স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:৫০, ২৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবসায়ে নিয়োজিত একটি বিদেশি ব্যাংক। ১৯০৫ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। সময়ের ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে এ দেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-এর কার্যক্রমের শত বর্ষপূর্তি হয়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক পিএলসি রয়্যাল চার্টার ১৮৫৩-এর অধীনে নিবন্ধিত একটি ব্রিটিশ ব্যাংক এবং এর প্রধান কার্যালয় লন্ডনে অবস্থিত। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক পিএলসি ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে এএনজেড গ্রুপ-এর নিকট থেকে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের বিশ্বব্যাপী সমুদয় ব্যাংক ব্যবসায় ক্রয় করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক পিএলসি হিসেবে এর পুনঃনামকরণ করে। গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক পিএলসি একটি বহুজাতিক বাণিজ্যিক ও মার্চেন্ট ব্যাংকিং কোম্পানি। এটি ব্রিটিশ কোম্পানি আইন ১৮৬২-এর অধীনে ২৩ মার্চ ১৮৬৬ সালে লন্ডনে নিবন্ধিত হয়। ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নামে ঢাকার সদরঘাট ও চট্টগ্রামে ২টি শাখা খোলার মাধ্যমে গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক পিএলসি ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে ব্যাংকটির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর ন্যাশনাল অ্যান্ড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক নাম নিয়ে ব্যাংকটি এ দেশে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে। এএনজেড গ্রুপ (অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড) ১৯৮৫ সালে গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক পিএলসি-র বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং ব্যবসায় ক্রয় করে নেয় এবং ১৯৮৯ সালে ব্যাংকটির মালিকানা এএনজেড ব্যাংকের নিকট হস্তান্তর করে। নতুন মালিক (ANZ Group) ন্যাশনাল অ্যান্ড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের নাম দেয় ‘এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক পিএলসি’।

মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান (মিলিয়ন টাকায়)
বিবরণ ২০০৪ ২০০৫ ২০০৬ ২০০৭ ২০০৮ ২০০৯
অনুমোদিত মূলধন - - - - - -
পরিশোধিত মূলধন ৮৭০ ১৮০৭ ১৮৩৮ ১৮২৯ ১৮৩৭ ২০১৪
রিজার্ভ - - - - - -
আমানত ৪৯৩৩৪ ৫৭২৩২ ৬৪৪৩৩ ৭৩৫২৮ ৮৩০২৮ ৯২০৫২
(ক) তলবি আমানত ২১৯৮২ ২৭৬১৯ ৩০৪৪৩ ৩৬৪৫০ ৩৪৭১৯ ৪১৮০৫
(খ) মেয়াদি আমানত ২৭৩৫২ ২৯৬১৩ ৩৩৯৯০ ৩৭০৭৮ ৪৮৩০৯ ৫০২৪৭
ঋণ ও অগ্রিম ৩৮৬৪৮ ৪১৫০১ ৪৯৪৮৬ ৫৯৪৮৬ ৭১১৫২ ৭৫৫২১
বিনিয়োগ ১৪৩১৩ ১৬৭৮১ ১২৭১২ ১২২৭৭ ১৬৪১০ ২০৮৬০
মোট পরিসম্পদ ৬৬৩৯৩ ৭৪০০২ ৮১৫১২ ৯৬৯৩২ ১০৯১০৩ ১২৩৯৫০
মোট আয় ৫৫১৯ ৬৪৭৮ ৮৪০০ ৯৬১৪ ১১০১৬ ১১৮৯০
মোট ব্যয় ১৪৯০ ১৯৮৭ ২২৯৮ ২৭৪৬ ৩৩২২ ৩৪৩৯
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা পরিচালনা ১৮৪২৩৬ ১৮৩৪৩৬ ২১৩৫৭৪ ২৭০১৪৩ ২৫৯২৬৮ ২০৫৮৬
(ক) রপ্তানি ৫৮৩২৮ ৪০২৮০ ৬২৩১১ ৭৭৫৮৯ ৪৩৮৯৭ ৫৮৮৫০
(খ) আমদানি ৪৬৯৪১ ৫৬৬১২ ৪৩৫৪৭ ৪৪৭১০ ৫৭৬৮৭ ১৮৯৩০
(গ) রেমিট্যান্স ৭৮৯৬৭ ৮৬৫৪৪ ১০৭৭১৬ ১৪৭৮৪৪ ১৫৭৬৮৪ ১২৮২০৬
মোট জনশক্তি (সংখ্যায়) ৬২৮ ৭৪১ ৯৩২ ১০২০ ১১২৭ ১০৭৮
(ক) কর্মকর্তা ৬২২ ৭৩৫ ৯২৭ ১০১৫ ১১২২ ১০৭৩
(খ) কর্মচারী
বিদেশি প্রতিসঙ্গী ব্যাংক (সংখ্যায়) - - - - - -
শাখা (সংখ্যায়) - ১২৯৯ ১৪২৭ ১৪২৮ ১৭৭৭ ১৭২৭
(ক) দেশে ১৮ ২৫ ২৬ ২৭ ২৭ ২৭
(খ) বিদেশে - ১২৭৪ ১৪০১ ১৪০১ ১৭৫০ ১৭০০
কৃষিখাতে
(ক) ঋণ বিতরণ ৩৬৪ ৬১৮ ১৮৬ ৮৪ ৬৩৫ ৮১৮
(খ) আদায় ২৪৫ ২৮০ ৩৬৬ ১৮০ ১৭৮ ১৪৭
শিল্পখাতে
(ক) ঋণ বিতরণ ১২৪৮৯ ১০৪৮৪ ৮৭৩২ ৯১২৪ ৮৮৮৮ ১০০২১
(খ) আদায় ৯৬৪৬ ১০০৬০ ৯৭৩২ ৭৫৫৪ ৭৯৯৫ ৮১৩৪
খাত ভিত্তিক  ঋণের স্থিতি
(ক) কৃষি ও মৎস্য ১০৯ ৫৪২ ৩৬৩ ২৬৮ ৫২৮ ১১২৬
(খ) শিল্প ৪৪৪৯ ১৮২৫৯ ২০০৬৬ ২১৪১৫ ২৯২৯৫ ২৮৮৫১
(গ) ব্যবসা-বাণিজ্য ২৫৪০ ৪০২৮ ৩৩৫৭ ৩২৮২ ২১৭১ ৬১০৪
(ঘ) দারিদ্র্য বিমোচন - - - - - -

