সমাজ কাঠামো

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৬, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সমাজ কাঠামো  সাধারণভাবে পুনরাবৃত্ত যেকোন সামাজিক আচরণ, অথবা আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সুশৃঙ্খল আন্তঃসম্পর্ক। বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং একটি সমাজের সদস্যদের মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সামাজিক ভূমিকার সমন্বয়ে একটি সমাজ কাঠামো সংগঠিত। যেকোন সমাজে সমাজ কাঠামোর বিশ্লেষণ ঐতিহাসিকভাবে নানাবিধ শর্তযুক্ত এবং অনুরূপভাবে বিন্যস্ত বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোও সেই আঙ্গিকে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

বিপুল সংখ্যক ছোট ও বড় নদীর সমন্বয়ে বাংলা মূলত একটি পাললিক ভূখন্ড। আদিপর্বে প্রতিষ্ঠিত একটি সুস্থির কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি বাংলার অধিবাসীদেরকে নিজের জীবনধারা সংগঠনে ও বিকাশে সহায়তা করে। অষ্টম শতকের শেষ পর্যায়ে বাংলার জনগণ একটি সমস্বত্ববান জাতিসত্তা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল, যাদের ছিল একটি স্বতন্ত্র ভাষা, সংস্কৃতি ও চরিত্র। অবশ্য জাতিতাত্ত্বিকভাবে বাংলায় লক্ষ্য করা যায় তিনটি প্রধান জাতির সমন্বয়ে মিশ্র জাতির বসবাস। এদের মধ্যে রয়েছে প্রকৃত অনার্য, দ্রাবিড় এবং আর্য।

উপমহাদেশে প্রাক্-আধুনিক সংস্কৃতি প্রধানত গ্রামভিত্তিতে সংগঠিত। প্রধানত ধর্মীয় নীতির ওপর ভিত্তি করে এর একটি কঠোর সমাজ কাঠামো ছিল এবং বর্ণভিত্তিক খাদ্য ও বর্ণভিত্তিক পেশাগত বিভাজন ছিল ব্রাহ্মণ এবং অ-ব্রাহ্মণদের মধ্যে, যেখানে অ-ব্রাহ্মণগণ বিভিন্ন বর্ণের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত মেলামেশার ফলে বিভিন্ন উপ-বর্ণের সমন্বয়ে সংগঠিত হতো। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, স্থানীয় ব্রাহ্মণগণ বেদ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল না এবং উত্তর ভারত থেকে ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণগণ এখানে ধর্মীয় পন্ডিত হিসেবে কাজ করতে অভিবাসিত হয়। অ-ব্রাহ্মণ উপবর্ণের লোকজন প্রধানত তিনটি বংশানুক্রমিক ভিত্তিতে বিভক্ত ছিল, যাদের মধ্যে আরও একচলি­শটির মতো পেশাভিত্তিক বর্ণগোষ্ঠী ছিল, যেমন চন্ডাল, স্বর্ণকার, তাঁতি প্রভৃতি। বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রসার মুসলমানদের বঙ্গ বিজয়ের ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রাখে। এই নতুন ধর্মবিশ্বাস পূর্ববাংলায় সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা অর্জন করে, সেখানে এর আগে ইসলামের সাথে কতিপয় ধর্মতাত্ত্বিক সাদৃশ্যসম্পন্ন বৌদ্ধধর্মের প্রচলন ছিল।

প্রাক্-ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার সমাজ কাঠামো ভারতের অন্যান্য অংশের তুলনায় নানা কারণে ভিন্ন ছিল। বাংলা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলার গ্রাম। ব্রিটিশ প্রশাসকগণ রাজস্ব আরোপ ও আদায়ের ক্ষেত্রে ভারতের সমাজ জীবনে গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। বাংলার পল্লী অঞ্চলের গ্রামসমাজ রাজস্ব প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য অংশের চেয়ে ঐতিহাসিকভাবেই ভিন্নতর ছিল। গ্রামসমাজ ছিল একটি কর্মমুখর প্রতিষ্ঠান, কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদন ছিল যার অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য এবং প্রধান লক্ষ্য ছিল স্থানীয় চাহিদা পূরণ। কিছু কিছু বড় শহরে প্রতিষ্ঠিত শিল্প সীমিত আকারে নগর জীবনের পত্তন করেছিল এবং নগর কেন্দ্রগুলি স্থানীয় বা প্রাদেশিক প্রশাসনের দপ্তর হিসেবে গণ্য হতো। ক্রমে বাংলায় বাণিজ্যের প্রসারের ফলে, এমনকি ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার পূর্বেই, গ্রামের চিরাচরিত চরিত্রে পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।

