সাপুড়ে

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৮, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
সাপুড়ে

সাপুড়ে একটি পেশাজীবী সম্প্রদায়, যারা বাঁশিসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে এবং নানা উপায়ে সাপের খেলা দেখায়। সাপ অবশ্য বায়ুবাহিত শব্দ-তরঙ্গ অনুভব করে না, ফলে এতে সাপের সাড়ার প্রশ্ন আসে না। সাপের খেলা দেখানো কারও সার্বক্ষণিক এবং কারও খন্ডকালীন পেশা। এটি ঐতিহ্যগতভাবে পারিবারিক পেশা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হস্তান্তরিত হয়। এতে আছে কঠোর গোপনীয়তা। বেদে বা বাংলাদেশী যাযাবর সম্প্রদায়ভুক্তরা সাপুড়ে নামে পরিচিত। পানিতে ভাসমান নৌকাতেই এদের জীবন কাটে। কোন কোন পরিবারে কেবল বেদেনীরাই সাপের খেলা দেখায়। বেদে-বেদেনীরা কাঠের বাক্সে, চটের ব্যাগে, বাঁশের ঝুড়িতে ও মাটির পাত্রে নানা ধরনের সাপ রাখে এবং সাপ্তাহিক হাট-বাজারে খেলা দেখানোর জন্য সেগুলি নিয়ে যায় অথবা কোন শহরের বাজারে মাসের পর মাস অবস্থান করে খেলা দেখায়, তারপর হয়তো অন্য স্থানের দিকে রওনা দেয় যেখানে সবসময় প্রচুর লোকসমাগম থাকে।

বেশির ভাগ সাপুড়েই সাপ ধরে না, পেশাদার সাপ সংগ্রাহকদের কাছ থেকে সাপ কিনে নেয়। তবে সাধারণভাবে প্রায় সব সাপুড়েই নিজেদের সংগ্রহে বেশ কিছু সাপ জমা রাখে। সাধারণত গোখরা ও অজগরই এদের বেশি পছন্দ, তবে নির্বিষ সাপও তারা রাখে। সাপুড়েদের গোখরা পছন্দের কারণ গোখরা মাথার ফণা খানিকটা মাটির উপরে শূন্যে তুলে স্থির রাখতে বা দোলাতে এবং মেলে ধরতে পারে, যাতে থাকে দৃষ্টিনন্দন নকশা। সাপুড়ে বাঁশি বাজানো ও ‘মন্ত্র’ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথা, কনুই ও হাঁটু দোলায় এবং গোখরাও সঙ্গে সঙ্গে শূন্যে ফণা দোলাতে থাকে। তবে গোখরা বাঁশির সুরে নয়, সাপুড়ের দোলায়মান মাথা, হাঁটু ও কনুইয়ের দিকে দৃষ্টি স্থির করার লক্ষ্যেই দুলতে থাকে। সাপুড়ে অনেক সময় নিজের অঙ্গ না দুলিয়ে কৌশলে সাপ রাখার বাক্সের ঢাকনা বা পাত্রকে সাপের সামনে দোলায়। সাপুড়ে আসলে সাপকে উত্যক্ত করে, যাতে সাপ ছোবল মারে। সাপ যখন কোন বস্ত্ততে দৃষ্টি স্থির করে তখন সে বস্ত্তটিকে আক্রমণ করতে যায়, নয়তো জোরে হিস হিস শব্দ করে।

অধিকাংশ সাপুড়ে সেসব সাপ নিয়েই খেলা দেখায় যেগুলির বিষদাঁত আগেই উপড়ানো হয়েছে। কাজেই বিষদাঁতহীন সাপের ছোবলে সাপুড়ের দেহে বিষক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে না। বিষদাঁতহীন সাপ তার স্বাভাবিক খাদ্য খেতে পারে না। বিষদাঁতের অভাবে সাপ বিষগ্রন্থি নিঃসৃত বিষের সাহায্যে শিকারকে অবশ করতে পারে না, তাতে হজমের গন্ডগোল ঘটে, ফলে সাপগুলি ৬ মাসের মধ্যে মারা যায়। সাপুড়েরা এজন্য কয়েক মাস পর পর সাপ সংগ্রহ করে। উলে­খযোগ্য যে, গোখরার উপড়ানো বিষদাঁতের পরের দাঁতগুলি বিষগ্রন্থির সংস্পর্শে আসে। ফলে এরূপ গোখরার কামড় সাপুড়েদের জন্য মারাত্মক হয়। অধিকাংশ সাপুড়েই শেষ পর্যন্ত এ ধরনের সাপের কামড়েই জীবন হারায়। কিছুসংখ্যক সাহসী ও পেশাদার সাপুড়ে বিষদাঁত না উপড়ানো বিষধর সাপ সংগ্রহে রাখে। এদের কেউ কেউ ‘মন্ত্রপড়া’ তাবিজ অথবা ভেষজ বিক্রি করে। লোকবিশ্বাস, শরীরে তাবিজ ধারণ করলে বা ঘরে সাপের ঔষধ রাখলে সাপে কাটে না।  [আলী রেজা খান]

আরও দেখুন গোখরা; বেদে; সর্পদংশন; সাপ