শীল, ব্রজেন্দ্রনাথ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

শীল, ব্রজেন্দ্রনাথ (১৮৬৪-১৯৩৮)  দার্শনিক। ১৮৬৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার রামমোহন সাহা লেনে তাঁর জন্ম। পিতা মহেন্দ্রনাথ শীল ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রসিদ্ধ আইনজীবী। অল্পবয়সে ব্রজেন্দ্রনাথের পিতা-মাতার মৃত্যু হলে মাতুলালয়ে তিনি প্রতিপালিত হন। তিনি কলকাতার জেনারেল অ্যাসেমবি­জ ইনস্টিটিউশনে (পরবর্তীকালে স্কটিশ চার্চ কলেজ) বিএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন এবং বিএ পাস করার পর ওই কলেজেই অধ্যাপনা করেন। পরে ১৮৮৪ সালে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে তিনি মেন্টাল অ্যান্ড মরাল ফিলসফিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১০ সালে ‘Mechanical, Physical and Chemical Theories of Ancient Hindus’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবনে ব্রজেন্দ্রনাথ বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেন। তিনি ছিলেন কোচবিহার ভিক্টোরিয়া কলেজের (বর্তমান আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজ) প্রথম ভারতীয় অধ্যক্ষ। ১৯১২ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্রের প্রধান অধ্যাপক ছিলেন। পরে ১৯২১ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত তিনি মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের King George V Chair of Mental and Moral Science (পরে Brajendranath Seal Professor of Mental and Moral Science) পদ অলংকৃত করেন।

ব্রজেন্দ্রনাথ ১৮৯৯ সালের ১৫ অক্টোবর রোমে অনুষ্ঠিত Congress International Des Orientalists-এর আন্তর্জাতিক অধিবেশনে যোগদান করে ‘Comparative Studies in Vaishnavism and Christianity’ নামক প্রবন্ধ পাঠ করেন। এ প্রবন্ধে তিনি ‘ইতিহাসের দর্শন’ ও ‘ঐতিহাসিক তুলনামূলক পদ্ধতি’ সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য প্রদান করেন। ১৯১১ সালের জুলাই মাসে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে The First Universal Race Congress-এ যোগদান করে তিনি ‘Race Origin’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন। এতে তিনি জাতিতত্ত্ব, নৃ-বিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ের আলোকে জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে এক নতুন তত্ত্ব প্রদান করেন, যা সকলের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনিই প্রথম ভারতবর্ষে তুলনামূলক সাহিত্য ও ধর্মদর্শন বিচার এবং দর্শন আলোচনায় গণিতের সূত্র প্রয়োগ করেন। প্রাচ্য-প্রতীচ্যের প্রাচীন ও আধুনিক ১০টি ভাষায় তিনি ব্যুৎপন্ন ছিলেন।

আদর্শ চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের জন্য তাঁকে ‘আচার্য’ বলে সম্বোধন করা হত। তিনি পাশ্চাত্য জগতে হিন্দুদর্শন ও ভারতবাণী প্রচার করেন, হেগেল ও স্পেন্সারের মতবাদে দুর্বলতা প্রদর্শন করেন। তাঁর জ্ঞানচর্চা ও গবেষণামূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি রবীন্দ্রনাথ,  স্বামী বিবেকানন্দ, ম্যাক্স মূলার, মাইকেল স্যাডলার প্রমুখ বিশ্বমানবতার প্রবক্তারা গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। বিবেকানন্দ ছিলেন তাঁর কলেজ-সহপাঠী।

রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে ব্রজেন্দ্রনাথ ১৯২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া তিনি মহীশূর, মাদ্রাজ, বোম্বে, ত্রিবান্দ্রমসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন ভাষণ দেন। এসব ভাষণে তিনি উপমহাদেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন দিক নির্দেশনা দান করেন।

ব্রজেন্দ্রনাথ শীল বহুবিদ্যায় বিশারদ ছিলেন। তাই তাঁর রচনাবলিতে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা, নৃতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতির জ্ঞানগর্ভ আলোচনা লক্ষ করা যায়। তাঁর রচনাবলির মধ্যে রয়েছে: A Memoir on the Co-efficient of Numbers: A Chapter on the Theory of Numbers (1891); Neo-Romantic Movement in Bengali Literature (1890-91); A Comparative Study of Christianity and Vaishnavism (1899); New Essays in Criticism (1903); Introduction to Hindu Chemistry (1911); Positive Sciences of the Ancient Hindus (1915); Race-Origin (1911); Syllabus of Indian Philosophy (1924); Rammohan Roy: The Universal Man (1933); The Quest Eternal (1936) ইত্যাদি।

তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধসমূহ Calcutta Review, Modern Review, New India, Dawn, Bulletin of Mathematical Society, Indian Culture, Hindustan Standard, British Medical Journal,  প্রবাসীসবুজপত্র, বিশ্বভারতী প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

ব্রজেন্দ্রনাথ জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ডিএসসি (১৯১৫), নাইট (Knight, ১৯২৬) এবং মহীশূরের রাজরত্নপ্রদীপ (১৯৩০) উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৩৫ সালে তিনি ৭২ বছর বয়সে পদার্পণ করলে ভারতীয় দর্শন কংগ্রেস এক সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ ‘আচার্য শ্রীযুক্ত ব্রজেন্দ্রনাথ শীল সুহূদ্বরেষু’ শীর্ষক এক প্রশস্তিবাণী প্রেরণ করেন।  [প্রদীপ কুমার রায়]