প্রাক্-ব্রিটিশ যুগে বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মব্যবস্থা পশ্চিম ইউরোপে বিদ্যমান সামন্তবাদের অনুরূপ ছিল না। সামন্তবাদের প্রধান নীতিসমূহ, যেমন ভূমিমালিক ও ভূমিদাসদের মধ্যে ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিভাগ-জাতীয় সম্পর্ক, ভূমির ওপর স্বত্বাধিকারসমূহ, ব্যক্তিগত সেনাবাহিনী গড়ে তোলা ইত্যাদির মতো ঘটনা এখানে ঘটেনি। বর্ণভেদ প্রথা, অন্তর্বিবাহ প্রথা এবং নবগঠিত নগরকেন্দ্র ধ্বংসের ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী শাসকদের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের মতো বহুবিধ সামাজিক-সাংস্কৃতিক ধারার কারণে ভারতবর্ষে একটি স্বতন্ত্র নাগরিক সমাজ কখনও গড়ে ওঠেনি। অধিকন্তু, যদিও ব্রিটিশ বা মুসলিম শাসনের বহু পূর্বেই একটি ধনিক শ্রেণি ভারতে বিদ্যমান ছিল, তারা ইউরোপীয় অর্থে কোন মধ্যবিত্ত শ্রেণি বা বুর্জোয়া শ্রেণি গড়ে তোলেনি। ভারতীয় বণিক শ্রেণি ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে কোন সামন্তবাদবিরোধী শক্তিও গড়ে তোলেনি এবং ফলত তারা ইউরোপীয় প্যাটার্নের অনুরূপ কোন বিরোধী পক্ষীয় ভূমিকা গ্রহণ করেনি বা করতে পারেনি। ম্যাক্স বেবার, বিশেষত রাজস্ব প্রশাসনে ভারতের এ ধরনের অসম রূপান্তরকে প্রিবেন্ডালাইজেশন বা যাজকের প্রাপ্যভূমির আয়কর বলে অভিহিত করেন। তাঁর মতে, প্রাচ্যের সাধারণ চিত্রের মতোই কৃষির খাজনা এবং একটি আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভূমির আয়ের অংশ থেকে ভারতে একটি বৈশিষ্ট্যজাত জমিদার শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছে। এই খাজনা ভোগকারীদের মধ্যে ছিল জমিদার, তালুকদার, অস্থায়ী রাজস্ব উত্তোলক, ঠিকাদার এবং জায়গিরদারগণ, যাদের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক-সামরিক দায়িত্ব পালনের জন্য অনুদান দেওয়া হতো, কিন্তু যাদেরকে জমির ওপর খাজনাস্বত্ব প্রদান করা হয়নি। কেবল ব্রিটিশ শাসনকালেই জমিদারগণ ভূমির স্বত্বভোগের অধিকার লাভের মাধ্যমে ভূমির মালিকে পরিণত হয়। অবশ্য, কেউ কেউ এই মতের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন এবং এ ধরনের ধারণা ভারতের প্রদেশের বেলায়, বিশেষত বাংলায়, সমানভাবে প্রযোজ্য নয় বলে মনে করেন। উদাহরণস্বরূপ, সমাজবিদ নাজমুল করিম বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থাকে ‘ওয়াদাদারাইজেশন’ বলে অভিহিত করেন। ওয়াদা মানে প্রতিশ্রুতি, যার মানে রক্ষক, অর্থাৎ ওয়াদার ‘রক্ষক’। মুগল শাসনকালে বাংলার কালেক্টরগণ এই মর্মে ওয়াদাবদ্ধ হতেন যে, তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখবেন, ব্যর্থ হলে সরকারি কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের ত্রাসমূলক, এমনকি অত্যাচারমূলক বিভিন্ন শাস্তি প্রয়োগ করতেন। অনেক উত্তরাধিকার স্বত্বের জমিদার এই কারণে রাজস্ব আদায়ে তাদের অধিকার হারিয়েছিলেন এবং সরকার তাদের স্থলে ওয়াদার (রাজস্ব ঠিকাদার) নিয়োগ করেছিলেন। নাজমুল করিম-এর মতে ভূমি থেকে খাজনা অর্জনের এই প্রক্রিয়া (prebendalisation) ভূমিঘটিত স্বার্থের সৃষ্টি করে, যদিও ভূমি থেকে খাজনাধারীদের জন্য তা ছিল সীমিত, পক্ষান্তরে ওয়াদাকারী প্রথা একটি ফটকাবাজারি শ্রেণীর উদ্ভব ঘটায়। মুগল শাসকগণ বাংলাকে বসবাসের উত্তম স্থান হিসেবে বিবেচনা না করে কেবল উপনিবেশ ও রাজস্ব সংগ্রহের একটি স্থান হিসেবে গণ্য করেন এবং অসহ্য গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য তারা একে ‘দোজখপুর’ হিসেবে অভিহিত করেন। ফলস্বরূপ, বাংলার কোন স্বাধীন ও অবাধ্য ভূমিমালিক শ্রেণির আবির্ভাব ঘটেনি এবং মুগলগণ স্থানীয় সংস্থাসমূহের ওপরই রাজস্ব আদায়ের ভার ছেড়ে দেন।

