শ্রীবর্দী উপজেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৬:০৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

শ্রীবর্দী উপজেলা (শেরপুর জেলা)  আয়তন: ২৪৮.২৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০৩´ থেকে ২৫°১৮´ উত্তর অক্ষাংশ  এবং ৮৯°৫৩´ থেকে ৯০°০৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে শেরপুর সদর উপজেলা, পূর্বে ঝিনাইগাতী উপজেলা, পশ্চিমে বকশীগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৫৯৬৪৮; পুরুষ ১২৮৯২০, মহিলা ১৩০৭২৮। মুসলিম ২৫৪৮৮৩, হিন্দু ৩০১৭, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ১৩১৪ এবং অন্যান্য ৪৩৩।

জলাশয় সোমেশ্বরী ও মৃগী নদী, কাটাখালী খাল এবং ছাপা বিল, বসা বিল ও ছোট বসা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ৩১ মার্চ ১৯১৮ সালে শ্রীবর্দী থানা গঠিত হয়। বর্তমানে এটি উপজেলা। পৌরসভা গঠিত হয় ২৪ সেপ্টম্বর ২০০৪।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ৭৭ ১৪২ ২৪১৬৯ ২৩৫৪৭৯ ১০৪৬ ৩৮.২ ৩৪.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.৯০ ২০ ২৪১৬৯ ২২১৭ ৩৮.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাকিলাকুড়া ৪৭ ৬৫১৮ ১২৯২৯ ১৩৩৫৫ ৩৩.৩
কুড়িকাহনীয়া ৬৩ ৪২৮০ ১১৬১৫ ১১৯২৭ ৩৭.১
খড়িয়া কাজীরচর ৫৫ ৫৪১৭ ১২০৭৮ ১২১৮৩ ২৮.৩
গড়জরিপা ৩১ ৩৮৪০ ৯২৫০ ৯৩৪৯ ৩৭.৬
গোঁসাইপুর ৩৯ ৪৮১৮ ১২১৫৩ ১২২২১ ৩৭.৩
তাঁতিহাটী ৯৪ ৪৮৭১ ৯২৭১ ৯৫১৩ ৩৪.২
ভেলুয়া ১৫ ৬৪৮৮ ১৬৩৫০ ১৬০২৫ ৩২.৮
রাণী শিমুল ৭১ ১০২৪০ ১৪৫১৩ ১৫১৭১ ৩৮.৬
শ্রীবর্দী ৮৬ ৩৭৮৬ ৯০১৮ ৯১৭৭ ২৫.৬
সিংগা বরুনা ৭৯ ৮৩৮৫ ৯৫৯৮ ৯৭৮৩ ৩৮.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নির্দনাদি ও প্রত্নসম্পদ  বারোদুয়ারি মসজিদ (গড়জরিপা)।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলা ১১ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ১৯৭১ সালে বিভিন্ন লড়াইয়ে এ উপজেলার শাহ মোতাসিম বিল্লাহ খুররম, কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সি, ডাঃ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, আবদুস সালাম সহ ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ এলাকায় ব্যাপক লুটপাট, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৬ ডিসেম্বর শ্রীবর্দী উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলার সিএসডি গোডাউন এলাকায় ১টি গণকবর রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন শ্রীবর্দী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩২০, মন্দির ১১, গির্জা ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বারোদুয়ারি মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৪.৮%; পুরুষ ৩৭.৭%, মহিলা ৩১.৯%। কলেজ ৩, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৪, মাদ্রাসা ১২২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শ্রীবর্দী সরকারি কলেজ (১৯৬৯), গোপালখিলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), শ্রীবর্দী আকবরিয়া পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), শ্রীবর্দী মথুরানাথ বিনোদিনী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), কাকিলাকুড়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫০), শ্রীবর্দী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯৬২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী পাক্ষিক: বনশ্রী (অবলুপ্ত), পল্লী দর্পণ (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ১১, প্রেসক্লাব ১, স্টেডিয়াম ১, সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ১২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৯.৩৯%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫৪%, শিল্প ০.৬০%, ব্যবসা ১০.৪৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৮২%, চাকরি ৪.০৫%, নির্মাণ ০.৬৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১১% এবং অন্যান্য ৯.১০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.২৮%, ভূমিহীন ৪২.৭২%। শহরে ৪৭.৪৫% এবং গ্রামে ৫৭.৮৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, পাট, আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  ডাল, অড়হর, কলাই, আখ।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১২২, গবাদিপশু ২২, হাঁস-মুরগি ১৫, হ্যাচারি ৬।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৬০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, আইস ফ্যাক্টরি, অয়েল মিল, ওয়েল্ডিং কারখানা, স’মিল।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, সেলাই কাজ, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৩, মেলা ৪। শ্রীবর্দী বাজার, ভায়াডাঙ্গা বাজার, কর্ণঝরা বাজার, ঝগড়ার চর বাজার এবং পুরান শ্রীবর্দীর কোকড়া মেলা, টেংগর পাড়ার বৈশাখী মেলা, গড়জরিপার বারুণী স্নান মেলা ও মাটিয়াকুড়ার তেনাচিড়া মেলা উলে­খযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, চাল, কলা, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৯.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ চিনামাটি।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.২%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ২.৭%। এ উপজেলার ১৭.২৬% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪১.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫০.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, কলেরা ও গুটিবসন্তে এ উপজেলার অনেক লোক প্রাণ হারায়। ১৯৪২ ও ১৯৮৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কারিতাস, ওয়ার্ল্ড ভিশন, প্রশিকা।  [সৈয়দ মারুফুজ্জামান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শ্রীবর্দী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।