সুন্দরগঞ্জ উপজেলা

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা (গাইবান্ধা জেলা)  আয়তন: ৪২৬.৫২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°২৪´ থেকে ২৫°৩৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৪´ থেকে ৮৯°৪৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পীরগাছা, উলিপুর উপজেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা সদর ও সাদুল্লাপুর উপজেলা, পূর্বে চিলমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলা, পশ্চিমে পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও সাদুল্লাপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৯৮৫৮৮; পুরুষ ২০২২৭০, মহিলা ১৯৬৩১৮। মুসলিম ৩৬৩৬০৭, হিন্দু ৩৪৪১৬, বৌদ্ধ ৬৫, খ্রিস্টান ৭৯, এবং অন্যান্য ৪২১।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট। কালসার বিল, কুমলিয়া বিল, নলবাড়ি ও হলদিডোবা বিল উলে­খযোগ্য।

প্রশাসন সুন্দরগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৭৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫ ১১০ ১৮৩ ৩২৭৪২ ৩৬৫৮৪৬ ৯৩৫ ৩৯.৭ ৩০.৪
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৫.৯৬ ৩২৭৪২ ১২৬১ ৩৯.৭১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাঞ্চিবাড়ি ৫০ ৫১২১ ১৬৪১২ ১৫৮৫৫ ৩২.৭৬
কাপাসিয়া ৫৬ ১৪৭৯২ ৪৮১২ ৪৪১৮ ২১.৪৯
চন্ডিপুর ১৮ ৫৩৩৮ ১৪১১০ ১৩৮৬৫ ৩০.৯৭
ছাপরহাটি ২৫ ৬৫৯৩ ১৬৪৫৭ ১৫৮২৭ ২৭.৫০
তারাপুর ৯৪ ৭৪৪২ ১৩২৫৬ ১৩০২১ ৩৩.৮৬
দহবন্দ ৩১ ৫৩২১ ১৭৩৫৬ ১৬৩১৪ ৩৯.৬২
ধোপাডাঙ্গা ৩৭ ৮১৮২ ১২৫২১ ১১৬৯২ ৩৪.৬৬
বামনডাঙ্গা ০৬ ৮৬৪৫ ২০৩০০ ১৯৪৭৫ ৩৫.৭১
বেলকা ১২ ৫৯৪১ ৮৯১৮ ৮৬২১ ২৪.২৭
রামজীবন ৬৩ ৫৫০৮ ১৩০০৫ ১২৮১৭ ২৫.৬১
শান্তিরাম ৬৯ ৫০৭৪ ১৩৬১২ ১৩৫৫০ ৩৩.২০
শ্রীপুর ৮৮ ৭৪৪২ ১৭৩৩৩ ১৭২৯২ ২৭.১৫
সর্বানন্দ ৭৫ ৬২৫৮ ১৪৯৭৫ ১৫১৯৫ ২৮.৭১
সোনারায় ৮২ ৪৮০১ ১০৯১৮ ১০৭৫৬ ৩৪.৮৬
হরিপুর ৪৪ ৮৯৩৬ ৮২৮৫ ৭৬২০ ২১.৫৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, ধর্মপুর ভালুয়া বাড়ি জামে মসজিদ, বামনডাঙ্গা শিবমন্দির, রামজীবনের কুড়ার মঠ।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী এ উপজেলায় নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজ চালায়। এ সময় পাকবাহিনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন চালিয়ে প্রায় ১৮ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ১৯৭১ সালে শবেবরাত রাতে মঠের হাটে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা ভোর রাতে মটের হাট ব্রীজ ধ্বংস করে জেলা সদরের সাথে সড়ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১, বধ্যভূমি ১, শহীদ মিনার ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৪৯০, মন্দির ৬৯, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ধর্মপুর ডাকুয়াবাড়ি জামে মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩১.১%; পুরুষ ৩৬.২%, মহিলা ২৬.০%। কলেজ ১৫, কারিগরি কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫২, কারিগরি বিদ্যালয় ৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২২০, কমিউনিটি স্কুল ৬, এনজিও পরিচালিত স্কুল ২১৮, কিন্ডার গার্টেন ৮, মাদ্রাসা ১১৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮০), খামার মনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১০), হরিপুর বি এস এম বালিকা বিদ্যালয় (১৯১৪), বেলকা এম.সি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), বামনডাঙ্গা এম এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), কাটগড়া দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অবলুপ্ত: সুন্দরগঞ্জ বার্তা, স্পন্দন।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, সিনেমা হল ৪, নাট্যদল ১৪, ক্লাব ৩৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৫.২৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩৫%, শিল্প ০.৩৮%, ব্যবসা ৮.৭৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯২%, চাকরি ৩.৮৭%, নির্মাণ ০.৫৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৪% এবং অন্যান্য ৬.২২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৮৩%, ভূমিহীন ৪৩.১৭%। শহরে ৫৫.২১% এবং গ্রামে ৫৬.৯৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, পিঁয়াজ, রসুন, তামাক, অাঁখ, সরিষা, ভূট্টা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তামাক, আউশ ধান, মিষ্টি আলু, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৭৫, গবাদিপশু ৭, হাঁস-মুরগি ২৫, হ্যাচারি ২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯০.৬৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭৬৬.৪২ কিমি; রেলপথ ১১ কিমি; নৌপথ ৮ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫৫, মেলা ৭। মীরগঞ্জ হাট, পাঁচপীর হাট, শোভাগঞ্জ হাট, কাঠগড়া হাট, বেলকা হাট, সুন্দরগঞ্জ বাজার ও বামনডাঙ্গা বাজার এবং গাজীর মেলা, চড়কের মেলা, শোভাগঞ্জের মেলা ও শিববাড়ী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  পাট, পিঁয়াজ, রসুন।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১০.৩৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৭.৭১%, ট্যাপ ০.২৭%, পুকুর ০.৩১% এবং অন্যান্য ১১.৭১%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১০.৮৫% (শহরে ১৮.৮৪% এবং গ্রামে ১০.১৪%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৮.৮১% (শহরে ৩৩.২৬% এবং গ্রামে ২৮.৪২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৬০.৩৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, কমিউনিটি ক্লিনিক ২৬, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৩।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ২০০২ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির প্রভাবে অধিকাংশ ইউনিয়নের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০০৫ সালের ২০ মার্চ টর্নেডোর আঘাতে ২৩ জন লোকের মৃত্যু এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, কেয়ার, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, সোনার বাংলা।  [মো. মোতাহার হোসেন বসুনিয়া]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।