সওগাত

সওগাত  একটি সচিত্র মাসিক পত্রিকা। ১৩২৫ বঙ্গাব্দের (১৯১৮ সাল) অগ্রহায়ণ মাসে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের সম্পাদনায়  কলকাতা থেকে এটি প্রকাশিত হয়। ১৩২৭ বঙ্গাব্দের চৈত্রমাসে (১৯২১ সালের মার্চ-এপ্রিল) অনিবার্য কারণবশত এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ছয় বছর পর ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের (১৯২৬ সাল) আষাঢ় মাসে সওগাত-নবপর্যায় নামে পুনরায় এর প্রকাশনা শুরু হয় এবং ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ (১৯৩০ সাল) পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার পর অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ১৯৫০ থেকে প্রায় তিন বছর সওগাতের কোনো সংখ্যা প্রকাশিত হয়নি। ১৯৫২ সালের নভেম্বর/ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ ১৩৫৯) থেকে পত্রিকাটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হতে থাকে।

সওগাত পত্রিকার প্রচ্ছদ

সম্পাদক হিসেবে নাসিরউদ্দীনের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ একটি উন্নতমানের প্রগতিশীল পত্রিকা প্রকাশ করা। এর প্রমাণস্বরূপ তিনি সওগাতের প্রথম সংখ্যায় সাতটি নীতি ঘোষণা করেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার এবং পরবর্তী পৃষ্ঠায় মানকুমারী বসুর একটি করে কবিতা মুদ্রিত হয়।

সওগাতের উদ্বোধনী সংখ্যায় খ্যাতনামা পুরুষ ও মহিলাদের ষোলোটি ছবি ছাপা হয়। মহিলাদের এই ছবি ছাপানো এবং নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি বিষয়ে প্রচুর প্রবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে সওগাতের উদার দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ পেয়েছে। সওগাত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠিত ও নবীন লেখিকাদের লেখা নিয়ে ‘মহিলা সংখ্যা’ নামে ছয়টি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। ফলে প্রতিশ্রুতিশীল মহিলা লেখকরা উৎসাহিত হন।

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সওগাতের প্রধান লেখকদের অন্যতম। তিনি যখন করাচিতে বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত, তখন ‘বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী’ নামে একটি ছোট গল্প পাঠান। গল্পটি ১৩২৬ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তাঁর সওগাতে প্রকাশিত প্রথম লেখা।  ছোটগল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, গান ও  গজল ব্যতীত নজরুলের  মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসটিও সওগাত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে। সওগাতের অন্যান্য প্রধান লেখক ছিলেন বেগম রোকেয়া, কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ এবং আবুল ফজল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরও এতে লিখেছেন।

বাঙালি মুসলমানদের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালনকারী সওগাত ঢাকার সাহিত্যিক সমাজেও একটি উদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার ও নবীন প্রতিভার লালন করে। [মোহাম্মদ আবদুল কাইউম]