ওয়াদাকারিগণ কোন অভিজাত বংশানুক্রমিক ভূমিমালিক ছিল না। তারা ক্রোড়ী, সর্রফ, শাহুকার এবং মহাজনদের মতো ফটকাবাজারি ও ব্যবসায়ী শ্রেণিভুক্ত ছিল। তারা ফটকাবাজারিদের সহায়তা করার জন্য গড়ে-ওঠা টাকা ধার প্রদানকারী (দাদন) শ্রেণির ওপর নির্ভরশীল ছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বণিক এবং ফটকাবাজারিগণ এদের মধ্যে নিজেদের ছায়া খুঁজে পায়, তবে তাদের মধ্যে এদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ভয়-ভীতি ছিল। প্রাক্-ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার মুসলিম সমাজ সাধারণভাবে দুটি শ্রেণিতে বিভাজিত হয়- ভিনদেশি স্বভাবের উচ্চতর শ্রেণি এবং স্থানীয় সাধারণ জনতা। ভিনদেশি বৈশিষ্ট্যসম্পন্নরা ছিল ভূমিমালিক ব্যবসায়ী ও প্রশাসক গোষ্ঠী এবং সাধারণ জনতার মধ্যে ছিল নামে মাত্র অভিজাত শ্রেণির মুসলমান। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মুসলমান প্রশাসকরা কেরানি ও আমলা পদে নিয়োগের মাধ্যমে বাঙালি হিন্দু অভিজাত শ্রেণিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে একাধিপত্য বিস্তার, রাজস্ব আদায় ও ভূমি ব্যবস্থাপনার ওপর নিজেদের অধিকার দৃঢ় করার ক্ষেত্রে তাদের পেশাগত দক্ষতা অর্জন করা সহজ হয়।

মধ্যযুগীয় বাংলার সমাজ কাঠামোতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল অতিরিক্ত মহাজনি পুঁজিবাদের উদ্ভব, যা প্রায় সম্পূর্ণরূপেই ছিল হিন্দু ধনী কৃষক ও বণিক সম্প্রদায়ের হাতে, যাদের অতি সুদের কারবার চালাতে ধর্মীয়ভাবে বাধা ছিল না। সুদ গ্রহণে ইসলামি দর্শনের বিরোধিতা মুসলিম গোষ্ঠীদের মধ্যে পুঁজি গঠনে বাধার সৃষ্টি করে এবং তাদের বৃহৎ অংশই ছিল দরিদ্রতর শ্রেণিভুক্ত। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, এ সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাধা প্রাক্-ব্রিটিশ ও ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলিম সমাজে একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটাতে এবং বুর্জোয়া শ্রেণির সমন্বয়ে একটি আধুনিক বুদ্ধিজীবী শ্রেণি গড়ে তুলতে বিলম্ব ঘটায়।

