শালিখা উপজেলা

শালিখা উপজেলা (মাগুরা জেলা)  আয়তন: ২২৮.৬৪  বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৫´ থেকে ২৩°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৫´ থেকে ৮৯°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঝিনাইদহ সদর ও মাগুরা সদর উপজেলা, দক্ষিণে বাঘারপাড়া ও নড়াইল সদর উপজেলা, পূর্বে নড়াইল সদর, মাগুরা সদর, লোহাগাড়া ও মোহাম্মদপুর (মাগুরা) উপজেলা, পশ্চিমে কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ও বাঘারপাড়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৪৭৬৬৩; পুরুষ ৭৫৭৮২, মহিলা ৭১৮৮১। মুসলিম ১০৫৫৫০, হিন্দু ৪২০৯২, বৌদ্ধ ৮ এবং অন্যান্য ১৩।

জলাশয় চিত্রা, নবগঙ্গা ও ফাটকি নদী এবং জামলা, নেউরা ও বুড়ুলির বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন শালিখা থানা গঠিত হয় ১৯২৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১০০ ১১৮ ৫৬০১ ১৪২০৬২ ৬৪৬ ৫৬.২ ৪৩.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.১৩ ৫৬০১ ১০৯২ ৫৬.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আড়পাড়া ১১ ৬৪২০ ১১৫৭৫ ১০৮১২ ৪৮.৪০
গঙ্গারামপুর ৪৭ ৭১০৬ ১০০৭৫ ৯৭৬১ ৪৬.৮৩
তালখড়ি ৮৩ ১১৩৭৯ ১৬১৬১ ১৫৩৬৬ ৩৯.১২
ধনেশ্বরগাতী ৩৫ ১০৫৮২ ১০৭২৫ ১০০৬৭ ৪০.৮৪
বুনাগাতী ২৩ ৫৬২৭ ৭৬২৬ ৭১৬৮ ৪৮.০৮
শালিখা ৫৯ ৫৬৯৯ ৬৯৬৫ ৬৫৪৫ ৪৫.২০
শতখালী ৭১ ৯৬৮৬ ১২৬৫৫ ১২১৬২ ৪৩.৩৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ছয়ঘরিয়া মসজিদ, গোপালগ্রাম জামে মসজিদ (সপ্তদশ শতাব্দী), তালখড়ি লোকনাথ আশ্রম (বৈষ্ণব যুগ)।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মাগুরা-যশোর সড়কের শতখালী রাস্তার পাশে পাকবাহিনী ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে জীবন্ত কবর দেয়। এছাড়া রাজাকারদের হাতে তালখড়ি নামক স্থানে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৩০৯, মন্দির ১৬।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৪%; পুরুষ ৪৯.৪%, মহিলা ৩৮.৩%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৯, কমিউনিটি স্কুল ৫, স্যাটেলাইট স্কুল ৫, মাদ্রাসা ১৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গঙ্গারামপুর পি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০০), সীমাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আড়পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শরশুনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সীমাখালী প্রাইমারী স্কুল (১৯৩২), আড়পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, শরশুনা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগডাঙ্গা শামসুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, পরিপুর দাখিল মাদ্রাসা, শতখালী দারুল উলুম মাদ্রাসা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১১, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১, নাট্যদল ২, যাত্রাপার্টি ১, ক্লাব ২৫, খেলার মাঠ ২০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৮.৭৬%, অকৃষি শ্রমিক ১.৬৮%, শিল্প ০.৬৯%, ব্যবসা ৯.০৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.০১%, চাকরি ৪.৪৮%, নির্মাণ ০.৬৯%, ধর্মীয় সেবা ০.০৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩১% এবং অন্যান্য ২.২১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৪.০১%, ভূমিহীন ২৫.৯৯%। শহরে ৬১.০৩% এবং গ্রামে ৭৪.৫২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, ডাল, তেলবীজ, আখ, গম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  ছোলা, তিল, কাউন, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু, খেজুর, জামরুল, জাম্বুরা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২, হাঁস-মুরগি ৪, গবাদিপশু প্রজনন উপকেন্দ্র ২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪২৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, দুধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা, চকলেট ফ্যাক্টরি, বলপেন ইন্ডাস্ট্রি, তেলের ঘানি, বেকারি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৮, মেলা ১০। আড়পাড়া হাট, সীমাখালী হাট, চতুরবাড়ীয়া হাট, সিংড়া হাট ও বুনাগাতী হাট এবং গঙ্গাস্নান মেলা, বারুণী মেলা, দুর্গাপূজার মেলা, কালীপূজার মেলা, শিবের গাজন, বৈশাখী মেলা, চৈত্র সংক্রান্তির মেলা, ষাঁড়ের লড়াই ও ঘোড়-দৌড় উপলক্ষে মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট, গম, ডাল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৯৭%, পুকুর ০.১৬%, ট্যাপ ০.৪৮% এবং অন্যান্য ১.৩৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৯.৭৬% (গ্রামে ১৮.৯০% ও শহরে ৪১.৮২%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৫.৬৯% (গ্রামে ৫৫.৯৩% ও শহরে ৪৯.৪৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৪.৫৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৫৮৫, ১৯০৯ ও ১৯১৯ সালের ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, ১৯৩৮ ও ১৯৭১ সালের বন্যা এবং ১৭৬৯-৭০ ও ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার অনেক লোকের প্রাণহানি সহ গবাদিপশু, ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [বীরেণ মুখার্জী]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শালিখা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।