অবসরভাতা

অবসরভাতা  কতিপয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে একজন সরকারি কর্মচারীর অবসর গ্রহণের পর প্রাপ্য অর্থ। কর্মচারীর ইচ্ছানুযায়ী এ ভাতা নির্ধারিত হারে মাসিক ভিত্তিতে কিংবা থোক অঙ্কে এককালীন পরিশোধ করা যায়। এককালীন ভাতা গ্রহণ করলে কর্মচারীকে মাসিক অবসরভাতা প্রাপ্তির দাবি ত্যাগ করতে হয়। সরকারি কর্মচারী (অবসর) আইন ১৯৭৪ অনুসারে কোনো কোনো স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসহ সকল সরকারি সংস্থার কর্মচারীকে ৫৯ বছর বয়স পূর্ণ হলে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করতে হয়। এ আইনে অবসরগ্রহণের বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। ব্যতিক্রমের আওতায় রয়েছে প্রতিরক্ষা সার্ভিসের সদস্য; সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মচারী; বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠিত কমিশন, কমিটি বা বোর্ডে নিয়োজিত ব্যক্তি; নির্বাচন বা মনোনয়নের মাধ্যমে নিয়োজিত ব্যক্তি; কিংবা ওই সকল কর্মচারী যাদের কার্যকাল অন্য কোনো আইনে বা আইনের অধীনে নির্ধারিত। কিন্তু কোনো কর্মচারী ৫৯ বছর বয়সে উপনীত হোন বা না-হোন, তার চাকুরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে এ একই আইনে তাকে অবসর প্রদানের ক্ষমতা সরকারকে দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে, চাকুরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে একজন কর্মচারীও স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের দাবি করতে পারেন। উপরিউক্ত যেকোন ব্যবস্থায় একজন কর্মচারী অবসরভাতা পাওয়ার অধিকারী।

পারিবারিক অবসরভাতা নামে আরেক ধরনের অবসরভাতা রয়েছে। অবসরগ্রহণের পূর্বে কোনো সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার অবসরভাতা গ্রহণের জন্য তিনি পূর্বেই পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন। মৃত কর্মচারীর স্ত্রী বা অন্য কোনো বৈধ উত্তরাধিকারী না থাকলে কর্তৃপক্ষ ওই কর্মচারীর অবসরভাতা গ্রহণের যোগ্য উত্তরাধিকারী নির্বাচনের অধিকার রাখে। অবসরভাতা প্রাপকের মৃত্যুর পর তার জীবিত স্ত্রী যতদিন পুনর্বিবাহ না করেন ততদিন পর্যন্ত আজীবন অবসরভাতা পাওয়ার অধিকারী। অবশ্য তিনি অবসরভাতা সমর্পণ করে এককালীন থোক অর্থ গ্রহণ করতে পারেন না।

অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত হারে অবসরভাতা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত ‘পেনশন সারণি’ নামে পরিচিত এ ভাতার হার সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর চাকরির মোট মেয়াদের ভিত্তিতে ভিন্নতর হয়ে থাকে। এতে ১৬টি ভিন্ন ভিন্ন হার রয়েছে। চাকুরির মেয়াদ ১০ বছর পূর্ণ হলে অবসরভাতার প্রাপ্যতা শুরু হয় এবং ২৫ বছর চাকুরিকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে প্রাপ্য অবসরভাতার শতকরা হার ১০ বছর চাকুরির মেয়াদ পূর্তির ক্ষেত্রে ৩২% থেকে ২৫ বছর মেয়াদ পূর্তির ক্ষেত্রে ৮০% পর্যন্ত।

অবসরভাতা মঞ্জুরি একসময় ছিল এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ১৯৯৪ সালে প্রক্রিয়াটি অনেকখানি সহজ করা হয়। কিন্তু তারপরও আবেদনপত্রের সঙ্গে বহুবিধ কাগজপত্রের সংযোগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। নন-গেজেটেড কর্মচারীদের প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে হালনাগাদ করাসহ দুই প্রস্ত সার্ভিসবুক সংরক্ষণ করতে হয়। পক্ষান্তরে, গেজেটেড কর্মচারীদের বেলায়ও চাকুরিতে স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি, পদাবনতি বা আরোপিত অন্যান্য দন্ড, ছুটি, অবসর গ্রহণ বা মৃত্যু ইত্যাদি তথ্য সম্বলিত বিস্তারিত সার্ভিস রেকর্ড নিয়মিত সংরক্ষণ করতে হয়।

অবসরভাতার আবেদন প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৫ মাসের মধ্যে মঞ্জুরি কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট সার্ভিস রেকর্ড/সার্ভিস বুক হালনাগাদ করতে হয়। অনুরূপভাবে অবসরগ্রহণকারী কর্মকর্তার নিকট সরকারের কোনো পাওনা নেই এ মর্মে ‘না-দাবি’ সার্টিফিকেট ৩ মাসের মধ্যে সংগ্রহ করতে হয়। এরপর অবসর ভাতা প্রদানের আদেশ ইস্যু করে হিসাব নিরীক্ষা কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। ‘না-দাবি’ প্রত্যয়নপত্র প্রাপ্তি বিলম্বিত হলে যে অঙ্কের অবসরভাতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পরিশোধযোগ্য তার অনধিক শতকরা ৮০ ভাগ প্রদানের জন্য সাময়িক অবসরভাতা আদেশ ইস্যু করার সুযোগ রয়েছে।

পরিশেষে, একজন সরকারি কর্মচারীকে ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হলে তিনিও খেসারতি অবসরভাতা পাওয়ার অধিকারী হন। তবে এ ভাতার পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির আদেশ প্রয়োজন হয়।  [এ.এম.এম শওকত আলী]