অবশ্য ব্রিটিশ শাসন, বিশেষভাবে লর্ড কর্নওয়ালিস কর্তৃক ১৭৯৩ সালের স্থায়ী ভূমিস্বত্ব আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলার সামাজিক কাঠামোতে কতিপয় পরিবর্তন সাধিত হয়। ব্রিটিশশাসক কর্তৃক প্রবর্তিত নতুন ভূমি-সম্পর্ক বাংলার ক্ষুদ্র মুসলমান অভিজাত শ্রেণিসহ বাংলার বৃহত্তর কৃষক সমাজের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। প্রধানত হিন্দু বণিক এবং মহাজন গোষ্ঠীর মধ্য থেকে জমিদারদের একটি নতুন শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এ ঘটনা বিদ্যমান শাসক শ্রেণি ও উদীয়মান ভূমিমালিক শ্রেণির মধ্যে আরও বিভেদের সৃষ্টি করে। ঊনিশ শতকের শেষার্ধ নাগাদ বাংলার পূর্ব অঞ্চলের জেলাসমূহে মুসলমানগণ ছিল সংখ্যাগরিষ্ট অংশ। তাদের ভূমিসমেত বাংলার অধিকাংশ জমির মালিকানা উচ্চবর্ণের ধনী হিন্দুদের হাতে পুঞ্জীভূত হয়। স্থায়ী ভূমিস্বত্ব আইন উপ-সামন্তপ্রথা প্রক্রিয়ার সূচনা করে এবং পরবর্তীকালে উপরে জমিদার শ্রেণি ও নিচে বিরাটসংখ্যক ভূমি চাষিদের সমন্বয়ে ভূমি সম্পর্কের দিক থেকে রায়তি স্বত্বের বহুবিভাজন প্রক্রিয়ার উদ্ভব ঘটায়। উপ-সামন্ত ব্যবস্থা যা বাংলায় পত্তনিধারী হিসেবেও পরিচিত, জোতদার, গণতিদার, হাওলাদার, তালুকদার এবং ভূঁইয়াদের মতো মধ্যবর্তী খাজনা সংগ্রাহকের সৃষ্টি করে। এর সামগ্রিক প্রভাবে ভূমিস্বার্থসংশ্লিষ্ট বহুবিভক্ত একটি সমাজের আবির্ভাব ঘটে।

উনিশ শতকের পূর্ববাংলা ভদ্রলোক নামধারী একটি নতুন শহুরে শ্রেণির উদ্ভব ঘটায় যাতে প্রায় সামগ্রিকভাবে ধনিক হিন্দু শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ বর্ণহিন্দু, যথা ব্রাহ্মণ, কায়স্থ এবং বৈশ্যগণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর প্রায় অর্ধাংশ ছিল প্রজাদের পরিশোধিত খাজনা দ্বারা পরিচালিত জমিদার, এক চতুর্থাংশ ছিল আইনজীবী, চিকিৎসক ও ধর্মযাজকদের মতো পেশাজীবীরা এবং অবশিষ্টরা ছিল সরকারি অফিস বা জমিদার বা ব্যবসায়ীদের কেরানি শ্রেণি।

