আজাদ, আবদুস সামাদ

আজাদ, আবদুস সামাদ (১৯২৬-২০০৫)  রাজনীতিক। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার ভুরাখালি গ্রামে ১৯২৬ সালের ১৫ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। পিতা মোহাম্মদ শরিয়তুল্লাহ। আবদুস সামাদ সুনামগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৮ সালে সিলেটের মুরারী চাঁদ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

আবদুস সামাদ আজাদ

আবদুস সামাদ আজাদের রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটে ১৯৪০ সালে সুনামগঞ্জ মহকুমা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে। ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে কয়েকবার তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৫০-এর দশকের শুরুতে তিনি কিছুদিনের জন্য স্কুল শিক্ষক ও বীমা নির্বাহী হিসেবে চাকরি করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি কারাবরণ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন। তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ১৯৫৪ সালে সুনামগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আদর্শগত কারণে দলটি বিভক্ত হলে ১৯৫৭ সালের জুলাই মাসে তিনি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে কৃষক শ্রমিক পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক আইন জারি হলে তাঁকে আটক করা হয়। চার বছর জেলে থাকার পর তিনি মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালে সংঘঠিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধকালে তাঁকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়।

১৯৬৯ সালে আবদুস সামাদ আজাদ আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। এর পরপরই তিনি দলের সিলেট জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিলেট থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আবদুস সামাদ আজাদ মুজিবনগরস্থ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। শুরুতে তিনি মুজিবনগর সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং ভ্রাম্যমান রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে তিনি মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারে তাঁকে কৃষি মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়।

১৯৭৩ সালের সংসদীয় নির্বাচনে আবদুস সামাদ আজাদ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দু’টি আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে পুনরায় সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি কারান্তরিণ থাকেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন। অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদকালে (২০০১-২০০৬) তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং পানি সম্পদ বিষয়ক দুটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।

[হেলাল উদ্দিন আহমেদ]