রাজমালা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

রাজমালা  ত্রিপুরা রাজাদের বংশানুক্রমিক ইতিহাস গ্রন্থ। রাজা প্রথম ধর্মমাণিক্যের সময়ে ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে রাজমালা প্রথম বাংলায় রচিত হয়। ধর্মমাণিক্য ছিলেন ত্রিপুরার ১৪৯তম রাজা। ঐতিহ্য অনুযায়ী ত্রিপুরার প্রধান পুরোহিত বা চানতাই বংশপরম্পরায় ত্রিপুরা রাজাদের তালিকা তৈরি এবং তাদের কাহিনী রাজসভায় আবৃত্তি করে শোনাতেন।

সূত্রমতে রাজমালা প্রথম ত্রিপুরা ভাষায় রচিত হয়েছিলো। চানতাই দুর্লবেন্দ্র ছিলেন রাজমালার প্রথম প্রণেতা। পরবর্তী সময়ে তা সংস্কৃততে অনুবাদ করা হয়। সংস্কৃততে রূপান্তরিত রাজমালার নাম দেয়া হয় ‘রাজমালা থাঙ্কারাম’ (Rajmala Thankaram)। রাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে চানতাই দুর্বলেন্দ্র এবং তাঁর দুই প্রধান ব্রাহ্মণ রাজপুরোহিত বা চানতাই শুক্রেশ্বর এবং বানেশ্বরকে সংস্কৃত থেকে রাজমালার বাংলায় অনুবাদ করার দায়িত্ব অর্পণ করেন। তাঁদের অনুবাদকৃত রাজমালা মধ্যযুগের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রচয়িতা চারখন্ডে রাজমালা রচনা সমাপ্ত করেন। প্রতিটি খন্ডকে বলা হয় ‘লহর’। প্রথম থেকে চতুর্থ লহর পর্যন্ত চারখন্ডের গ্রন্থে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজবংশের বংশানুক্রমিক ইতিহাস বিধৃত হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক বা পৌরাণিক যুগের রাজা দুর্জয় থেকে শুরু করে শেষ অভিষিক্ত রাজা বীরবিক্রম কিশোরমাণিক্য পর্যন্ত মোট ১৮৬ জন রাজার নামের তালিকা সন্নিবেশিত হয়েছে রাজমালায়। তালিকায় উল্লিখিত প্রথম থেকে ১৩৫তম রাজার নাম এবং তাদের রাজত্বকালের সত্যতা সম্পর্কে কোন প্রত্নতাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিক লিখিত তথ্য পাওয়া যায় না। কেবল পৌরাণিক কাহিনী থেকে এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। মহাভারতে ত্রিপুরা রাজ্যের নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজমালা অনুসারে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাচীন থেকে শুরু করে প্রায় পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস বা রাজবংশীয় তথ্য সন্নিবেশিত আছে।

রাজমালার প্রথম পর্বে মহাভারতীয় যুগের ত্রিপুরা রাজাদের রাজত্বকালের বর্ণনা করা হয়, যার মধ্যে পৌরাণিক কাহিনীই বেশি বর্ণিত। এ পর্ব অনুসারে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাচীন নাম ছিলো কিরাত, যার অর্থ শিকারী। প্রথম রাজা ছিলেন চান্দ্র বংশীয় দুর্জয়। তাঁর পিতার নাম জয়তী। এ বংশের চল্লিশতম শাসক ছিলেন ত্রিপুর। মহাভারতের সূত্রে ত্রিপুর ও স্ত্রী হীরাবতীর পুত্র ত্রিলোচন তাঁর দেবতা শিবের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কিরাত রাজ্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনি তাঁর পিতার নামে ত্রিপুরা রাজ্যের পত্তন করেন। ত্রিপুরা রাজাদের নামের পূর্বে ফা (Fa) শব্দটি ব্যবহার করা হতো যার অর্থ পিতা (Father)। রাজমালায় বর্ণিত তথ্যসমূহ মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।  [নাসরীন আক্তার]