হোসেনপুর উপজেলা

হোসেনপুর উপজেলা (কিশোরগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১২১.২৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৩´ থেকে ২৪°৩১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৪´ থেকে ৯০°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নান্দাইল উপজেলা, দক্ষিণে পাকুন্দিয়া ও গফরগাঁও উপজেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা, পশ্চিমে গফরগাঁও উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৬১৯৭৯; পুরুষ ৮২২০১, মহিলা ৭৯৭৭৮। মুসলিম ১৫৮৪৪৮, হিন্দু ৩৩৮২, বৌদ্ধ ৪২ এবং অন্যান্য ১০৭।

জলাশয় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও নরসুন্দা নদী এবং পানান বিল, গণিয়ামারা বিল, হানজাইল বিল ও সুকনি বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন হোসেনপুর থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৭৩ ৯৮ ১৫৫৭৩ ১৪৬৪০৬ ১৩৩৫ ৪৫.৪ ৩৫.৬
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.৫১ ১৫৫৭৩ ৩৪৫৩ ৪৫.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আড়াইবাড়িয়া ১৩ ৩৭৮২ ১২৭৯৫ ১২৪৫৫ ৪৫.৬৮
গোবিন্দপুর ২৭ ৫৯১৯ ১৮২৫৯ ১৮০৬৫ ৩৩.৪২
জিনারি ৪০ ৫৭৭৭ ১২৩৬২ ১১৬৫৬ ২৮.৯৮
পুমদি ৫৪ ৪৭৫৯ ১২২২৬ ১২০৬৫ ৪১.৭৫
শাহেদল ৬৭ ৩০৪০ ৯৫৩০ ৯০৯৯ ৪৭.৩১
সিধলা ৮১ ৬৫৪৫ ১৭০২৯ ১৬৪৩৮ ২৮.৪৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ পিতলগঞ্জ নীলকুঠি (১৮০০), ভাঙ্গাটিয়া জমিদারবাড়ির মন্দির (১৮০০), কুলেশ্বরীবাড়ি কালীমন্দির (সপ্তদশ শতক)।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে হোসেনপুর থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ৩৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং এ অভিযানে প্রচুর গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। ১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হোসেনপুর থানা এলাকায় একটি সেতু বিস্ফোরণের সাহায্যে উড়িয়ে দেয় এবং রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে রাইফেলসহ ১৪ জন রাজাকারকে বন্দি করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১ (কুড়িঘাট বধ্যভূমি, হোসেনপুর থানার সামনে); স্মৃতিফলক ১ (শহীদ মঞ্জু গেট)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান   মসজিদ ২০৯, মন্দির ২, মাযার ১০, আখড়া ২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৬.৬%; পুরুষ ৩৮.৬%, মহিলা ৩৪.৬। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১, মাদ্রাসা ১৩। উলে­খযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), হোসেনপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), হোসেনপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৬), পিপলাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১), মাধখলা ফাজিল (স্নাতক) মাদ্রাসা (১৯২৯)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৫.৮১%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৬৭%, শিল্প ০.২৫%, ব্যবসা ১১.৯৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৮৯%, চাকরি ৪.৮১%, নির্মাণ ০.৯৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১% এবং অন্যান্য ৮.৪৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.৮৭%, ভূমিহীন ৩৯.১৩%। শহরে ৪৩.৭৪% এবং গ্রামে ৬২.৬৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, বেগুন, পটল, সরিষা, আখ, পান, ভূট্টা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  স্থানীয় জাতের ধান, কলাই।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, আতা, নারিকেল, তাল, জামরুল, বেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১, গবাদিপশু ১০, হাঁস-মুরগি ১৪, হ্যাচারি ২০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৫.৮০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৯৫.৩১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটামিল, রাইসমিল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৭, মেলা ৫। হোসেনপুর বাজার, হাজীপুর কাচারী বাজার, পিতলগঞ্জ বাজার, রামপুর বাজার, হারেঞ্জা বাজার ও চরপুমদী বাজার উলে­খযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট, গম, আলু, আখের গুড়, কলা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৬.৫২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৯১%, পুকুর ১.২৮%, ট্যাপ ০.৩৪% এবং অন্যান্য ৩.৪৭%। এ উপজেলার ৪.৯৯% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৪.০৩% (গ্রামে ১২.৪২% ও শহরে ২৯.৭৪%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫২.৫৩% (গ্রামে ৫২.৭৪% ও শহরে ৫০.৪৬%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৩৩.৪৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা।  [আজিজুর রহমান ভূঞা বাবুল]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; হোসেনপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।