হরিপুর উপজেলা

হরিপুর উপজেলা (ঠাকুরগাঁও জেলা)  আয়তন: ২০১.০৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪৭´ থেকে ২৬°০০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০৫´ থেকে ৮৮°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও রানীশংকাইল উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পূর্বে রানীশংকাইল উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।

জনসংখ্যা ১২৮২৮৯; পুরুষ ৬৫৮২৬, মহিলা ৬২৪৬৩। মুসলিম ১১৬১৫০, হিন্দু ১১৫৯৭, বৌদ্ধ ১৬০ এবং অন্যান্য ৩৮২। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, মুসহোর প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় নাগর, কুলিক ও গড়াই নদী এবং গড়গড়িয়া বিল উলে­খযোগ্য।

প্রশাসন হরিপুর থানা গঠিত হয় ১৯১৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৭৫ ৭২ ৬০১৬ ১২২২৭৩ ৬৩৮ ৩৯.১ ৩৩.৮
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.১১ ৬০১৬ ১৪৬৪ ৩৯.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আমগাঁও ১৩ ৮৫৬৫ ১২২৫৭ ১১৬৬৩ ২৯.৩১
গেদুড়া ৬৭ ৯২৬৯ ১২৪৬৭ ১১৯৫২ ৩০.৩১
ডাঙ্গীপাড়া ৫৪ ৭৪৪৮ ১১০০১ ১০৪১১ ৩৬.৮৬
বকুয়া ২৭ ৯১৪১ ১০০৫১ ৯৬২১ ২৮.৪৭
ভাতুরিয়া ৪০ ৭৬৩১ ৯১৭৫ ৮৬৭৯ ৪২.২৭
হরিপুর ৮১ ৭৬৩২ ১০৮৭৫ ১০১৩৭ ৩৮.৬৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মেদনীসাগর জামে মসজিদ, গেদুড়া জামে মসজিদ, ভাতুরিয়ার গড়, বীর গড়, ভবানীপুরের গড় (ভাতুরিয়া), হরিপুরের জমিদার বাড়ি, শাহ মখদুমের (রঃ) মাযার (বহরমপুর)।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হরিপুর অঞ্চল ছিল ৭ নং সেক্টরের অধীন। এ সময় হরিপুরে কামার পুকুরে, ভাতুরিয়ায়, ডাঙ্গীপাড়ায় ও গেদুড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকসেনাদের লড়াই সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলার মোঃ ইসমাইল, ডাঃ ইসমাইল, ডাঃ আজিজসহ ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ২৩ জন আহত হন। ১ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৩৩১, মন্দির ২৩, গির্জা ২, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: হরিপুর জামে মসজিদ, বালিহারা জামে মসজিদ, জাদুরাণী হারামাই জামে মসজিদ, হাগড়ী মসজিদ (খলড়া), মেদনি সাগর শাহী মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৪.১%; পুরুষ ৪০.৩%, মহিলা ২৭.৫%। কলেজ ২০, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৪, মাদ্রাসা ২০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মোসলেম উদ্দীন মহাবিদ্যালয় (১৯৮৪), হরিপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৬), যাদুরানী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), কাঁঠালডাঙ্গী হাইস্কুল (১৯৬৭), বীরগড় মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২০), মিনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৩), কাঁঠালডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩০), হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৫৩), বীরগড় দারুল উলম শরীফিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৪৯)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অঙ্গীকার (অনিয়মিত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ১, ক্লাব ৩০, মহিলা সংগঠন ৯৬, খেলার মাঠ ১০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৮৩.০৩%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০৮%, ব্যবসা ৬.০৯%, চাকরি ২.৭৩%, নির্মাণ ০.৫৯%, ধর্মীয় সেবা ০.০৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৫% এবং অন্যান্য ৪.৩৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.১২%, ভূমিহীন ৪১.৮৮%। শহরে ৪৯.১৬% এবং গ্রামে ৫৮.৫৭% পরিবারের  কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভুট্টা, আলু, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  কাউন, খেসারি, ছোলা, আউশ ধান, অড়হর, মাষকলাই।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, তরমুজ, সুপারি, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৮, হাঁস-মুরগি ৪৮, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৩.৮০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫০০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল ১, তেলমিল ৩, হাসকিং মিল ৮৫, স’মিল ৩, কারিগরি কারখানা ২, ওয়েল্ডিং কারখানা ৮।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ৪, লৌহশিল্প ২২, মৃৎশিল্প ১০, কাঠের কাজ ৩০, বাঁশের কাজ ২০, সেলাই কাজ ৩৫, মাদুরের কাজ ২০০।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫, মেলা ৫। যাদুরাণী হাট, কালীগঞ্জ হাট, কাঁঠালডাঙ্গী হাট, ধীরগঞ্জ হাট, চৌরঙ্গী হাট ও মশানগাঁও হাট এবং রাঘব মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, চাল, গম, শাকসবজি, তরমুজ, আম, লিচু, মাদুর।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭.৩৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৬১%, পুকুর ০.০৭%, ট্যাপ ০.২৪% এবং অন্যান্য ৩.০৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪.২% (গ্রামে ৩.৩০% এবং শহরে ১২.৬৮%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৯.২২% (গ্রামে ২৭.৭১% এবং শহরে ৪৩.৫৯%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৬৬.৫৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আরডিআরএস, ইএসডিও। [মো. আবদুল গফ্ফার]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; হরিপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।