হাইড্রোকার্বন আধার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১৬, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

হাইড্রোকার্বন আধার (Hydrocarbon Reservoir)  জীবাশ্ম তেল ও গ্যাস সঞ্চয়কারী শিলা। হাইড্রোকার্বন আধার হতে হলে শিলার দুটি বৈশিষ্ট্য সচ্ছিদ্রতা (porosity) ও প্রবেশ্যতা (permeability) অত্যাবশ্যকীয়। বিশ্বে সবচেয়ে সাধারণ হাইড্রোকার্বন আধার হচ্ছে বেলেপাথর ও চুনাপাথর। এর পরের স্থান ডোলোমাইট ও কংগে­ামারেটের। তবে খুবই বিরল ক্ষেত্রে পলিপাথর, কর্দম শিলা বা আগ্নেয় শিলায় হাইড্রোকার্বন মজুত পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে গ্যাস ও তেলের সকল আধার বেলেপাথর। এসব বেলেপাথর প­ায়োসিন থেকে মায়োসিন যুগের (২০ লক্ষ থেকে ২ কোটি ৪০ লক্ষ বছর পূর্বে) ভূবন ও বোকাবিল শিলাস্তরের কর্দম শিলা ও পলিপাথরে অন্তঃস্তরায়িত হয়ে বিরাজ করছে। বাংলাদেশে ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় ১,০০০ মিটার থেকে ৩,৫০০ মিটার গভীরে বেলেপাথরের হাইড্রোকার্বন আধার বিদ্যমান। অধিকাংশ বেলেপাথর আধার মাঝারি থেকে সূক্ষ্ম দানাবিশিষ্ট, উত্তম থেকে মাঝারি বাছাইকৃত (sorted) এবং সাধারণত কর্দম (agrillaceous) সিমেন্ট কম। এই গ্যাস আধারে সচ্ছিদ্রতার পরিমাণ প্রায় ১৫% থেকে ২৫%, প্রবেশ্যতা ১০০ মিলিডারসি থেকে ৫০০ মিলিডারসি এবং গ্যাস সম্পৃক্তির (gas saturation) পরিমাণ ৬০% থেকে ৭০%। মজুতকৃত এসব গ্যাস মানগতভাবে উত্তম থেকে অতি উত্তম শ্রেণীর। বেলেপাথর আধারসমূহ বদ্বীপীয় এবং অগভীর সামুদ্রিক পরিবেশে গঠিত হয়।

বাংলাদেশে এ যাবৎ আবিষ্কৃত ২২টি গ্যাসক্ষেত্রের (২০০০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত) মধ্যে বেলেপাথর আধারসমূহের ধারণকৃত শুদ্ধ স্থানিক গ্যাস মজুতের (original in place gas reserve) পরিমাণ প্রায় ২৬ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট, যার মধ্যে প্রায় ১৬ টিসিএফ উত্তোলনযোগ্য বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩.৫ টিসিএফ গ্যাস ব্যবহার হয়ে গেছে। বাদবাকি উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুদের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ১২.৫ টিসিএফ। এই সব মজুত প্রমাণিত ও সম্ভাব্য শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। কোন বিশেষ গ্যাসক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুতের পরিমাণ মাত্র ০.০১৫ টিসিএফ (বেগমগঞ্জ) থেকে ঊর্ধ্বে ২৫ টিসিএফ (কৈলাশটিলা) হতে পারে। অধিকাংশ গ্যাসক্ষেত্রে বহুস্তরবিশিষ্ট বেলেপাথর আধার বিদ্যামান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনকি ১০টি (তিতাস) গ্যাস আধার স্তর রয়েছে।

ভূ-বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস বগুড়া সোপান এবং দেশের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের হিঞ্জ অঞ্চলের চুনাপাথরে হাইড্রোকার্বন আধার প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট চুনাপাথরের স্তরে পরীক্ষামূলক খননকূপে তেল ও গ্যাসের প্রমাণ এই ধারণাকে পোক্ত করেছে। অবশ্য এই স্তরে পরীক্ষামূলক খনন এখনও যথেষ্ট নয়, ফলে এই সম্ভাবনার ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।  [বদরুল ইমাম]