ৩৮.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মুগল আমলে প্রতিষ্ঠিত তিন গম্বুজবিশিষ্ট স্বরমুশিয়া-হরিপুর মসজিদ, রামেশ্বরপুর রায় (জমিদার) বাড়ির দালান।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট মুক্তিবাহিনী আটপাড়া থানা আক্রমণ করে। এতে থানার ওসি ও কয়েকজন রাজাকার নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা থানার অস্ত্রগুলো হস্তগত করে। ৭ অক্টোবর আটপাড়া সদরে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক লড়াই হয়। উক্ত লড়াইয়ে ৩জন রাজাকার নিহত হয়।

বিস্তারিত দেখুন আটপাড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২১৮, মন্দির ৪৪, তীর্থস্থান ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়হার ৩৮.৭%; পুরুষ ৪০.৩%, মহিলা ৩৭.১%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:  মঙ্গলসিদ্ধ এমএস জুনিয়র স্কুল (১৯২৫), ধর্মরায় রামধন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), তেলিগাতি বিএনএইচকে একাডেমি (১৯০৫), বানিয়াজান সিটি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), গোপালাশ্রম ভৈরবচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৬.৪৬%, অকৃষি শ্রমিক ২.০৪%, ব্যবসা ৮.১০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.১৭%, চাকরি ৩.৬৯%, শিল্প ০.১৭%, নির্মাণ ০.৯৪%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৭% এবং অন্যান্য ৬.৬১%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান,  তিসি, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, তামাক, মিষ্টি আলু, অড়হর, খেসারি, মুগ, মাষকলাই।

প্রধান ফলফলাদি  আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, লটকন, কলা, পেঁপে, জলপাই, সুপারি, জাম্বুরা, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১২, হাঁস-মুরগি ২৫৫, গবাদিপশু ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫৫.৫ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ৮.৩৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৩২.৭১ কিমি; নৌপথ ৩১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা স’ মিল, চিড়াকল, তেলকারখানা, মসলার কল, আইসক্রিম কারখানা, চালকল উল্লেখযোগ্য।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, ওয়েল্ডিং, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশ ও কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার ও মেলা তেলিগাতি, নাজিরগঞ্জ, ব্রজের বাজার, অভয়পাশা, লালচান্দের বাজার, লোনেশ্বর বাজার, বাউশা ও কোনাপাড়া হাট এবং অষ্টমী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, পান, কলা, মাছ, চামড়া, লটকন, জলপাই, জাম্বুরা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৭.১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.০%, ট্যাপ ০.২%, অন্যান্য উৎস ৯.৮%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানি পরীক্ষা করে পানিতে সহনীয় মাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪১.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন এবং ৪৮.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১০.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ২, রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল ১।

এনজিও  আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা।  [বিভূতি রঞ্জন রায়]

তথ্যসূত্র    আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আটপাড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন  ২০০৭।