উৎস অর্থবিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী, ২০০৪-০৫ থেকে ২০০৯-১০।

৩১ ডিসেম্বর ২০০২ তারিখে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের মধ্যে একত্রীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ২০০৫ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকের বাণিজ্যিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে। বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের ৩ লাখের বেশি গ্রাহককে পার্সোনাল, কর্পোরেট, ট্রেজারিসহ অন্যান্য ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করছে। বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-এর রয়েছে সুবিস্তৃত ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ এবং বগুড়ায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-এর রয়েছে সর্বমোট ২৭টি শাখা ও বুথ এবং ৫০টি এটিএম সেন্টার।

নতুন নতুন ব্যাংকিং সেবা ও পণ্য সম্ভারের জন্য ব্যাংকিং সেক্টরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করেছে। বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকই সর্বপ্রথম এটিএম, ক্রেডিট কার্ড, অটো-লোন, বিজনেস ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসসহ আরও নানারকম ব্যাংকিং সেবা প্রদান শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকই সর্বপ্রথম সাভার ইপিজেড-এ অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট চালু করে। গ্রাহকদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-এর রয়েছে ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, বিলস্-পে সেন্টার, ই-স্টেটমেন্টস্, এসএমএস ব্যাংকিং, স্বান্ধ্যকালীন এবং স্যাটারডে ব্যাংকিং সুবিধা। ২০০৪ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক চালু করেছে ইসলামিক ব্যাংকিং এবং এসএমই ব্যাংকিং সার্ভিসেস। ২০০৭ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-এর ইসলামিক ব্যাংকিং সাদিক নামে নতুনভাবে চালু করা হয়, যেখানে রয়েছে শরীয়াহ্ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং সেবা। ইসলামিক ব্যাংকিং সেবার মধ্যে রয়েছে সাদিক অটোলোন, সাদিক ক্রেডিট কার্ড, সাদিক পার্সোনাল ফাইন্যান্স এবং সাদিক অ্যাকাউন্ট।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। জাতীয় স্কুল ক্রিকেট, স্কুল দাবা এবং স্কুল কাবাডিসহ আন্তর্জাতিক ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য জাতীয় ম্যারাথন দলকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড স্পন্সর করেছে। ব্যাংক ঢাকাস্থ ব্রিটিশ কাউন্সিলের ‘ইয়াং লার্নার সেন্টার’ কার্যক্রমে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের জন্য ফান্ড সংগ্রহে সার্বিক সহযোগিতা করেছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-এর Seeing is Believing কার্যক্রমের আওতায় ফান্ড সংগ্রহের কার্যক্রম চলছে। সংগৃহীত এ ফান্ড বাংলাদেশের ঢাকা শহরসহ স্বল্পোন্নত দেশের ২০টি শহরের ২০ মিলিয়ন লোককে সমন্বিত চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি নতুন প্রকল্প। এর আওতায় ২০০৮ সালে ৩য় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিট অ্যাওয়ার্ড পায় রহিম আফরোজ বাংলাদেশ ও ভায়ালাটেক্স গ্রুপ। এছাড়াও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ‘সেলিব্রেটিং লাইফ’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকের সাথে যৌথভাবে একটি ফিল্ম, ফটোগ্রাফি ও লিরিকস প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।  [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]