শালবন রাজার বাড়ি ও কাচারি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

শালবন রাজার বাড়ি ও কাচারি  চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন-সাং ৬৩৭ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলার অনেক স্থান ভ্রমণ করেন। ভ্রমণকালে তিনি প্রাচীন পুন্ড্রনগর (মহাস্থানগড়) এলাকায় ২০টি বৌদ্ধ বিহার এবং ব্রাহ্মণদের ১০০টি মন্দির দেখেছিলেন বলে তাঁর ভ্রমণকাহিনীতে উল্লেখ করেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই এলাকায় এ পর্যন্ত তিনটি বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কার করতে সক্ষম হলেও অবশিষ্ট বিহারগুলির হদিস এখনও করতে পারে নি। শালবন রাজার বাড়ি এবং কাচারি ঢিবিদ্বয় হয়ত হিউয়েন-সাং দেখেছিলেন।

শালবন রাজার বাড়ি  বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার পাইকাড় ইউনিয়নের আরোলা গ্রামের পশ্চিমাংশে অবস্থিত একটি প্রত্নঢিবি। এটি শালবন রাজার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। প্রত্নস্থানটি নাগর নদী থেকে প্রায় ৩.২৫ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে এবং পুন্ড্রনগর থেকে ৭.২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। প্রায় ৩০ হেক্টর আয়তনের বিশাল মাসান দিঘির পশ্চিম তীরে শালবন রাজার বাড়িটি অবস্থিত। প্রায় বর্গাকর প্রত্নঢিবিটি উত্তর-দক্ষিণে ১১০ মি এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১০৮ মি।

প্রায় ৯ মি উচ্চতা বিশিষ্ট প্রত্নঢিবিটির মাঝখানে একটি পুকুরের মত গর্ত রয়েছে। ঢিবিটির আকার ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হয় এটি কোন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ। প্রত্নঢিবিটিতে প্রচুর পরিমাণে ইট রয়েছে; এখনও কয়েকটি ইটের দেওয়াল দৃষ্টিগোচর হয়। ইটের পরিমাপ হলো ৩০ × ২৮ × ৫ ঘন সেমি এবং ২৭ × ২৫ × ৪ ঘন সেমি। মর্টার হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে কাদামাটি।

শালবন রাজার কাচারী প্রত্নঢিবিটি বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার পাইকাড় ইউনিয়নের বাঘাহালি গ্রামের পূর্বাংশে অবস্থিত। মহাস্থান দুর্গনগরী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে প্রায় ৫.৫ কিমি দূরে এবং স্থানীয়ভাবে মাকড়া নামে পরিচিত একটি বিলের উত্তর দিকে প্রত্নঢিবিটির অবস্থান। বিশাল আকারের প্রত্নঢিবিটি পূর্ব-পশ্চিমে ১৫০ মি চওড়া এবং উত্তর-দক্ষিণে ৩০০ মি লম্বা। প্রায় ৪.৫ হেক্টর ভূমির উপর প্রত্নঢিবিটি চতুষ্পার্শ্বের ভূমি থেকে স্থানভেদে ৩-৬ মি উঁচু। ইট পাচারকারীরা উত্তর-পশ্চিম কোণে তিনটি ইটের দেওয়াল উন্মুক্ত করেছে। একটি ইটের দেওয়াল ২.১০ মি. প্রশস্ত এবং ৪ মি. উঁচু। ইটের পরিমাপ হলো ৩৩ × ২৯ × ৫ ঘন সেমি এবং ২৭ × ২৫ × ৪ ঘন. সেমি। মর্টার হিসেবে কাদামাটির ব্যবহার লক্ষণীয়। প্রত্নঢিবির আকার-আকৃতি থেকে মনে করা যায় যে, এটি একটি বৌদ্ধ বিহার ছিল।

শালবন রাজার বাড়ি প্রত্নঢিবির মাত্র ৭ মি পূর্বে ৬০ × ৬০ × ৪ মি আয়তনের চিরিঙ্গীধাপ নামে আরও একটি প্রত্নঢিবি রয়েছে। ঢিবিটিতে ৩৫ × ৩১ × ৫ ঘন সেমি এবং ২৯ × ১১ × ৪ ঘন সেমি আয়তনের ইট প্রচুর পরিমাণ রয়েছে। কাদামাটি মর্টার হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে। স্থানীয় জনগণের মতে এখানে পোড়ামাটির বল এবং মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। অনুমান করা যেতে পারে যে, বৌদ্ধ বিহারের বাইরে চিরিঙ্গী ধাপ একটি  স্তূপ বা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ।  [এস.এস মোস্তাফিজুর রহমান]