সোনাগাজী উপজেলা

সোনাগাজী উপজেলা (ফেনী জেলা)  আয়তন: ২৩৫.০৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৪´ থেকে ২২°৫৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৯´ থেকে ৯১°২৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফেনী সদর উপজেলা, দক্ষিণে কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) উপজেলা, পূর্বে মিরসরাই উপজেলা, পশ্চিমে কোম্পানীগঞ্জ ও দাগনভূঁইয়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৩৫২২৯; পুরুষ ১১৫৬৮০, মহিলা ১১৯৫৪৯। মুসলিম ২১৮১৮৩, হিন্দু ১৬৮৮৪, বৌদ্ধ ১২, খ্রিস্টান ১৩১ এবং অন্যান্য ১৯। এ উপজেলায় ত্রিপুরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: ফেনী ও ছোট ফেনী।

প্রশাসন সোনাগাজী থানা গঠিত হয় ১৯২০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৯৪ ৯৫ ১২২৪৯ ২২২৯৮০ ১০০১ ৫৩.২ ৪৭.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.৯৭ ১২২৪৯ ২৪৬৫ ৫৩.১৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আমিরাবাদ ৯ ১০২৪১ ১৪২৩৪ ১৪১৫৫ ৪৭.২১
চর চান্দিয়া ২৮ ১০৬৪২ ১৯৪৯৬ ১৯৮৯৬ ৪৪.৭৩
চর দরবেশ ৩৮ ১০১৬১ ১৪০৬৪ ১৪০৭৩ ৪৩.৪৫
চর মজলিশপুর ৪৭ ৩৯৮১ ১১৯৮৭ ১৩০০০ ৪৭.১৩
নবাবপুর ৭৬ ২৭০৪ ৮৯৫৫ ৯১৮৪ ৫৯.২৩
বাগাদানা ১৯ ৩০৫৬ ১০৬২৮ ১১৬৯৩ ৪৩.২৮
মঙ্গলকান্দি ৫৭ ৩১৫৬ ৯২৫০ ৯৯৫৪ ৫৪.৪৭
মাটিগঞ্জ ৬৬ ৩৩৬২ ১১৯৫৭ ১২৫৫১ ৫৩.২২
সোনাগাজী ৮৫ ১০৭৮৬ ১৫১০৯ ১৫০৪৩ ৪৫.৭৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই নবাবপুরে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক লড়াইয়ে পাক-কমান্ডার গুল মোহাম্মদ নিহত হয়। ১৫ আগষ্ট সাতবাড়িয়া পুলের পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এতে বিক্ষুব্ধ পাকসেনারা বক্স আলী, সুজাপুর দাসগ্রামে ৫ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় ও লুণ্ঠন করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ৮।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২৭৬, মন্দির ৩।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৯৯%; পুরুষ ৫১.৩৬%, মহিলা ৪৪.৮৪%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, কিন্ডার গার্টেন ৮, মাদ্রাসা ১০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সোনাগাজী সরকারি কলেজ (১৯৭২), মঙ্গলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), নবাবপুর হাইস্কুল (১৯২৩), আমিরাবাদ বি সি লাহা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), সোনাগাজী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বক্তারমুন্সী ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১০), সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৮), সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়ির মাদ্রাসা (১৯৩০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী উপকূল (বর্তমান সাময়িকী)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, মহিলা সংগঠন ১৪, খেলার মাঠ ২০, ক্লাব ৩০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৬.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৩৫%, শিল্প ১.৫৮%, ব্যবসা ১২.৬৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৪০%, চাকরি ১৫.৬২%, নির্মাণ ২.১১%, ধর্মীয় সেবা ০.৫৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১৪.০৪% এবং অন্যান্য ৯.২৭%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, ডাল, সরিষা, বেগুন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  পাট, তিল, তিসি, অড়হর, আউশ ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৭, দুগ্ধ খামার ২১, হাঁস-মুরগি ১০, কৃত্রিম প্রজনন  কেন্দ্র ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২০ কিমি, কাঁচারাস্তা ১২০ কিমি; নৌপথ ২২ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিড়ি ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা,

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, কাঠের কাজ, সেলাই কাজ, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৭, মেলা ২। বক্তার মুন্সী হাট, কাজীর হাট, কুটির হাট, আমির উদ্দিন মুন্সীর হাট, মঙ্গলকান্দি হাট, সোনাগাজী বাজার, ভোর বাজার, ওলামা বাজার ও মতিগঞ্জ বাজার এবং সোনাগাজী ও দাসেরহাটের মেলা উলে­খযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  কলা, পেঁপে, বেগুন, মাছ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৪.০২% (শহরে ৫১.৫৭% ও গ্রামে ২২.৫৪%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৪.৬৪%, পুকুর ৫.৮১%, ট্যাপ ০.৮২% এবং অন্যান্য ৮.৭৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৯.৩১% (গ্রামে ৫৮.৪০% ও শহরে ৭৬.২৪%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.৭৮% (গ্রামে ২৬.২০% ও শহরে ১৮.১১%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১৪.৯১% (গ্রামে ৫.৬৬% ও শহরে ১৫.৪১%) পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, ক্লিনিক ২।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৭৬, ১৯৬১, ১৯৭০, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এ উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায় এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, সেবা।  [মহিউদ্দীন হোসেন মহীন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সোনাগাজী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।