এটি সবসময়ই বিতর্কের বিষয় ছিল যে, বর্ণভেদ প্রথার মৌলিক নীতিসমূহ, যথা বিশুদ্ধতা বা অবিশুদ্ধতা, অন্তর্বর্তী বিবাহ বা বংশানুক্রমিক পেশা মুসলিম সমাজে কীভাবে সামাজিক স্তরবিন্যাস নির্ধারণ করেছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতের মুসলমানগণ নিজেদের আলঙ্করিকভাবে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে, যথা সৈয়দ, শেখ, মুগল ও পাঠান। অবশ্য পন্ডিতগণ তিনটি প্রধান শ্রেণিবিভাগ চিহ্নিত করেন: প্রথম, আশরাফ বা উচ্চ শ্রেণি, যার মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে বিদেশ থেকে আগত সকল মুসলিমদের (আরব, পারসিক, আফগান ও অন্যান্য) বংশধর এবং উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের মধ্য হতে ধর্মান্তরিতরা অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়, আজলাফ বা নীচু শ্রেণির লোকজন, যার মধ্যে তাঁতি, ধুনারি, কলু, নাপিত, দর্জি প্রমুখ পেশাজীবী শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত। কিছু কিছু জায়গায়, আরজল বা সবগুলি সামাজিক শ্রেণির মধ্যে নিম্নতম শ্রেণি নামে তৃতীয় একটি শ্রেণি অবস্থান করে এবং এই শ্রেণিভুক্তদের মধ্যে আছে হালালখোর, লালবেগী, আবদাল ও বেদিয়া যাদের মসজিদ বা কবর স্থানসমূহে প্রবেশের অনুমতি ছিল না এবং যাদের সাথে স্বাভাবিক অবস্থায় অন্য মুসলমানগণ মেলামেশা করত না।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব ছিল ‘শরীফ’ নামক এক সামাজিক স্তরের হাতে, যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওয়াহাবী ধর্মপ্রচারকগণ মুসলিম জনসংখ্যার কিছু অংশের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতেন। শরীফগণ বিদেশি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সামাজিক মর্যাদা, জমাজমি নিয়ন্ত্রণ এবং মুগল শাসনামলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ভোগ করত। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার এবং জমিদারিপ্রথার বিলোপের সাথে সাথে তারা তাদের নেতৃত্ব বজায় রাখতে পারে নি। তারা ব্রিটিশ শাসনামলের পরিবর্তিত অবস্থার সাথে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতেও ব্যর্থ হয়। তারা নিজেদের সাধারণ মুসলমানদের থেকে দূরে রাখে, একটি পৃথক ভাষায় (ফার্সি) কথা বলে, স্বতন্ত্র ধরনের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলে এবং স্থানীয় বাঙালি লোকজন থেকে ভিন্ন একটি জীবনধারা অনুসরণ করে। স্ববিরোধী হলেও উচ্চ আশরাফ শ্রেণি, যারা শহুরে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করত, তারা ব্রিটিশ প্রশাসন কর্তৃক চালুকৃত পাশ্চাত্য সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। অথচ প্রতীচ্যের ‘পুনর্জাগরণ’ সাধারণভাবে বাঙালি হিন্দু বুদ্ধিজীবী শ্রেণিকে ব্যাপকভাবে স্পর্শ করেছিল। নতুন বাঙালি মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণি এক নতুন সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে, যার নেতৃত্ব দেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি ইংরেজিকে সরকারি কাজের ভাষা এবং শিক্ষার মাধ্যম করার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। বেনিয়া এবং গোমস্তারা প্রথম ইংরেজির সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায় এবং এভাবে হিন্দু সমাজ ‘পুনর্জাগরণের’ ও পুনর্গঠনের প্রতিনিধি এবং সুবিধাভোগী হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করে।

মুসলমান সমাজ ‘পুনর্জাগরণ’কে নিজেদের মধ্যে সক্রিয় করার পরিবর্তে ওয়াহাবী আন্দোলনের মাধ্যমে পুনর্জাগরণবাদকেই ছড়িয়ে দেয়, যারা যুক্তি দেখান আজকে পাশ্চাত্য যে ইসলামকে পরাজিত করতে পেরেছে তার কারণ এর অনুসারীরা প্রকৃত ইসলামকে ভুলে গেছে। অতএব, এই আন্দোলন ইসলামকে নানারকম বিভক্তি থেকে মুক্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি সংযোজনের মাধ্যমে তাকে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে। এতে মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা বর্জন এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এক ধরনের ঘৃণার উদ্রেক ঘটায়। সময়ের পরিক্রমায় অবশ্য মুসলমানদের শিক্ষিত একটি অংশ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। বাংলার নবাব আব্দুল লতিফ এবং উত্তর ভারতে স্যার সৈয়দ আহমদ এই আন্দোলনের প্রচারক ছিলেন। এটি ঊনিশ শতকের শেষার্ধে একটি মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির উন্মেষ ঘটাতে সহায়তা করে। এই শিক্ষিত মুসলমান যুবশ্রেণি ১৯০৫ সালে প্রথমবার বঙ্গ বিভাগের সময়ে এবং পরবর্তীকালে সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত কোটা সুবিধার ফলে চাকরিতে ক্রমবর্ধমান সুবিধা পেতে থাকে। স্থানীয়ভাবে ‘জোতদার’ নামে পরিচিত সবচেয়ে সম্পদশালী ভূমিমালিক মুসলমান জনগোষ্ঠী এই মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণি গঠনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের পরেই ছিল ভূমির মালিক ও চাষাবাদকারীরা। ১৯৪০-এর দিকে পূর্ববাংলার শহুরে সমাজ কাঠামো প্রধানত ক্ষুদ্র একদল শিল্পশ্রমিক, উল্রেখযোগ্য সংখ্যক ইংরেজিতে শিক্ষিত পেশাজীবী এবং মধ্যপর্যায়ের বেতনভুক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত ছিল।

