হক, শামসুল

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

হক, শামসুল (১৯২৩-১৯৬৫)  রাজনীতিক। তিনি ১৯২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার মাইঠান (টেউরিয়া) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম দবিরউদ্দিন মিয়া এবং মাতা শরীফুননেসা। শামসুল হক সন্তোষ জাহ্নবী হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক, করটিয়া সাদত কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে আইএ এবং ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম মুসলিম লীগের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের জন্য ঢাকায় একটি আঞ্চলিক অফিস খোলেন। শামসুল হককে এর দপ্তর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাকিস্তান আন্দোলনে পুরোভাগের যুবকর্মীরা ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব বাংলা কর্মী সম্মেলনে মিলিত হয়ে গণতান্ত্রিক যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। শামসুল হক এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত কলকাতায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় যুব সম্মেলনে শামসুল হক গণতান্ত্রিক যুবলীগের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। শামসুল হকের উত্থান ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল টাঙ্গাইলের উপ-নির্বাচনে। দক্ষিণ টাঙ্গাইলের (নাগরপুর, মির্জাপুর, বাসাইল থানা) নির্বাচনী এলাকায় তিনি ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের প্রার্থী হিসেবে সরকার দলীয় (মুসলিম লীগ) প্রার্থী করটিয়ার জমিদার খুররম খান পন্নীকে পরাজিত করেন।

১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে মওলানা ভাসানী দলের সভাপতি এবং শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ইতঃপূর্বে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলনে বিবেচনার জন্য শামসুল হক তাঁর বক্তব্য মূলবাদী নামে একটি মুদ্রিত পুস্তিকায় লিপিবদ্ধ করে সম্মেলনে পাঠ করেন। এ মূলবাদীই পরে সামান্য পরিবর্তিত অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম খসড়া ম্যানিফেস্টো রূপে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়।

১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ সন্ধ্যায় শামসুল হক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ঢাকায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী মুসলিম লীগ অফিসে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের সভায় ২১ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচী উপলক্ষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শামসুল হক সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্তটি ১১-৪ ভোটে পাস হয়। পরদিন পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় ছাত্র সমাবেশে পরিষদের ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্ত জানিয়ে শামসুল হক বক্তব্য রাখেন। এ সিদ্ধান্ত ছাত্ররা মেনে নেয় নি। উপরন্তু ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্তে তারা অটল থাকে। শামসুল হক ছাত্রদের ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অনমনীয় সিদ্ধান্তের সাথে অবশেষে ঐকমত্য পোষণ করেন। ১৯৫২ সালের ১৯ মার্চ সরকার শামসুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠায়। তিনি জেল থেকে মুক্তি পান অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায়।

পৃথিবীতে আল্লাহর রাজ্য প্রতিষ্ঠাকল্পে শামসুল হক ‘খেলাফত পার্টি’ নামে একটি দল গঠন করেন। শেষ জীবনে লোকচক্ষুর অন্তরালে তাঁর দিন অতিবাহিত হয়। শামসুল হক একজন লেখকও ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থ বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম। ১৯৬৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [খান মাহবুব]