রামগড় উপজেলা

রামগড় উপজেলা (খাগড়াছড়ি জেলা) আয়তন: ২৪০.৮৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৯´ থেকে ২৩°০২´ উত্তর আংশ এবং ৯১°৪৪´ থেকে ৯১°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা, দক্ষিণে মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা, পূর্বে মহালছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে ফটিকছড়ি উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫৩৮১৭; পুরুষ ২৮২৬৪, মহিলা ২৫৫৫৩। মুসলিম ৩০৮৩৪, হিন্দু ৮৮৭৫, বৌদ্ধ ১৭৮, খ্রিস্টান ১৩৯২০ এবং অন্যান্য ১০। এ উপজেলায় ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

প্রশাসন রামগড় থানা গঠিত হয় ১৯০৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১২ ১৩০ ২৮৯২৬ ২৪৮৯১ ২২৩ ৫৫.৮ ৩৫.১
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬৪.৭৫ ২৮৯২৬ ৪৪৭ ৫৫.৮১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
পাতাছড়া ৫৭ ২০৪৮০ ৫২৯০ ৪৮১৩ ৩৫.৭৭
রামগড় ৭৬ ১৭২৮০ ১৫৩৩৮ ১৩৯৯৭ ৫৫.৩৪
হাফছড়ি ৩৮ ২১৭৬০ ৭৬৩৬ ৬৭৪৩ ৩৫.১৪

উৎস আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্মসম্পদ মহামুনি বৌদ্ধ বিহার (মান রাজ বংশের নির্মিত, নকাবা), এসডিও বাংলো।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৭৯৫ সালের ২১ জুন রামগড়ে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ নামে গঠিত হয় বর্তমান বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রামগড়েই সর্বপ্রথম গঠিত হয় মুক্তিফৌজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে উপজেলার মহামুনি পাড়ায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৯৮৬ সালের ২২ ডিসেম্বর শান্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে প্রায় ২২ জন নিরীহ লোকের মৃত্যু হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ১ (সার্থক এ জন্ম)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৭৪, বৌদ্ধ বিহার ও কেয়াং ৩২, মন্দির ১১, গির্জা ২, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: রামগড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মহামুনি বৌদ্ধ বিহার, রামগড় দক্ষিণেশ্বরী কালীবাড়ি।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৬.৪%; পুরুষ ৫৩.৯%, মহিলা ৩৮.১%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৫, কিন্ডার গার্টেন ৬, স্যাটেলাইট বিদ্যালয় ৫, মাদ্রাসা ৭, এতিমখানা ১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রামগড় সরকারি ডিগ্রি কলেজ (১৯৮০), রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫২), রামগড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), চৌধুরীপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল (১৯৮৮), শহীদ ক্যাপ্টেন কাদের বিদ্যা নিকেতন (১৯৯৪), রামগড় সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৭), রামগড় সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৬৪), রামগড় গনিয়াতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী বিন্যাস (সাপ্তাহিক)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, কাব ৫, প্রেসকাব ১, সিনেমা হল ২, অডিটোরিয়াম ২, স্টেডিয়াম ১, খেলার মাঠ ৭, আশ্রম ৩।

দর্শনীয় স্থান রামগড় লেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ, সয়েল কনজারভেশন ও গবেষণা কেন্দ্র, রাইফেলস স্মৃতিস্তম্ভ, রামগড় হটিকালচার সেন্টার।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৭.৬১%, অকৃষি শ্রমিক ১১.০৪%, ব্যবসা ১২.৮০%, চাকরি ৭.৬৫%, নির্মাণ ২.৩৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.১১%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৬২% এবং অন্যান্য ১৪.৫২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৭.৭৬%, ভূমিহীন ৬২.২৪%। শহরে ২৯.৫৫% এবং গ্রামে ৪৫.৯৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, মিষ্টি আলু, আদা, হলুদ, শাকসবজি, বাঁশ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, কাউন, সরিষা, চানমনী ধান, বালাম ধান, মতুহরি ধান, গচ্চা ধান, বিন্নী ধান, কালিজিরা ধান ও চিকনজিরা ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, লিচু, কলা, আনারস, লেবু, বাতাবি লেবু, আম, আখ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৯, গবাদিপশু ৫, হাঁস-মুরগি ২০, হ্যাচারি ১ (মৎস্য)।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৪৭ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা স’মিল, রাইসমিল, আইস ফ্যাক্টরি, ওয়াইন ফ্যাক্টরি, প্লাইউড ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৯, মেলা ৬। রামগড় বাজার, সোনাইপুল বাজার, নকাবা বাজার এবং চাইন্দা মেলা ও মহামুনি মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কাঁঠাল, লেবু, মিষ্টি আলু, কলা, ধান, কাঠ, বাঁশ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৫.৯৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ প্রকৃতিক গ্যাস (সেমুতাং গ্যাস ফিল্ড)।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৫২.১৪%, ট্যাপ ১.১৫%, পুকুর ১.৭১% এবং অন্যান্য ৪৫.০০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২১.০২% (গ্রামে ৬.৫৮% এবং শহরে ৩৫.৪৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬১.২৩% (গ্রামে ৬৭.৯৪% এবং শহরে ৫৪.৫১%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৭.৭৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৩, ইসলামিক মিশন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, কিনিক ১, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৩, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ২০০৩ সালের ২৬ জুন অবিরাম বর্ষনের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলে প্রায় ২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়াও ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও গাছপালার ব্যাপক তি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আই ডি এফ, প্রশিকা, আশা। [মো. নিজাম উদ্দিন লাভলু]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রামগড় উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীা প্রতিবেদন ২০০৭।