সৈকত বালি ভারি মণিক

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৭:১৬, ২৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সৈকত বালি ভারি মণিক (Beach Sand Heavy Mineral)  বর্তমান বা অতীতের কোন সমুদ্র সৈকত বা কোন উপকূলরেখা বরাবর ভারি মণিকসমূহের মজুদ, যেমন জিরকন, ইলমেনাইট, রুটাইল ইত্যাদি। ১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান ভূতাত্ত্বিক জরিপ (Geological Survey of Pakistan) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় মোনাজাইটের মতো তেজস্ক্রিয় মণিকের অনুসন্ধান শুরু করে এবং একই বছর কয়েকটি মূল্যবান ভারি মণিকের মজুত চিহ্নিত করে। তৎকালীন আনবিক শক্তি কমিশনের ভূতত্ত্ববিদগণ ১৯৬৭ সালে আরও অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে দেখতে পান যে সৈকত বালিতে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারি মণিক রয়েছে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ক্রমানুসারী জরিপের পর প্রমাণিত হয় যে, সমগ্র উপকূল বরাবর বিশেষ করে কক্সবাজার থেকে বদর মোকাম ও মহেশখালি, কুতুবদিয়া ও মাতারবাড়ি দ্বীপসমূহে ভারি মণিকের সম্ভাবনাময় মজুত বিদ্যমান রয়েছে। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে পে­সার অবক্ষেপে ভারি মণিক মজুতের নমুনা সংগ্রহ, বাছাই ও বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা নির্ধারণের জন্য অস্ট্রেলীয় সরকারের সহযোগিতায় কক্সবাজারের কলাতলিতে একটি পাইলট প্রকল্প স্থাপন করা হয়। এই স্থাপনায় ভারি মণিক পৃথক করতে অস্ট্রেলিয়ার খনিজ উন্নয়ন গবেষণাগারের ব্যবহূত একটি ফ্লো শিট গ্রহণ করা হয়। ১৯৮৫ সাল নাগাদ সৈকত বালি ভারি মণিক হয় আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে মানচিত্রায়ণের জন্য প্রায় ৫৫০ কিমি দীর্ঘ বাংলাদেশের উপকূলরেখা জরিপ করা হয়। ফলাফলে দেখা যায় এই সব মজুত প্রধানত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার সমুদ্র সৈকত বরাবর কেন্দ্রীভূত রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলভাগ বরাবর এ পর্যন্ত পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে কয়েকটি ভারি মণিক পে­সারের সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। আপাতত ১৭টি পে­সার মজুত পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৫টি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সমুদ্র সৈকত ও অদূরবর্তী উপকূলীয় দ্বীপসমূহে অবস্থিত। আরও সুনির্দিষ্টভাবে কক্সবাজার-টেকনাফ সাগর সৈকতে ৭টি (কক্সবাজার, ইনানী, শিলখালি, টেকনাফ, সাবরাং ও বদর মোকাম), মহেশখালি দ্বীপে ৭টি এবং মাতারবাড়ি, কুতুবদিয়া, নিঝুমদ্বীপ ও কুয়াকাটায় ১টি করে।

এই ১৭টি অবক্ষেপে মোট মজুতকৃত বালির পরিমাণ ২ কোটি ৫০ লক্ষ টন এবং ধারণকৃত ভারি মণিকের পরিমাণ ৪৪ লক্ষ টন (আপেক্ষিক গুরুত্ব ২.৯)। এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারি মণিকের সংখ্যা মাত্র ৮টি, যেমন: ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, জিরকন, রুটাইল, গারনেট, লিউককসেন, কায়ানাইট ও মোনাজাইট। উলি­খিত ১৭টি অবক্ষেপে এই আট ধরনের ভারি মণিকের মোট মজুতের পরিমাণ ১৭ লক্ষ ৬১ হাজার টন। সাগর সৈকতের ভারি মণিকের শিল্পে ব্যবহারের একটি চিত্র নিচে দেয়া হলো:

জিরকন  মোট প্রাপ্ত জিরকনের প্রায় ৬০% ঢালাই কাজে ব্যবহূত হয়। আর ১৫% ব্যবহূত হয় জিরকোনিয়াম ধাতু, মিশ্রধাতু ও রাসায়নিক উৎপাদনে। তাপরোধকারী বস্ত্ত ও কাচ প্রস্ত্ততে জিরকনের বহুল ব্যবহার আছে।

রুটাইল  রঞ্জক শিল্পের কাচামাল হিসেবে এর ব্যবহার রয়েছে। প্রায় ৬৬% রুটাইল এই শিল্পে ব্যবহূত হয়, আর ১৮% ব্যবহূত হয় রডের আস্তরণ ঝালাইয়ের কাজে।

ইলমেনাইট  TiO2-এর অন্যতম উৎস এই ভারি মণিক শ্বেতরঞ্জক হিসেবে প্রধানত ব্যবহূত হয়। বড় আস্তরণে ইলমেনাইট ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়।

ম্যাগনেটাইট  পিগ লৌহের উৎস হিসেবে প্রধানত এর ব্যবহার। ঢালাই লোহা, পেটালোহা, নমনীয় লোহা ও বিভিন্ন ধরনের সাধারণ ও বিশেষ স্টিল উৎপাদনের প্রধান উপাদান এই পিগ লৌহ বা অশোধিত লোহা।

মোনাজাইট  বিরল তেজস্ক্রিয় মণিক ও থোরিয়ামের একটি উৎস।

লিউককসেন  TiO2পদার্থের বর্তমান চাহিদার কারণে লিউককসেন রুটাইলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে।

কায়ানাইট  অ্যালুমিনিয়ামের উৎস হিসেবে বিবেচিত। তাপরোধক বস্ত্ত ও ঢালাই কার্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]