রায়, মহারাজা বাহাদুর গিরিজানাথ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

রায়, মহারাজা বাহাদুর গিরিজানাথ (১৮৬২-১৯১৯)  জমিদার, সমাজসেবক, বিদ্যোৎসাহী। দিনাজপুর রাজবংশের দশম উত্তরাধিকারী, জন্ম ১৮৬২ সালে। তিনি ছিলেন রাজা তারকনাথ (১৮৪১-১৮৬৫) এবং রাণী শ্যামামোহিনীর দত্তক পুত্র। তাঁর বাল্যশিক্ষা শুরু হয় রাজবাড়ীর একটি পাঠশালায় (বর্তমানে জুবিলী হাইস্কুল)। এরপর তিনি কলকাতায় এবং মধ্যপ্রদেশের (ভূপাল) রাজকুমার কলেজে শিক্ষা লাভ করেন। গিরিজানাথ রায় কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর অধীনে দিনাজপুরের জমিদার হন। ১৮৮৩ সালে পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাতা শ্যামামোহিনী জমিদারি পরিচালনা করেন।

গিরিজানাথ রায় রাজবাড়ীর পাঠশালাকে ১৮৮৭ সালে মিডিল ভার্নাকুলার স্কুলে উন্নীত করে এবং মহারাণী ভিক্টোরিয়ার ৫০তম জন্ম জয়ন্তী (Golden Jubilee) পালন উপলক্ষে স্কুলটির নামকরণ করেন জুবিলী স্কুল। পরবর্তী সময়ে স্কুলটি মিডিল ইংলিশ স্কুলে উন্নীত হয়। দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী মৌজায় তিনি ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মহারাজা গিরিজানাথ স্কুল। রায়গঞ্জ হাইস্কুল (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে) নির্মাণে তিনি ১০ বিঘা জমি দান করেন। ১৯১২ সালে জিলা স্কুলের দক্ষিণ পার্শ্বে হিন্দু ছাত্রদের জন্য লিয়ন হোস্টেল তার অনুদানে নির্মিত।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা সমর্থন করায় ১৯০৬ সালে গিরিজানাথ রায় ‘মহারাজা বাহাদুর’ উপাধি লাভ করেন এবং ১০০ সদস্যের একটি সশস্ত্র সেনাদল রাখার অধিকার পান। একজন বিশ্বস্ত ব্রিটিশ সামন্ত হিসেবে কলকাতা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল নির্মাণে ২৫ হাজার, সপ্তম এডওয়ার্ডের স্মৃতিরক্ষার্থে ১০ হাজার টাকাসহ বহু সরকারি কাজে অর্থদান করেন। এ ছাড়াও তিনি শহরের ময়লা নিষ্কাষণের জন্য গিরিজা ক্যানেল নির্মাণে ৭৫ হাজার টাকা এবং ঘাঘেরা খাল সংস্কারের জন্য ৩০ হাজার টাকা দান করেন।

মহারাজা গিরিজানাথ বহু সমিতি সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন, বেঙ্গল ল্যান্ড হোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন, বেঙ্গল সঙ্গীত সমাজ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ, উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মিলনী উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯১৯ সালে নিখিল ভারত কায়স্থ সভার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯১২ সালে তিনি কলকাতায় অনুষ্ঠিত কায়স্থ সভার অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৪ সালে অনুষ্ঠিত এলাহাবাদ সম্মেলনেও তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯১৩ সালে উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মিলনীর ৬ষ্ঠ অধিবেশনে (দিনাজপুর) তিনি অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। উক্ত অধিবেশনে বাংলা আসামের নামকরা সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদরা যোগদান করেন। তিনি ডায়মন্ড জুবিলী থিয়েটার কোম্পানি (১৮৮৫), দিনাজপুর নাট্য সমিতি (১৯১৩), দিনাজপুর স্পোর্টিং ক্লাব, আর্য পাঠাগার, দিনাজপুর সমিতি সহ বহু স্থানীয় সংস্থা সংগঠনের পৃষ্টপোষক ছিলেন।

গিরিজানাথ তিনবার জেলা বোর্ডের সদস্য, দ’ুবার অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট এবং বড়লাটের দিল্লি কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন দিনাজপুর মিউনিসিপ্যালিটির মনোনীত কমিশনার (১৮৮৪) এবং তিনবার মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও তিনি দিনাজপুর জেলা বোর্ডের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।  [মুহম্মদ মনিরুজ্জামান]