রামমালা গ্রন্থাগার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

রামমালা গ্রন্থাগার (১৯১২)  রাজধানী শহর ঢাকা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের একটি মফস্বল শহর কুমিল্লায় অবস্থিত একটি শতাব্দী-প্রাচীন গবেষণা গ্রন্থাগারের নাম- ‘রামমালা পাঠাগার’। এই গ্রন্থাগারে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ক দুস্প্রাপ্য বারো হাজার গ্রন্থ ও সাড়ে আট হাজার  হাতে লেখা পুঁথির সংগ্রহ রয়েছে। সংরক্ষিত হাতে লেখা পুঁথির মধ্যে অধিকাংশই বাংলাসাহিত্যের মধ্যযুগের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক। কিন্তু অদ্যাবধি সেগুলোর মধ্যে খুব কম পুঁথিরই পাঠোদ্ধার করা গেছে। এই গ্রন্থাগারটির আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে- এখানে প্রবাসী থেকে আরম্ভ করে শনিবারের চিঠি, মৌচাক, পূর্বাশা ইত্যাদি বাংলাভাষার দুর্লভ পত্রিকাসমূহ সংরক্ষিত হয়েছে । এছাড়া এখানে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। তুলোট কাগজে লেখা প্রাচীন পুঁথি, দুর্লভ বই, ধর্মগ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার অমূল্য সংগ্রশালা এই গ্রন্থাগার দেশী-বিদেশী পন্ডিত-গবেষকদের নিকট প্রিয় পাঠাগার হিসেবে গৃহীত হয়ে আসছে। রামমালা পাঠাগার শুধু বাংলাদেশের গবেষকদের জন্য নয়, দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি-ধর্ম-দর্শন বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজনে এই গ্রন্থাগার ব্যবহূত হয়ে আসছে। বিশেষ করে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, জাপানের গবেষকগণ এই গ্রন্থাগারটি অধিক ব্যবহার করেছেন।

রামমালা পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শ্রী মহেশ ভট্টাচার্য। তাঁর অপরিসীম শ্রম ও দানের ওপর নির্ভর করেই এই পাঠাগারটি গড়ে ওঠে। মহেশ ভট্টাচার্য ছিলেন কুমিল্লা জেলার বিটঘর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে এই গ্রামটি নবীনগর উপজেলার অন্তর্গত। মহেশ ভট্টাচার্যের গ্রাম বিটঘর সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যাশিক্ষায় অগ্রণী ছিল। কিন্তু শ্রী মহেশ ভট্টাচার্যের পরিবার দারিদ্র্য-পীড়িত ছিলেন বলে তিনি বিদ্যাশিক্ষার পরিবর্তে ভাগ্যান্বেষে শৈশবেই কুমিল্লা চলে আসেন। জানা যায়, মহেশ ভট্টাচার্য ভালো রান্না করতে পারতেন। কুমিল্লায় এসে তিনি প্রথমে কয়েকটি বাড়িতে পাচকের কাজ নেন। কিছুদিন পর এই কাজ করে তার হাতে কিছু টাকা-পয়সা জমলে তিনি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানেও তাকে অর্থের অভাবে কয়েক বছরের জন্য লেখাপড়া বন্ধ করে রাখতে হয়। পরে তিনি বিভিন্ন কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু অর্থকড়ি রোজগার করেন এবং ‘ভট্টাচার্য অ্যান্ড কোং’ নামে একটি হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকান খোলেন। এবার তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। তিনি অনেক অর্থের মালিক হন। মূলত সে অর্থ দিয়েই তিনি মায়ের নামে নিবেদিতা স্কুল ও ঈশ্বর পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ছাত্রদের থাকার জন্য রামমালা ছাত্রাবাস নির্মাণ করেন। একই সঙ্গে বিরাট একটি নাটমন্দির নির্মাণ করেন। এখানেই তৎকালীন কুমিল্লার সভা-সমিতি, সংগীত ও বিচিত্র ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। মহেশ ভট্টাচার্য রামমালাকে মূলত একটি কমপে­ক্স হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন, পরে রামমালা পাঠাগার তত্ত্ববধান ও এই গ্রন্থাগারের বইপত্র কেনার জন্য শ্রী রাসমোহন চক্রবর্তীকে চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা নিয়ে আসেন। এই রাসমোহন চক্রবর্তী আজীবন নিজ সন্তানের মতো রামমালা পাঠাগারকে অাঁকড়ে ধরেছিলেন। তিনি ছিলেন অকৃতদার, পড়াশোনাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত। মূলত তাঁর নীরব- নিভৃতের তপস্যায় এবং মহেশ ভট্টাচার্যের অর্থায়নে রামমালা পাঠাগার একটি আদর্শ গবেষণা গ্রন্থাগারে রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা একাডেমীর মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠান ভিন্ন রামমালা পাঠাগারের মতো প্রাচীন পুঁথির সংগ্রহশালা আর কোথাও নেই।   [সাইমন জাকারিয়া]