আইন ও সালিশ কেন্দ্র

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)  মানবাধিকার ও আইন সহায়তাকারী বেসরকারি সংগঠন। প্রতিষ্ঠা ১৯৮৬। শুরুতে আসক ঢাকা শহরের সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র নারী, কর্মজীবী শিশু এবং শ্রমিকদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করে। এরপর গত পঁচিশ বছরে প্রতিষ্ঠানটি মানবাধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অনেক কর্মকৌশল রচনা করে। এই কর্মকৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি,  সালিশ ও মামলার মাধ্যমে আইনি সহায়তা প্রদান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও মানবাধিকার গবেষণা, জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলার সাহায্যে আইন ও নীতি সংস্কারের প্রয়াস এবং গণমাধ্যম ও নিজস্ব প্রকাশনার মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য প্রদান। বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার, বিচারের অপেক্ষায় কারাবাস, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতনের ঘটনা, বস্তি উচ্ছেদ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, পুলিশী নির্যাতন ও রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ও রাষ্ট্রের উপর চাপ সৃষ্টি করা আসক-এর কাজ। এছাড়া আসক মানবাধিকার লঙ্ঘন-এর শিকার ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদান করে থাকে।

সমানাধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার এবং লিঙ্গভিত্তিক সমতার ভিত্তিতে  আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই আসক-এর লক্ষ্য। আসক-এর কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই এবং আসক সবসময় দলনিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখে।

আসক জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলা এবং প্রচারাভিযানের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে গুরুত্ব অর্জন করেছে। তৃণমূল পর্যায়ে অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ১০টি জেলার মোট ৪০টি ইউনিয়নে মানবাধিকার ও সামাজিক এবং লিঙ্গভিত্তিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে আসক। ঢাকায় আইনি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি আসক ২০০৮-এর এপ্রিল মাস থেকে চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং হবিগঞ্জ জেলা এবং ২০০৯ সালের মে মাস থেকে টাঙ্গাইল, সাতক্ষীরা ও রাজশাহী জেলায় আইনি সহায়তা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে। ৬টি স্থানীয়  এনজিও-এর সাথে যৌথভাবে এই আইনি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আসক ২০০৯-এর জানুয়ারি থেকে দরিদ্র মানুষের জন্য বগুড়া জেলায় আউটরিচ প্রোগ্রাম শুরু করে। সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী আসক-এর তদন্ত কার্যক্রম বিস্তৃত। এই কার্যক্রমের জন্য ১২টি জেলায় মানবাধিকার কর্মীদের ফোরাম গঠিত হয়েছে এবং আসক কর্তৃক যথাযথভাবে ফোরামের সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ১২টি পূর্ণকালীন এবং ২১টি খন্ডকালীন ড্রপ-ইন সেন্টার-এর মাধ্যমে শ্রমজীবী শিশুদের মৌলিক শিক্ষা প্রদান করে আসক। শিশুদের অভিভাবক, নিয়োগদাতা এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আসক শিশুদের অধিকার রক্ষা করে ও শিশুনির্যাতন প্রতিরোধ করে।

আসক জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি, হিউম্যান রাইটস ফোরাম অন ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ, সিটিজেন্স ইনিশিয়েটিভ ফর সিইডিএডব্লিউ, সিটিজেন্স ইনিশিয়েটিভ অন ডমেস্টিক ভায়োলেন্স, কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর ও বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম-এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আসক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেরও সক্রিয় সদস্য। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ফোরাম হলো ফোরাম এশিয়া, এশিয়া প্যাসিফিক ফোরাম ফর উইমেন ল এন্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিডব্লিউএলডি), ইন্টারন্যাশনাল উইমেনস রাইটস একশন ওয়াচ-এশিয়া প্যাসিফিক (আইডব্লিউআরএডব্লিউ-এপি), উইমেন লিভিং আন্ডার মুসলিম লজ (ডব্লিউএলইউএমএল) ও  সাউথ এশিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস (এসএএফএইচআর)।

আসক ১৯৯৮ সালের ৩১ জুলাই জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কর্তৃক বিশেষ পরামর্শক সংস্থায় উন্নীত হয়। বিশেষ পরামর্শক সংস্থা হিসেবে আসক জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল, জাতিসংঘের চুক্তি কমিটি, জাতিসংঘের বিশেষ কার্যক্রম ইত্যাদির পক্ষে কাজ করে। এছাড়া আসক  অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ,  কমনওয়েলথ  সচিবালয়, জার্মানীস্থ বাংলাদেশ ফোরাম ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষা করে।

বিভিন্ন দাতাসংস্থা আসক-এর প্রাথমিক  অর্থসংস্থান-এর উৎস। এছাড়া প্রশিক্ষণ এবং প্রকাশনার মাধ্যমেও আসক-এর আয় হয়। নয়জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কর্তৃক গঠিত আসক-এর বর্তমান সদস্য ৩২। বর্তমানে আসক-এ রয়েছে ২৩১ জন কর্মী, যাদের মধ্যে ১৭১ জন নারী এবং ৬০ জন পুরুষ।  [সাঈদ আহমদ]