১৯৪৭-এর পর ভারতে হিন্দুদের গমন, রাষ্ট্র কর্তৃক জমিদারি অধিগ্রহণ, অধিক গতিতে নগরায়ণ ইত্যাদি ঘটনায় অভিজাত শ্রেণি-প্রভাবিত সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন ঘটে, যার সুবিধাদি বিবিধ জনসাধারণ ও ব্যাপ্ত সমাজের পরিবর্তে মুষ্টিমেয় লোকের কাছে পৌঁছায়। এরূপ অবস্থার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সমাজ কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। নগরায়ণের প্রক্রিয়া যুগপৎভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রম ও শিল্পের উন্নয়ন ঘটায় এবং ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যমান সমাজ কাঠামোর ওপর এর অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়ে। বাঙালি মুসলমানদের মধ্য থেকে একটি পেশাধারী ও ব্যবসায়ী মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রদেশের বিভিন্ন নগর কেন্দ্রে উঠে আসে। এই উঠতি মধ্যবিত্ত শ্রেণি কিছু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করে এবং এক নতুন সমাজ কাঠামোকে রূপ দিতে থাকে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নে যে অভিজাত উচ্চশ্রেণি ইতঃপূর্বে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারা সমাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং মুক্তিযুদ্ধের পর নেতৃত্ব বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর এসে বর্তায়। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশি সমাজ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে পুঁজিবাদের উদ্ভব, গ্রাম থেকে ব্যাপকভাবে নগরমুখী যাত্রা, অতিনগরায়ণ ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক খাতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিজনিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়। গ্রাম ও শহুরে সমাজ কাঠামোতে লক্ষিত হয় ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি। পল্রীসমাজ কৃষক, কারিগর ও শ্রমিকশ্রেণিসহ এক বিশাল সর্বহারা শ্রেণি নিয়ে আজও পশ্চাতে পড়ে আছে। গ্রামাঞ্চলে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে জোতদার, ধনী কৃষক, মাঝারি কৃষক, প্রান্তিক চাষি এবং ভূমিহীনদের এক ব্যাপক সমাবেশ।

পল্লী অঞ্চলের কৃষিতে পুঁজিবাদী ধাঁচের উৎপাদন ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং ‘সবুজ বিপ্লব’-এর আবির্ভাব শ্রেণিগুলির মধ্যে বিভাজন, মেরুকরণ এবং এক ধরনের ব্যবধান সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। পুঁজিপতি কৃষকগণ কৃষিতে বড় ধরনের পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সক্ষম হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ভাড়াটে শ্রমিক নিয়োগ করতে পারে। তাছাড়া, আর্থিক প্রাচুর্যের কারণে সরকার এবং অন্যান্য সংস্থার প্রদত্ত বিদ্যমান সুবিধাদি গ্রহণে তাদের অগ্রাধিকার পেতে সুবিধা হয়। পক্ষান্তরে, প্রান্তিক চাষিদের এ সকল সুবিধা নেই, বরং এই প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তারা তাদের জমাজমি বিক্রয় করে দিতে বাধ্য হয়। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, পল্লীর জনসংখ্যার ২৬% হচ্ছে ভূমিহীন এবং তাদের মধ্যে ৪৮% দারিদ্র্য সীমার নিচে জীবনযাপন করে থাকে। ঐতিহ্যবাহী একান্নবর্তী পরিবারে ভাঙ্গন, নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিভেদ এবং নানা সামাজিক অনাচার দারিদ্র্য ও ভূমিহীনতার পরিণতি বলে মনে করা হয়। এতদ্ব্যতীত, এই দারিদ্র্য, পল্লীর জনসংখ্যার এক বৃহদাংশকে শহরাঞ্চলে অভিবাসনের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহে বাধ্য করে তোলে।

যে সকল শক্তিশালী উপাদান বাংলাদেশের পল্লী এলাকার ক্ষমতার কাঠামো নির্ধারণ করে, সেগুলি হচ্ছে অর্থনৈতিক অবস্থা, ঐতিহ্যের ক্রমধারা, জমাজমির পরিমাণ, রাজনৈতিক ক্ষমতা বা সরকারি উচ্চ-পদধারীদের সাথে নৈকট্য ইত্যাদি। সেচব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী জলমহালের মালিকগণ পল্লীর ক্ষমতা-কাঠামোর ওপর প্রবল প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। এজাতীয় পৃষ্ঠপোষক-আশ্রিত সম্পর্ক গ্রামের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিকে নির্দেশ করে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা সদস্যবর্গ এবং অন্যান্য স্থানীয় মাতবরদের মতো পল্লীর নেতৃবৃন্দ প্রাচীনকালের মতোই পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণ জনগণ তাদের চারপাশে জড়ো হয় অথবা তাদের আর্শীবাদপুষ্ট লোকজন তাদের পৃষ্ঠপোষকের প্রতিষ্ঠিত নৈতিকতা ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে পৃথক দল বা গোষ্ঠী গঠন করে।

