রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ  একটি সাহিত্য সংগঠন, ১৩১২ বঙ্গাব্দের ১২ বৈশাখ (এপ্রিল, ১৯০৫) প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের একমাত্র শাখা সংগঠন যা কলকাতার বাইরে উৎপত্তি ও বিকাশ লাভ করেছিল। এক সময় এটি রংপুর জেলার ঐতিহাসিক গবেষকদের কেন্দ্র এবং তৎকালীন লেখকবৃন্দের সংঘ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ঐতিহাসিক সামগ্রী সংগ্রহ, যেমন প্রত্নলিপি, মুদ্রা,  পান্ডুলিপি, প্রাচীন মূর্তি ও অন্যান্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, সাময়িকী প্রকাশ, প্রাচীন গ্রন্থের পুনর্মুদ্রণ এবং লেখক ও গবেষকদের জন্য সাময়িক আলোচনাসভার ব্যবস্থা করা ছিল এর কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত। বাংলা ভাষার গবেষণায়ও এটি উৎসাহ যুগিয়েছে। স্থানীয় জমিদারগণ এ পরিষদ গঠনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এবং তাঁরা এর বিকাশের জন্য অর্থ, জনবল ও সাহায্য সামগ্রীও দান করেন। কুন্ডির জমিদার মৃত্যুঞ্জয় রায়চৌধুরী ও সুরেন্দ্রচন্দ্র রায়চৌধুরী এবং কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্যবর্গ এই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন। বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের জমিদারগণও এতে বিশেষ অবদান রাখেন এবং এর সদস্যপদ গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মুর্শিদাবাদ জেলার কাসিমবাজারের মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, কুচবিহারের মহারাজা রাজেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুর ও মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুর, নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায় এবং দিঘাপতিয়ার (রাজশাহী) কুমার শরৎকুমার রায়।

আটাশজন সদস্য নিয়ে রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদের যাত্রা শুরু হয়। ১৩ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি দ্বারা এটি পরিচালিত হতো এবং এর আজীবন সভাপতি ও সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে কাকিনার রাজা মহিমারঞ্জন রায়চৌধুরী ও কুন্ডির রাজা সুরেন্দ্রচন্দ্র রায়চৌধুরী। ১৯৪৫ সালে সুরেন্দ্রচন্দ্র রায়চৌধুরীর মুত্যু হলে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সৌমেন্দ্রকুমার রায়চৌধুরী পরিষদের সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁর দায়িত্বকালে ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে পরিষদেরও বিলুপ্তি ঘটে।

পরিষদের দুটি শাখা ছিল: উত্তর বঙ্গ সাহিত্য সম্মিলনী ও রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা। সংগঠনের মুখপত্র এই পত্রিকাটি সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯০৬ থেকে ত্রৈমাসিক সাহিত্য সাময়িকী হিসেবে প্রকাশিত হতে থাকে। পত্রিকাটি দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। উত্তর বঙ্গের লোককাহিনী, প্রত্নতত্ত্ব, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং ওই অঞ্চলের অপ্রকাশিত পুথির বিবরণ থাকত প্রথম অংশে; আর দ্বিতীয় অংশে থাকত পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদন ও মাসিক কার্যবিবরণী এবং দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন পান্ডুলিপি ও সেগুলির লেখকদের বিবরণ। ১৯০৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সাতজনের সম্পাদনায় এর বিশটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ১৯৩৯ সালের সংখ্যা প্রকাশের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। পরিষদের দুষ্প্রাপ্য দলিলপত্র ও অন্যান্য সংগ্রহসহ পত্রিকার সকল সংখ্যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে এখানে তিববত, আসাম ও বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন পুরাকীর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পুথিতে সমৃদ্ধ একটি জাদুঘর আছে।  [মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান]