শ্রীরামপুর মিশন

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

শ্রীরামপুর মিশন (১৮০০-১৮৪৫)  ভারতের প্রথম নিজস্ব প্রচারক সংঘ। ১৮০০ সালের ১০ জানুয়ারি উইলিয়ম কেরী ও ভ্রাতৃবৃন্দ এ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। মিশন হুগলি জেলার দুটি স্থান থেকে বাংলায় যীশুর বাণী প্রচার শুরু করে। এই জেলার ব্যান্ডেলে প্রথম ক্যাথলিক চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় (১৫৯৯)। এর দুশ বছর পর (১৮০০) শ্রীরামপুরে প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ গড়ে ওঠে। এই চার্চ ও মিশন প্রতিষ্ঠা করেন উইলিয়ম কেরী (১৭ আগস্ট, ১৭৬১)। তাঁরই উদ্যমে ১৭৯২ সালে ‘ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটি’ গঠিত হয়। কেরী ও টমাস এই সোসাইটির প্রতিনিধি হিসেবে ১৭৯৩ সালে বাংলায় আসেন খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে। প্রথম কয়েকমাসে কিছু সংকট মোকাবিলার পর কেরী উত্তরবঙ্গের মদনাবতীতে প্রতিষ্ঠিত হন এবং বাইবেল অনুবাদ, বিদ্যালয় স্থাপন, ধর্ম প্রচার প্রভৃতির মাধ্যমে মিশনের কাজ শুরু করেন। এখানে প্রথম খ্রিস্ট মন্ডলী গঠিত হয়। আঠারো শতকের শেষের দিকে কেরীর সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আরও কয়েকজন মিশনারিকে বাংলায় পাঠানো হয়। তাঁরা ইংরেজ সরকারের মিশনারি বিতাড়ন এড়াবার জন্য ডেনিশদের শ্রীরামপুরে আশ্রয় নেন। এখানে কেরী অর্থ তহবিলের ভার নেন এবং বাইবেল অনুবাদের কাজ পরিচালনা করেন। মার্শম্যান বিদ্যালয় এবং ওয়ার্ড মুদ্রণ পরিচালনার দায়িত্ব নেন। ফাউন্টেনের ওপর ভার পড়ে গ্রন্থাগার গড়ার। ১৮০০ সালের ২৪ এপ্রিল শ্রীরামপুর মিশন চার্চের উদ্বোধন হয়। কেরী হন চার্চের পুরোহিত এবং মার্শম্যান ও ওয়ার্ড সহকারী পুরোহিতের ভার নেন। এই মিশন ছিল স্বনির্ভরশীল। মার্শম্যান বিদ্যালয়, ওয়ার্ড প্রেস  এবং কেরী ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে অধ্যাপনা করে নিজেদের ভরণপোষণ ও মিশনের কাজ চালাতেন।

ইংরেজ সরকারের বাধা থাকার দরুন তাঁদের ধর্ম প্রচারের কাজ আশানুরূপ হয়নি। তবে বাইবেল অনুবাদ, মুদ্রণ, বিদ্যালয় স্থাপন প্রভৃতি কাজে মিশন আশাতিরিক্ত সফল হয়। বাংলা গদ্য সাহিত্য প্রসারেও মিশন পথিকৃতের ভূমিকা গ্রহণ করে।

১৮১২-১৩ সালে কর্মধারা নতুন পথে পরিচালিত হয়। ১৮১২ সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে বিধ্বংসী অগ্নিকান্ড ঘটে। বিপুল ক্ষয়-ক্ষতি সত্ত্বেও প্রেসটি পুনর্গঠিত হয়। ১৮১৩ সালে মিশনারিদের ওপর থেকে কোম্পানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এর ফলে মিশনের সামনে কর্মক্ষেত্র প্রসারের বিপুল সুযোগ আসে। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র, সমাজ সংস্কার প্রভৃতি ক্ষেত্রে মিশন প্রত্যক্ষভাবে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। এভাবে ধীরে ধীরে দেশে নবজাগরণের পথও প্রস্ত্তত হয়। মিশন এ সময় পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের বহু স্থানে তাদের শাখা স্থাপন করে।

দেশীয়দের ধর্মশিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৮১৮ সালে মিশনের পক্ষ থেকে শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষ উচ্চ শিক্ষাদানও এই কলেজের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। ফলে এই কলেজে দুই ধারার শিক্ষা প্রবর্তিত হয়। ১৮২২-২৩ সালে উইলিয়ম ওয়ার্ড ও কেরীর বড় ছেলে ফেলিক্সের হঠাৎ মৃত্যু হলে মিশন দারুণ সংকটে পড়ে। হুগলি নদীর বন্যায়ও মিশন খুব বিপাকে পড়ে। ডেনিশ সরকারের আনুকূল্যে শ্রীরামপুর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নীত হয়। কিন্তু মিশনের বিপর্যয় এ সময় চরমে ওঠে। ১৮২৯-এ শ্রীরামপুর মিশন বাধ্য হয় ইংল্যান্ডের সোসাইটির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে। এই মিশন তখন সম্পূর্ণ স্বাধীন মিশনারি সোসাইটিতে পরিণত হয়। কিন্তু এ সময় কলকাতার যে কোম্পানিতে মিশনের টাকা গচ্ছিত ছিল তা দেউলিয়া হয়ে যায়। ফলে মিশনের জন্য তা অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনে। মিশনের এই দুরবস্থাকালে কেরী (১৮৩৪) এবং মার্শম্যান (১৮৩৭) এর মৃত্যু হয়। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে কয়েক বছর চলার পর ১৮৪৫ সালে শ্রীরামপুর মিশন বন্ধ হয়ে যায়।  [সুনীল কুমার চট্টোপাধ্যায়]