গ্রামীণ ক্ষমতার কাঠামোতে প্রাচীন নৈতিকতা ও মূল্যবোধ আজও এক মুখ্য ভূমিকা পালন করে চলছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও কুসংস্কার স্থিতাবস্থা রক্ষায় সহায়তা করে। সামাজিক পরিবর্তন ধীরগতিসম্পন্ন, ভক্তিশ্রদ্ধাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং আধুনিক মূল্যবোধ গ্রহণ কখনও কখনও বাধার সম্মুখীন হয়। মুসলমানদের মধ্যে পীর, ফকির এবং মওলানাগণ ঐতিহ্যগতভাবে ব্যাপক শ্রদ্ধা পেয়ে থাকেন। অবশ্য, শিক্ষার হারের বৃদ্ধি, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনের বিকেন্দ্রায়ন, নাগরিক মূল্যবোধের প্রবেশ, বিদেশ থেকে স্থানীয় জনগণের অর্থ প্রেরণ ইত্যাদি পল্লীর সমাজ কাঠামোতে কিছুটা পরিবর্তন সূচিত করেছে।

গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক পরিবর্তনের ওপর নাগরিক সমাজ কাঠামো নির্ভরশীল। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনা এই তিনটি শহরে কর্মমুখর পরিসেবা খাতের পাশাপাশি বৃহৎ শিল্প এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অবস্থিতি রয়েছে। মিশ্র সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য থেকে আসা আধুনিক মূল্যবোধ নাগরিক সমাজ কাঠামোর প্রকৃতিকে রূপান্তরের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। নগরাঞ্চলসমূহে কর্পোরেট নির্বাহী, সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, শিল্প-চর্চাকারী, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের মতো আধুনিক শ্রেণির অবস্থান রয়েছে। অর্থ এবং শিক্ষা নগরাঞ্চলের সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। অতীত পটভূমির মতো পুরানো উপাদানসমূহ, যেমন পারিবারিক বা বংশীয় আভিজাত্য ইত্যাদি সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণে এখন কমই গুরুত্ব বহন করে। নাগরিক জীবনযাপন পদ্ধতি, আচার-আচরণ, বিনোদনমূলক কার্যকলাপ, শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা ও উপভোগ ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণি ও অর্থনৈতিক অবস্থাভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয় যা গ্রমের সমাজ কাঠামোতে লক্ষণীয় নয়। সেখানে এসব ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়, অভিন্ন প্রথাগত আচরণ ও সমষ্টিগত জীবনযাত্রা।

বাংলাদেশের কয়েকটি বড় বড় শহর ইদানীং অতি নগরায়ণ, ক্রমবর্ধমান অপরাধ, বস্তির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং আনুষ্ঠানিক খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্ত। বিগত কয়েক বছরে গ্রামীণ জনসংখ্যার এক অভাবনীয় সংখ্যা রাজধানী শহরে চলে এসেছে। শহুরে মূল্যবোধের সাথে গ্রামীণ মূল্যবোধের মিশ্রণে এক অদ্ভুত সাংস্কৃতিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নাগরিক জীবনে প্রকট আবাসন সমস্যা বিদ্যমান, যা তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাদের নিচে এবং রাস্তা ও পার্কসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে থাকতে বাধ্য করে। এই অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে বাসাবাড়িতে কাজের লোক, পতিতা এবং গুপ্ত জগতের অপরাধী শ্রেণির জন্ম হয়েছে।

তবে, বাংলাদেশের সম্পদ ও ক্ষমতা কাঠামোতে পুরানো মূল্যবোধ ও গ্রামীণ মানসিকতাই প্রধানত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অনেকাংশ জুড়ে আছে। সেসঙ্গে রাজনীতি পরিচালনায় বৃদ্ধি পেয়েছে মাস্তানি ও পেশিশক্তির ব্যবহার। তবে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও উঠতি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ক্ষমতা-কাঠামো নির্ধারণে অব্যাহতভাবে প্রাধান্য বিস্তার করে চলেছে।  [গোফরান ফারুকী]